Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

সারনাথ : বৌদ্ধধর্মের উন্মেষ যেখানে



বিশ্বের প্রচীনতম জীবন্ত শহর ভারতের উত্তর প্রদেশের বারাণসী। গঙ্গার পশ্চিম তীরে বরুণা ও অসি নদীর মিলনস্থলে জ্বলজ্বলে এক নক্ষত্রের মতো শহরটি। হিন্দুধর্মের পবিত্রতার প্রতীক আজকের বারাণসী তথা সেকালের কাশী। আর এই কাশী থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সারনাথ, আরেকটি ধর্মের তীর্থস্থান। বৌদ্ধধর্ম। বৌদ্ধধর্মের উন্মেষ এই সারনাথেই। সারনাথে সিদ্ধার্থ প্রথম মহাধর্মচক্র প্রবর্তন করেন। বৌদ্ধধর্মের প্রচার করেন তাঁর পাঁচজন শিষ্যের মাঝে। সুজাতার হাতে পায়েস গ্রহণের ফলে বুদ্ধের প্রতি রুষ্ট হয়ে তাঁর পাঁচ সঙ্গী বুদ্ধকে ছেড়ে ধর্মচর্চার জন্য এখানে আসেন। বুদ্ধও আসেন তাঁদের খোঁজে। ৬০ জন শিষ্য নিয়ে রূপ পায় সংঘ। দিকে দিকে তাঁরাই ছড়িয়ে পড়েন বৌদ্ধধর্মের বার্তা নিয়ে। আরো পরে বুদ্ধের ধ্যানে বসার স্মারকরূপে আশোকের রাজত্বকালে গড়ে ওঠে মূল বৌদ্ধবিহার। বার বার মুসলিম হানায় বিনষ্ট হয়ে হারিয়ে যায় সারনাথ। ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দে বারাণসীর রাজা চৈত সিংয়ের দেওয়ান জগত্‍ সিং হারিয়ে যাওয়া সারনাথ আবিষ্কার করেন। আর ১৮৩৪ থেকে ১৯০৫-এ স্যার আলেকজান্ডার কানিংহামের নেতৃত্বে ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিকদের খননে নবরূপে উদ্ভাসিত হয় সারনাথ।

চীনা পরিব্রাজক ফা হিয়েন এবং হিউয়েন সাঙয়ের বিবরণী থেকে জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত সারনাথ ছিল শিক্ষাদীক্ষার পীঠস্থান। ৬৫ মিটার উঁচু বিহার, ৩০টি মঠ এবং ১৫০০ হীনযান ভিক্ষুর বাস ছিল সারনাথে। বৌদ্ধ পরবর্তী যুগে এই অঞ্চলের নাম হয় সারনাথ। 'সারঙ্গ' অর্থাত্‍ মৃগ আর 'নাথ' অর্থাত্‍ প্রভু। কালে কালে লোকমুখে সারনাথ। জাতক কাহিনীতেও আছে বুদ্ধ এক সময় হরিণরূপে এই স্থানে জন্মগ্রহণ করে এবং এলাকার দলনেতা হিসেবে বিবেচিত হন। মতান্তর সারঙ্গনাথ শিবের বাসস্থল থেকে সারঙ্গনাথ নাম।

সারনাথে প্রবেশপথের কাছেই রয়েছে ছোট্ট পাহাড়ি টিলার মতো চৌখন্ডি স্তূপ - অষ্টকোণবিশিষ্ট স্তম্ভ। বুদ্ধকে এখানেই তাঁর অনুগামী শিষ্যরা বরণ করে। বাদশাহ আকবর পিতা হুমায়ুনের সারনাথ ভ্রমণকে বরণীয় করে তুলতে ধ্বংসপ্রাপ্ত স্তূপটির সংস্কার করেন। স্তূপটির নিচের অংশ পাথরের ও উপরের বাকি অংশ জমানো ইটের টুকরো দিয়ে তৈরি। স্তূপটি গড়ে ওঠে আষাঢ় পূর্ণিমায়, বুদ্ধ তাঁর পাঁচ শিষ্যকে যেখানে প্রথম পাঠ দেন সেই পূণ্যস্থানে। জনশ্রুতি রয়েছে, স্তূপের মধ্যে ভগবান বুদ্ধের অস্থি রক্ষিত আছে।

মূলগন্ধকুঠি বিহারটি প্রাচীনকালে বৌদ্ধদের প্রথম সংঘ ছিল। গুপ্তরাজাদের গড়া মূলগন্ধকুঠি বিহারের স্থলে শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধভিক্ষু অনাগারিকা ধর্মপালের প্রচেষ্টায় ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে ৬১ মিটার উঁচু মূলগন্ধকুঠি গড়েছে মহাবোধি সোসাইটি। শ্রীলঙ্কার অনুরাধাপুরা থেকে বোধিবৃক্ষের একটি চারা এনে রোপণ করা হয়েছে। বৃক্ষতলে বেদির ওপর বুদ্ধ মূর্তির সামনে অস্মজি, মহানামা, ভদ্দিয়, ওয়াপ্পা, কোন্দানয় পাঁচ শিষ্যের মূর্তি। বুদ্ধ পূর্ণিমায় বুদ্ধের জন্মোত্‍সব পালিত হয় মহাসমারোহে। এছাড়াও সারনাথে চীনা মন্দির, থাই-জাপান-তিব্বতীয় মঠ ও বার্মিজ বিহার রয়েছে। মৌর্য ও গুপ্ত যুগের ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী, বুদ্ধের মুখাবয়ব রয়েছে এখানে।