খেলা শেষে বাংলাদেশ শিবিরে অতৃপ্তি—ম্যাচটা জেতা উচিত ছিল। পাকিস্তানের কাছে ৩ উইকেটে হার মেনে নেওয়ার মতো ফলই, কিন্তু সম্ভাবনা জাগিয়েও জিততে না পারার হতাশা সবাইকে ছুঁয়ে গেছে।
সিডনির ব্ল্যাকটাউন অলিম্পিক পার্ক ওভালে কাল পাকিস্তানের বিপক্ষে দিবারাত্রির প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে ২০১৫ বিশ্বকাপ অভিযাত্রায় আরও ভালোভাবে ঢুকে পড়ল বাংলাদেশ দল। সন্দেহ নেই, এই ম্যাচে পাকিস্তানকে হারাতে পারলে আত্মবিশ্বাসের পারদ উঠে যেত অনেক উঁচুতে। হেরে যাওয়ায় সেটা হয়তো হচ্ছে না, তবে ম্যাচটি থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তিও কম নয়।
হাঁটুর চোট কাটিয়ে কালই প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা তামিম ইকবালের কথাই ধরুন। ইয়াসির শাহর বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১০৯ বলে করেছেন ৮১ রান, যাতে চার পাঁচটি। দলের মাত্র ১৬ রানের মধ্যে ওপেনার এনামুল হক (০) ও মুমিনুল হকের (৭) বিদায়ের পর তৃতীয় উইকেটে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ১৬৮ রানের জুটি। মাহমুদউল্লাহর কথাই বা বাদ যাবে কেন! চার নম্বরে নেমে রানআউট হওয়ার আগ পর্যন্ত তামিমের মতোই ১০৯ বল খেলে করেছেন ৮৩, বাউন্ডারিও তামিমের সমান। ৮০-ঊর্ধ্ব ইনিংসে মাত্র পাঁচটি করে বাউন্ডারি দেখে অবাক হতে পারেন। তবে সিডনি থেকে দলসূত্রে জানা গেল, ব্ল্যাকটাউন অলিম্পিক পার্ক ওভালের আউটফিল্ড খুবই ভারী। ওখানে চার বের করা খুবই কঠিন ছিল। তবে প্রচুর এক-দুই নিয়ে বাউন্ডারির অভাবটা পুষিয়ে দিয়েছেন তামিম-মাহমুদউল্লাহ। খেলা দেখতে আসা হাজার দুয়েক প্রবাসী বাংলাদেশি তাই যথেষ্টই বিনোদিত হয়েছেন এই দুজনের ব্যাটিংয়ে। তবে ম্যাচ শেষে হতাশা নিয়ে ফিরেছেন তাঁরাও।
৪০তম ওভারের প্রথম বলে মাহমুদউল্লাহর রানআউট দিয়েই ব্যাটিংয়ের শেষ বিপর্যয়টার শুরু। পরের ওভারে আউট তামিমও। আর মুশফিকুর রহিম তো উইকেটে এসে প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে যান ইয়াসিরের বলে! ২ উইকেটে ১৮৪ থেকে মুহূর্তে দলের রান ৫ উইকেটে ১৯০। মিডল অর্ডারের ওই ধসটা আর কাটিয়ে ওঠা যায়নি। শেষ ১০ ওভারে যেখানে রান বাড়িয়ে নেওয়ার কাজটাই করার কথা, সেখানে কিনা ওই সময়ে রান ওঠে মাত্র ৫৬! শেষ ৫ উইকেট পড়েছে মাত্র ১৫ রানের মধ্যে।
বাংলাদেশ দলের স্কোর বোর্ডে আরও ২০-২৫ রান যোগ হলে হয়তো ম্যাচের ফল অন্য রকমও হতে পারত। তবে মাশরাফি বিন মুর্তজার দলের বিশ্বাস ছিল, ২৪৬ রান নিয়েও জয়ের জন্য লড়াই করা সম্ভব। ৮ রানের মধ্যে পাকিস্তানের দুই ওপেনার সরফরাজ আহমেদ ও আহমেদ শেহজাদকে ফিরিয়ে সম্ভাবনাকে আরেকটু ঔজ্জ্বল্য দেন রুবেল হোসেন ও মাশরাফি। রুবেল ৮ ওভারে ৩২ রান দিয়ে আর কোনো উইকেট না পেলেও মাশরাফির বলে পরে কট বিহাইন্ড হয়েছেন উমর আকমল। আরেক পেসার তাসকিন আহমেদও পেয়েছেন ২ উইকেট। দুটিই পাকিস্তানের দুই বড় ব্যাটসম্যানের। শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে সাকিবের ক্যাচ হয়েছেন ইউনিস খান। আর অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হককে তো তাসকিন বোল্ডই করেছেন।
তামিম-মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিংয়ের বাইরে কালকের ম্যাচের প্রাপ্তি বলতে পারেন এই তিন পেসারের বোলিংও। উইকেটে বাউন্স, মুভমেন্ট ছিল এবং তিনজনই উইকেট থেকে সেগুলো আদায় করে নিতে পেরেছেন। মাশরাফি-তাসকিনের চেয়ে উইকেট একটা কম পেলেও রুবেলের বোলিংটাই নাকি বেশি মন কেড়েছে সবার। স্পিনারদের খুব বেশি সফলতা না পাওয়ার একটা কারণ হতে পারে ওই সময়ে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের ঝুঁকি না নেওয়ার প্রবণতা। তবে ব্যতিক্রম সোহেব মাকসুদ। দুই ছক্কা আর ৯ বাউন্ডারিতে ৯০ বলে অপরাজিত ৯৩ রান করে পাকিস্তানকে জয়ের তীরে নিয়ে গেছেন তিনিই।
বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ দল শেষ প্রস্তুতি ম্যাচটি খেলবে ১২ ফেব্রুয়ারি। একই মাঠে সে ম্যাচের প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড।