Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

মাধবকুণ্ডের ঝরনা তলায়



মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ড ঝরনা যে কোনও ভ্রমণপিপাসুর নজর কাড়বে। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এ পাহাড়ি ঝরনাধারা ও তার চারপাশের অপরূপ মনোলোভা সবুজ প্রকৃতি সব শ্রেণীর পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। গঙ্গাসাড়া নামক পাহাড়ি ছড়ার প্রায় ২০০ ফুট উপর থেকে যুগ যুগ ধরে গড়িয়ে পড়ছে অবিরাম জলরাশি। দৃষ্টিনন্দন এ ঝরনা শুধু পর্যটকদের কাছেই আকর্ষণীয় স্থান নয়, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কাছে তীর্থস্থান হিসেবেও সুপরিচিত। এ ঝরনাধারায় যে কুণ্ডের সৃষ্টি হয়েছে সে কুণ্ডের পাশেই স্থাপন করা হয়েছে শিবমন্দির। হিন্দুমতে, এ শিবমন্দির স্থানটির মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। এ শিবমন্দিরকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর চৈত্রের মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীতে স্মানে আসে শত শত পুণ্যার্থী।

সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার কাঁঠালতলী থেকে রিকশায় অথবা স্কুটারে যেতে হয় মাধবকুণ্ডে। ১৫ কিলোমিটার সমতল ও পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পিচঢালা পথ, সেই সঙ্গে পাহাড়ের পাদদেশে বোনা চা বাগানের অপরূপ প্রকৃতি উপভোগ করতে করতে কখন যে মূল স্পটে চলে যাবেন, ভাবতেই পারবেন না। ঝরনার শব্দ কানে আসতেই এক অন্যরকম আনন্দানুভূতিতে মন নেচে উঠবে। চারদিকেই গাঢ় সবুজের হাতছানি। এখানে পাহাড়ের গায়ে ঘন গাছপালা, পাথরের সাজ, সুনিপুণ মাটির স্তরবিন্যাস, বৈচিত্র্যময় শিলাগঠন সবকিছুতেই যেন চোখ স্থির হয়ে যেতে চায় বারবার। কঠিন শিলায় গড়া পাহাড়ের উঁচু থেকে ঝিরিঝিরি ছন্দে নেমে আসছে পানির রেশমি লহর। সাদা সাদা ফেনা তুলে উচ্ছল সেই পানির স্রোত অবিরাম গতিধারায় নিচে পড়ছে। পানি পড়ার স্থানটিতে তৈরি হয়েছে একটি ছোট্ট লেক। দেখলেই ইচ্ছা হবে পানিতে নামার। সাঁতার জানা থাকলে আর সঙ্গে বাড়তি কাপড় থাকলে নেমে যেতে পারেন লেকের হিমশীতল জলধারায়। তবে ঝরনার একেবারে কাছে যাওয়া মোটেই সমীচীন নয়, যে কোনও সময় ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। কেননা, লেকটি গভীর। কেউ পানিতে গা ভেজাতে না চাইলে তাদের জন্য রয়েছে নৌকার ব্যবস্থা। যে কেউ নৌকায় করে ছোট্ট আয়তনের পুরো লেকটি ঘুরে দেখতে পারেন। চারদিকে পাহাড় আর পাহাড়ের বুকে জঙ্গল, এর মাঝখানে জলপ্রপাতের দৃষ্টিনন্দন ঝরনা যে কোনও পর্যটকের ভ্রমণপিপাসার মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে। এখানে একটানা তিন-চার ঘণ্টা কাটানোর পর জলপ্রপাতের অনতিদূরেই পর্যটন কর্পোরেশনের ছোট রেস্টহাউসে বিশ্রাম নিতে পারেন। চারদিকে বাগানঘেরা রেস্টহাউসে বসে চা অথবা হালকা নাশতা করে শরীরটাকে একটু চাঙা করে নিয়ে ফেরার জন্য রওনা হতে পারেন। ফেরার পথে যেতে পারেন মনিপুরী আদিবাসী পল্লীতে। তাদের হাতে বোনা কাপড়ও কিনে নিতে পারেন। তবে আদিবাসী পল্লীতে যাওয়ার আগে অবশ্যই একজন গাইডকে সঙ্গে নিতে হবে। কেননা পাহাড়ি পথে রয়েছে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা।

যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি মাধবকুণ্ডে যাওয়ার কোনও ট্রান্সপোর্ট নেই। বাসে মৌলভীবাজার নেমে সেখান থেকে বড়লেখার গাড়িতে করে কাঁঠালতলী নামতে হবে। সেখান থেকে লোকজন কম হলে রিকশায় আর বেশি হলে স্কুটার ভাড়া করে মাধবকুণ্ডে পৌঁছাতে হবে। রিকশায় ভাড়া নেবে ৭০-৮০ টাকা আর স্কুটারে জনপ্রতি ৬০-৭০ টাকা। তবে যে বাহনই নেন না কেন ফেরার সময় ওই বাহনেই ফিরতে হবে। কেননা সেখানে অতিরিক্ত কোনও যানবাহন নেই। আর যদি ট্রেনে আসতে চান, তাহলে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সিলেটের ট্রেনে কুলাউড়া জংশনে নামতে হবে। সেখান থেকে বড়লেখাগামী বাসে চড়ে কাঁঠালতলী আসতে হবে। অথবা রেলস্টেশন থেকে সরাসরি স্কুটার ভাড়া করেও যেতে পারেন।

থাকা-খাওয়া
কুলাউড়ায় রয়েছে কয়েকটি বিভিন্ন মানের হোটেল। ট্রেনে এসে এসব হোটেলে উঠতে পারেন। বাসে এলে মৌলভীবাজারের হোটেলে উঠতে হবে। কেননা কাঁঠালতলীতে তেমন কোনও ভালো মানের হোটেল নেই। এখানে খাবার-দাবার দামের দিক থেকে ঢাকার সাথে তেমন কোনও তারতম্য নেই। তবে মূল স্পটে যাওয়ার আগে বিস্কুট বা হালকা স্ম্যাক্স ও খাবার পানি সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার জন্যও মূল স্পটের কাছেই কিছু হোটেল রয়েছে। দিনব্যাপী সেখানে থাকতে চাইলে এ হোটেলগুলো থেকে দুপুরের লাঞ্চ সেরে নিতে পারেন। দামের দিক থেকে তেমন কোনও ঝামেলা নেই।