ঢাকা শহর থেকে যে কয়েকটি জেলা অতি নিকটে তার মধ্যে গাজীপুর জেলা অন্যতম। এই গাজীপুর জেলাতেই ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক অবস্থিত।
অবস্থান
ঢাকা থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে ও গাজীপুর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে জয়দেবপুরে ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্কটি অবস্থিত।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী যেকোনো বাসে চড়ে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ফটকের সামনেই নামা যায়। এ ছাড়া ঢাকার গুলিস্তান থেকে প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি বাস চলে এ পথে। ভাড়া ৪০-৫০ টাকা। নিজস্ব বাহনে গেলে জয়দেবপুর চৌরাস্তা ছাড়িয়ে ময়মনসিংহের দিকে কিছু দূর চলতে হাতের ডানে পড়বে এর প্রধান প্রবেশপথ।
যা দেখতে পাবেন
গাছে গাছে ঢাকা এ উদ্যানের প্রতিটি জায়গাই নজরকাড়া। সারি সারি বৃক্ষের মাঝে পায়ে চলা পথ। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে বিশ্রামের জন্য আছে বেঞ্চ কিংবা ছাউনি। বনের মাঝে কোথাও কোথাও চোখে পড়বে ধানক্ষেত। কোথাও আবার পুকুর কিংবা ছোট আকারের লেক।
এ ছাড়া ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ভেতরে আছে বেশ কয়েকটি বনভোজন কেন্দ্র। এগুলোর নামও বেশ মজার। আনন্দ, কাঞ্চন, সোনালু, অবকাশ, অবসর, বিনোদন আরো কত বাহারি নামের বনভোজন কেন্দ্র । এখানকার কটেজগুলোও বাহারি নামের। বকুল, মালঞ্চ, মাধবি, চামেলী, বেলী, জুঁই ইত্যাদি। নামের মতো এগুলোর পরিবেশও ভিন্ন আমেজের। পিকনিক স্পট কিংবা রেস্ট হাউস ব্যবহার করতে হলে বন বিভাগের মহাখালী কার্যালয় থেকে আগাম বুকিং দিয়ে আসতে হয়।
প্রধান আকর্ষণ
একসময় ভাওয়াল উদ্যানে পাওয়া যেত ব্লাক প্যান্থার, চিতা বাঘ, ময়ূর, হাতি। এসব এখন ইতিহাস। ক্রমাগত বন উজাড়ের ফলে দিনে দিনে এর পরিধি কমে আসায় এ বন থেকে বিলুপ্ত হয়েছে নানান বন্যপ্রাণী। তবে বাংলাদেশ সরকার এ বনকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে। পৃথিবীর অন্যান্য জাতীয় উদ্যানের আদলে ৫০২২ হেক্টর জমিতে ১৯৭৩ সালে এ উদ্যান সরকারিভাবে গড়ে তোলা হয়। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের মূল উদ্ভিদ হলো শাল। প্রায় ২২০ প্রজাতির গাছপালা আছে এ বনে। এর মধ্যে ৪৩ প্রজাতির বিভিন্ন রকম গাছ, ১৯ প্রজাতির গুল্ম, ৩ প্রজাতির পাম, ২৭ প্রজাতির ঘাস, ২৪ প্রজাতির লতা, ১০৪ প্রজাতির ঔষধি গাছ। জীব বৈচিত্র্যেরও কমতি নেই এ বনে। প্রায় ১৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫ প্রজাতির পাখি ও ৫ প্রজাতির উভচর প্রাণীও রয়েছে এ বনে।
প্রবেশ মূল্য
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা। প্রাইভেট কার কিংবা মাইক্রোবাস নিয়ে প্রবেশ করতে লাগবে ৩০ টাকা আর মিনি বাসের জন্য প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা। দুই-তিনজন এখানে বেড়াতে গেলে উদ্যানের বেশি ভেতরে না যাওয়াই ভালো। একাকী পেলে দুষ্কৃতিকারীরা আপনার যেকোনো ক্ষতির কারণ হতে পারে।
আরও দেখতে পারেন
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান বেড়িয়ে হাতে সময় থাকলে দেখে আসতে পারেন ভাওয়াল রাজবাড়ি। গাজীপুর সদরে অবস্থিত প্রাচীন এ রাজবাড়িটি। জমিদার লোক নারায়ণ রায় বাড়িটির নির্মাণ শুরু করলেও শেষ করেন রাজা কালী নারায়ণ রায়। প্রায় পনের একর জায়গাজুড়ে মূল ভবনটি বিস্তৃত। ভবনটির দক্ষিণ পাশে মূল প্রবেশপথ। মূল প্রবেশপথের পরেই রয়েছে প্রশস্ত একটি বারান্দা এবং এর পরে একটি হল ঘর। ভবনের ওপরের তলায় ওঠার জন্য ছিল শাল কাঠের তৈরি প্রশস্ত সিঁড়ি। ভবনের উত্তর প্রান্তে খোলা জায়গায় রয়েছে নাটমণ্ডপ। রাজবাড়ির সব অনুষ্ঠান হতো এ মঞ্চে। রাজবাড়ির মধ্যে পশ্চিমাংশের দ্বিতল ভবনের নাম রাজবিলাস। এ ভবনের নিচে রাজার বিশ্রামাগারের নাম ছিল হাওয়ামহল। দক্ষিণ দিকে খোলা খিলান যুক্ত উন্মুক্ত কক্ষের নাম পদ্মনাভি। ভবনের দোতলার মধ্যবর্তী একটি কক্ষ ছিল রাণীমহল নামে পরিচিতি। সুরম্য এ ভবনটিতে ছোট-বড় মিলে প্রায় ৩৬০টি কক্ষ আছে। বর্তমানে এটি জেলাপরিষদ কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ভাওয়াল রাজবাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তরে মৃতপ্রায় চিলাই নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী। এটি ছিল ভাওয়াল রাজ পরিবারের সদস্যদের শবদাহের স্থান। প্রাচীন একটি মন্দির ছাড়াও এখানে একটি সমাধিসৌধ রয়েছে।
কোথায় থাকবেন
গাজীপুর জেলার যে কোন আবাসিক হোটেলে রাত্র যাপন করা যাবে। একটু খোঁজ-খবর নিলেই পাওয়া যাবে আবাসিক হোটেলের ঠিকানা।