Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

ঐতিহ্যবাহী মথুরাপুরের দেউল



ফরিদপুর জেলার প্রাচীন কীর্তি মথুরাপুরের দেউল । রহস্যঘেরা এ স্থাপনা করে কে কখন নির্মাণকরেছিল তার সঠিক কোনো তথ্যপ্রমান পাওয়া যায়নি আজও । এর নিমার্ণ নিয়ে প্রচলিত আছে নানা কথা । মধুখালি উপজেলার গাজনা ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামে অবস্থিত এ প্রাচীন স্থাপত্য কীর্তিটি । পাথরাকৃতির পোড়ামাটির তৈরি দেউলটি প্রায় ৭০ ফুট উঁচু । এর শিলাখন্ডগুলো সুগ্রথিত । কোথা থেকে এর গাঁথুনি শুরু হয়েছে তা বোঝা দুরুহ । একেবারে নিচ থেকে মোটা হয়ে ক্রমান্বয় উপরের দিকে অল্প সরু হয়ে চুড়ার দিকে মিশে গেছে । সম্পুর্ণভাবে ঢালাই করা এর ছাদ । নির্মাণকালে এ দেউলের সংখ্যা ছিল ৪টি । প্রত্নতত্ব ও জাতীয় জাদুঘর বিভাগের অধীনে নিয়ে আসার পর সংশ্লিষ্ট বিভাগ এর ২টি দরজা বন্ধ করে দেয় । বর্তমানে এর ভেতরে গিয়ে উপরের দিকে তাকালে অন্ধকারে কিছুই দেখা যায়না । দেউলের গা জুড়েই আঁকা রয়েছে অসংখ্য ছাপচিত্র ও মাটির কলস । অঙ্কিত শিলাখন্ডে চোখ পড়লে দেখা যায় হরেক মুর্তি । কোনোটি আছে নারীর , কোনোটি উৎসবের আনন্দযজ্ঞের । তীর ধনুক হাতে কোনো হনুমান দাঁড়িয়ে আছে । আবার দেখা যায়, কোনো প্রানীকেবহন করে নিয়ে যাচ্ছে হনুমান বা কিম্ভুত কোন প্রানী যার মুখ হিংস্রের মতো । কোথাও রয়েছে নৃত্যরত নগ্ন নর-নারী , গদা হাতে হনুমান , যুদ্ধের দৃশ্য, পেচা জাতীয় কোন প্রাণী , মুন্ডুহীন মানুষের আকৃতি বিশিষ্ট প্রাণী দেহ । আরও দেখা যায় ধাবমান ঘোড়া , মন্দিরে প্রার্থনারত হনুমান ইত্যাদি । দেউল গাত্রের নির্মান সৌকর্যেও ফলক এবং যেসব মূর্তি রয়েছে সেগুলো দেখে বিমোহিত হন দর্শক ভ্রমন বিলাসীরা । দেউলটি কবে এবং কেন তৈরি করেছিলে সে ব্যাপারে কোন প্রামান্য তথ্য মেলেনি । এব্যাপারে নানা মত প্রচলিত আছে । সেগুলোর মধ্যে ২-১টি জন শ্র“তি এ রকম এ এলাকায় বহুকাল আগে রাজা মথুরা নামে এক শাসক ছিলেন । তার নামানুশারেই এগ্রামের নাম মথুরাপুর হয়েছে । এই শাসকের অস্তিম ইচ্ছা ছিল মৃত্যুও পর সমাধিতে যেন একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরিকরা হয় । তবে তার অস্তিম ইচ্ছা আদৌ পুরন হবে কি না সে ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ায় জীবিত অবস্থায়ই তিনি একটি মঠতৈরি করেন । সেটিই মথুরাপুরের মঠ বা দেউল দেউল নামে পরিচিত । মৃত্যুর পর তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী এমঠের পাশেই তাকে সমাহিত করা হয় । অন্য আরেকটি জন শ্রুতি মেলে এ দেউল সর্ম্পকে ।



আ.কা.মোঃ যাকারিয়া রচিত বাংলাদেশের প্রাচীন কীর্তিগ্রস্থর দ্বিতীয় খন্ডে মথুরাপুরের দেউল সম্পর্কে উল্লেখ আছে এটি কবে ও কেন তৈরি হয়েছিল বা এর স্থপতি কে ছিলেন। তবে এ বিয়ষ সঠিক কোনোতথ্য পাওয়া যায়নি । লোকমুখে প্রচলিত কাহিনী এ রকম যশোরের রাজা প্রতাপাদ্যিকে যুদ্ধে পরাজিত করার পর মোগল সম্রাট আকবরের সেনাপতি রাজা মান সিংহ এটি নির্মান করে ছিলেন । বিজয় স্তম্ভ হিসেবেমথুরার দেউলটি নিয়ে নানাজনের নানা মত থাকলেও দেউলটি যে কোন মুসলমান শাসকের নির্মিত নয় এব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় । দেউলের গাজুড়ে পোড়া মাটির ফলক শিলাখন্ড ,হনুমান ও নানা মুর্তি দেখে । তবে এর নির্মান শৈলি ও সংগে মোগল স্থাপত্যকলার ন্যায় । দেউলের নির্মান প্রকরণ দেখে পন্ডিতদেও অনুমান য়ে, এটি ১৭ শতকের নির্মিত হয়েছিল এবংখুব সম্ভব কোন হিন্দু সামন্তরাজ এটি তৈরি করেছিলেন । মথুরাপুরের দেউল সম্পর্কে স্থানীয় জনসাধারনের কল্প কাহিনী বংশ পরম্পরায় প্রচলিত রয়েছে । এ কল্পকাহিনীটি এরকম ফেরেশতা বাজিন-পরিরা অথবা হিন্দুমতে দেব- দেবীরা মাত্র এক রাতে এ দেউলটি তৈরি করেন । স্থানীয় জন সাধারনের ধারনা তৈরির সময় এটি ৭তলা বিশিষ্ট ছিল । কালক্রমে ৬তলা মাটির নিচে দেবে গেছে । ঐতিহাসিক স্থাপত্য কীর্তি মথুরাপুরের দেউলটি প্রত্নতত্ব ও জাতীয়জাদুঘর বিভাগের অধীনে নিয়ে আসা হয়েছে । তবে যথাযথ ভাবে সংরক্ষনের ব্যাপক উদ্যোগ না নেয়া হলে এটি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে এ রকম আশংকা সৃস্টি হয়েছে । এ দেউলকে ঘিরে গড়ে তোলা যেতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র অন্তত এর ঐতিহাসিক মূল্য তাই বলে দাবী করে ।