Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

আলতাদীঘি



বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর’ কবি জীবনানন্দ দাশের এ উক্তি নিছক কবি-বন্দনা নয়। এদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। বিদেশীরা বারবার এদেশের ধন-সম্পদ লুট করে নিলেও নিয়ে যেতে পারেনি এর অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। তাই তো এদেশের মানুষের কণ্ঠে শোনা যায় ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা, তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা।’ আর এ দেশ কেন এত সেরা তা উপলব্ধি করতে হলে নিজের চোখে সে সৌন্দর্যকে দেখতে হবে। সে সৌন্দর্য সম্পর্কে জানতে হবে।

নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার উত্তর দিকে আলতাদীঘির অবস্থান। ধামইরহাট উপজেলা পার হয়ে পূর্ব দিকে একটি ব্রিজ সংলগ্ন রাস্তা পাকা, বাকিটা কাঁচা রাস্তা। রাস্তা দিয়ে হাঁটতেই দু’পাশে বাঁশঝাড় আর গাছগাছালি আপনাকে মুগ্ধ করবে। কিছুদূর গেলে দেখা যাবে রাস্তার দুই পাশে শালবন। এখানে দেখা যাবে বরেন্দ্রভূমির লালমাটির সৌন্দর্য। পাহাড়ি এলাকার মতো উঁচু-নিচু রাস্তা। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এ শালবন বর্তমানে সরকারিভাবে সংরক্ষিত। বনের মধ্যে হাঁটলে দেখা যাবে, সূর্যের আলো সরাসরি মাটিতে পড়তে না পেরে গাছের পাতা ভেদ করে বনের ভেতর চাঁদের আলোর মতো রূপ নিয়েছে। যা সত্যিই খুব আনন্দঘন। বনের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে কখনও যদি উইপোকার তৈরি বড় ঢিবি দেখা যায় তবেই বোঝা যাবে বাংলার রূপ সত্যিই কত সুন্দর। বাংলার রূপ কি বিচিত্র। বছরের পর বছর মাটি দিয়ে উইপোকা তৈরি করেছে এসব ঢিবি। প্রকৃতির তৈরি এ বনের মধ্যে এরকম নিখুঁত শিল্প দেখে যে কেউ মুগ্ধ না হয়ে পারবে না। আলতাদীঘির নামেই গ্রামের নাম দেয়া হয়েছে আলতাদীঘি। গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি মাটির তৈরি। আবার অনেকে মাটি দিয়েই দোতলা বাড়ি তৈরি করেছেন। গ্রাম পার হয়ে আলতাদীঘি। এ যেন এক আশ্চর্য দীঘি। এত প্রাচীন আর এমন বিশাল দীঘি বাংলাদেশে আর কোথাও আছে কি-না সন্দেহ রয়েছে। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা এ দীঘির দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার, চওড়া প্রায় ৪০০ মিটারের মতো। গ্রামের লোকমুখে প্রচলিত আছে বৌদ্ধ যুগের কীর্তি এটি। দীঘির পাড় ঘেঁষে ভারত সীমান্ত। উত্তর পাড়ে দাঁড়িয়ে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া, বিএসএফের সীমান্ত টইল, পাশ্ববর্তী দেশ ভারতকে দেখা খুবই সহজ। আলতাদীঘির পাড়ে দাঁড়ালে মনে হবে অনেকটাই সুন্দরবনের মতো, শীতের সময় অতিথি পাখির আগমন ঘটে। দিল্লীতে দাঁড়টানা নৌকা আছে। ইচ্ছা হলে কিছুক্ষণের জন্য নৌভ্রমণও উপভোগ করা যাবে। আলতাদীঘির নামকরণেও রয়েছে ঐতিহাসিক মজার ঘটনা। হাজার বছর আগে এ এলাকা ছিল বটু রাজার। জগদ্দলে ছিল সেই রাজার বাড়ি। রানী একদিন আবদার করলেন, তাকে বড় এক দীঘি খুঁড়ে দিতে হবে। রাজা বললেন, ঠিক আছে। তুমি হাঁটতে শুরু কর। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার পা ফেটে রক্ত বের না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত হাঁটতে হবে। এখান থেকে হাঁটা শুরু করে যেখানে গিয়ে পা থেকে রক্ত বের হবে সেই পর্যন্ত দীঘি কাটা হবে। রানী হাঁটতে থাকলেন। হাঁটা আর শেষ হয় না। রাজা পড়ে গেলেন চিন্তায়। শেষ পর্যন্ত পাশের দেশে গিয়ে দীঘি কাটতে না হয়। তাই কৌশলে তার সৈন্য দিয়ে রানীর পায়ে আলতা লাগিয়ে বললেন, রানীর পা ফেটে রক্ত বেরিয়েছে। দীঘি সে পর্যন্তই খোঁড়া হল। প্রায় হাজার বছরের স্মৃতি নিয়ে আজও সৌন্দর্য বিলিয়ে যাচ্ছে এ ঐতিহ্যবাহী আলতাদীঘি। আলতাদীঘি প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক দিক থেকেও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এ বিশাল জলাশয়ে ৫৫ প্রজাতির দেশীয় মাছ ও প্রায় ১৪ হাজার প্রজাতির অন্যান্য জলজ প্রাণী রয়েছে। আলতাদীঘির অদূরেই রয়েছে পাল শাসনামলে নির্মিত জগদ্দল বৌদ্ধ বিহার। সেখানে বিষ্ণু, শিব ও কারুকার্যখচিত কষ্টিপাথরের নারীর মুখমণ্ডলের প্রতিকৃতি দেখতে পাওয়া যায়। দীঘির পাশেই রয়েছে কয়েকটি আদিবাসী গোষ্ঠীর বসবাস। দীঘির উত্তর পাড় সংলগ্ন ভারত-বাংলাদেশের সীমানা। সেখানে দাঁড়িয়ে ভারতের মানুষের কর্মব্যস্ততা চোখে পড়ে।

যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে আপনি সহজেই নওগাঁতে আসতে পারেন। বাসে অথবা ট্রেনে আপনি আসবেন। সেক্ষেত্রে আপনি গাবতলী অথবা মহাখালী থেকে যে কোন বাসে আসবেন। সাধারণ বাসে আসতে আপনার খরচ হবে ২৫০-৩০০ আর এসি বাসে খরচ হবে ৪৫০-৫০০ টাকা। ট্রেনে আপনি কমলাপুর রেল স্টেশনে আসবেন দ্রুতযান, লালমনি এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস আর ক্যান্টনমেন্ট রেল স্টেশন থেকে আপনি নীল সাগর এক্সপ্রেসে আসতে পারেন। তবে ট্রেনে আসলে সান্তাহার হয়ে আপনাকে নওগাঁ যেতে হবে। ট্রেনের ভাড়া সাধারণ সিট ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে আর এসি ৩০০-৩৫০ টাকার মধ্যে। আপনাকে নওগাঁ এসে বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে ৪০ কিমি. ভেতরে ধামইরহাটে যাওয়া বাসে উঠে ধামইরহাট যেতে হবে। ধামইরহাটে নেমে সেখান থেকে রিকশা অথবা ভ্যানে আপনি আলতাদীঘি যেতে পারেন। এতে আপনার ভাড়া লাগবে ১০-১৫ টাকা। ধামইরহাট গিয়ে নসিমন ভাড়া করেও ঘুরতে পারেন।

কোথায় থাকবেন:
নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলায় ভালো আবাসিক হোটেল না থাকায় আপনাকে আবার নওগাঁতে ফিরে আসতে হবে। আর নওগাঁতে ফিরলে আপনি অনেক ভালো ভালো আবাসিক হোটেল পাবেন