বারাণসী - প্রাচীন ভারতের এক অন্যতম নিদর্শন। গঙ্গার পশ্চিম তীরে বরুণা ও অসি নদীর মিলনস্থলে বিশ্বের 'প্রাচীনতম জীবন্ত শহর'। অতীতের কাশী আজকের বারাণসী, হিন্দুধর্মের পবিত্রতার প্রতীক। পুরাণে আছে, খ্রিস্টের জন্মের ১২০০ বছর আগে সুহোত্র-পুত্র কাশ্য পত্তন করেন এ নগরী। কাশ্য থেকে নাম হয় কাশী। The City of Light। গঙ্গা, গঙ্গার ঘাট, মন্দির, ভারতীয় সঙ্গীত, রাবড়ি-লস্যি-মালাই, অলিগলি-তস্য গলি, দোকানপাট, যানজট, ষাঁড়, বেনারসি শাড়ির দোকান, কাচের চুড়ি - এ সব নিয়েই এক প্রাণবন্ত শহর বারাণসী। হানাদারদের হানায় বার বার এর অতীত ধ্বংস হলেও পুণের পেশোয়া, ইন্দোরের হোলকার, গোয়ালিয়রের সিন্ধিয়া এবং বারাণসীর রাজাদের হাতে মন্দির, ঘাট এবং শহর গড়ে উঠেছে নতুন করে।
বারাণসীর প্রধান দর্শনীয় স্থান হলো বিশ্বনাথ মন্দির আর গঙ্গাতীরের প্রাচীন ঘাট। এখানকার প্রধান ঘাটগুলো হলো - দশাশ্বমেধ, মণিকর্ণিকা, হরিশ্চন্দ্র, মানমন্দির, রাজেন্দ্রপ্রসাদ, পঞ্চগঙ্গা, রানিমহল, অহল্যাবাই ঘাট প্রভৃতি। ইন্দোরের মহারানি অহল্যাবাই হোলকার ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান কাশী-বিশ্বনাথ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। আর পাঞ্জাব কেশরী রণজিত্ সিংহ মন্দিরের শিখরগুলো সোনা দিয়ে মুড়ে দেন ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে। মন্দিরের দেবতা কালো পাথরের বিশ্বেশ্বর। এটি দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম। বিশ্বনাথ মন্দিরের বিপরীতে অন্নপূর্ণা মন্দির। কার্তিক মাসের শুক্লা প্রতিপদে এখানে অন্নকূট উত্সব হয়।
মূল শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে রয়েছে রানি ভবানী প্রতিষ্ঠিত দুর্গামন্দির। গোধুলিয়া থেকে ৩ কিলোমিটার দূর রয়েছে শ্বেতপাথরের তুলসী মানস মন্দির। বিদ্যাপীঠ রোডে আছে ভারতমাতা মন্দির। ১৯৩৬ সালে মহাত্মা গান্ধী উদ্বোধন করেন এই মন্দির। এই মন্দিরে মূর্তির বদলে রয়েছে পাথরের তৈরি ভারতের মানচিত্র। এখানেই গড়ে উঠেছে এশিয়ার বৃহত্তম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্থে পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (BHU) প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিয়াম 'ভারত কলাভবন'-এ রয়েছে চিত্র ও ভাস্কর্যের অপূর্ব সংগ্রহ।
গঙ্গার পূর্ব পাড়ে রয়েছে সতেরো শতকে নির্মিত রামনগর দুর্গপ্রাসাদ। রাজবাড়িতে আছে দুর্গা ও ছিন্নমস্তার মন্দির। প্রতি বছর আশ্বিন মাসে রামনগরে এক মাসব্যাপী সাড়ম্বরে পালিত হয় রামলীলা উত্সব। হিন্দু পুরাণে বর্ণিত সতীর কাহিনীর একান্নটি সতী পীঠের একটি হলো বারাণসী। সতী দেবীর কুণ্ডল পড়েছিল মণিকর্ণিকা ঘাটে। তাই এটি একটি অন্যতম পীঠস্থান।