Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Technology Image

গ্রহানুদের কথা




মঙ্গল গ্রহ হলো সৌরজগতের চতুর্থ গ্রহ,সূর্য থেকে এর দুরত্ব হলো প্রায় ২৩কোটি ৬৪ লক্ষ কিঃমিঃ। এর পরের গ্রহ হলো বৃহস্পতি এর দুরত্ব প্রায় ৭৮ কোটি কিঃমিঃ। এই দুই গ্রহের মাঝখানে বিশাল এক ফাক আছে, জ্যেতির্বিদের কাছে যা অস্বাভাবিক। তখন অনেক জ্যোতিষবিদ মনে করতেন এই দুই গ্রহের মাঝেখানে আরো একটি গ্রহ আছে।

এরপর ১৭৭২সালে জোহান এলার্ট বোডে (১৭৪৭-১৮২৬) নামক জার্মানীর বিন্জানী একটি সুত্র বের করলেন। ১৭৭২ সালে আবিস্কার করা বোডের সুএ পূর্ন বাস্তবায়ন করেন আরেক বিন্জানী জোহান টাইটাস্ (১৭২৯-১৭৯৬) তিনি প্রথমে সূর্য থেকে দূরত্ব অনুসারে গ্রহগুলোকে সাজান এবং প্রত্যেকটি গ্রহের নীচে তিনি প্রথমে ০, তারপরে ৩, ৬, ১২, ২৪, ৪৮, ৯৬, ১৯২ ইত্যাদি সংখ্যা লিখলেন এবং প্রত্যেকটি সংখ্যার সাথে ৪ যোগ করলেন,এবং এতে পরপর যে সংখ্যা পাওয়া গেল এর প্রত্যেকটিকে ১০ দিয়ে ভাগ করলেন। এবং এখান থেকে যে সংখ্যা গুলি পাওয়া গেল, তাহলো সূর্য থেকে প্রতিটি গ্রহের দূরত্ব (জ্যোতিষবিদ্যা ব্যবহৃত একক অনুযায়ী এই একক হলো সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যেকার গড় দূরত্ব এর পরিমাপ হলো ১৪৯,৫৯৭,৪৭০ অথবা ৪৯৯ আলোক সেকেন্ড(৪৯৯ সেকেন্ডে আলো যতটা দূরে যায়)।

বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী মঙ্গল ও বৃহস্পতির মধ্যে যে ফাঁক আছে, সেখানে একটি গ্রহের থাকার কথা যার সংখ্যা হবে ২৪ এবং বোর্ডের সুত্র অনুযায়ী সূর্য থেকে এই গ্রহটির দূরত্ব ২.৮ জ্যোতিষবিদ্যার একক হওয়ার কথা। সাথে সাথে বিভিন্ন দেশের জ্যোতিষবিদ বড় বড় দূরবীন দিয়ে আকাশে এই গ্রহটির সন্ধান শুরু করলেন এবং যে কোন আকারের বস্তু বা গ্রহ যাই হোক না কেন মানুষের দীর্ঘ অনুসন্ধানে ধড়া পরবে না এটা হতে পারে না। অবশেষে ১৮০১ সালের পহেলা জানুয়ারী ইতালীয়ান জ্যোতিষবিদ পিয়াজি আকাশে নতুন একটি বস্তু দেখতে পেলেন, বস্তুটি ছিল খুব অস্পস্ট ও ছোট প্রথমে তিনি এই বস্তুটিকে মনে করলেন ধূমকেতু, তিনি তখন বস্তুটিকে খুব ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন এবং তিনি দেখতে পেলেন বস্তুটি দিক পরিবর্তন করছে। এবং বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী দুই গ্রহের মধ্যবর্তী যে ফাঁক ছিল তা পূরন করে দিল। বস্তুটি মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝামাঝি অবস্থান করে, এবং সূর্যকে ৪ বছর ৪ মাসে একবার প্রদক্ষিণ করে,এবং বস্তুটি সূর্য থেকে ২.৮ একক দূরে। তখন বোর্ড আশা করছিলেন যে এটি হয়তো অষ্টম মুখ্য গ্রহ হবে।

কিন্ত দেখা গেল বস্তুটি কোন গ্রহ নয় ,এটি হাজার হাজার গৌন গ্রহের মধ্যে একটি। এই সব গৌন গ্রহদের কে বলে গ্রহানু (Asteroids) বা গ্রহানু পুঞ্জ।
পিয়াজি তার আবিষ্কৃত গৌন গ্রহটির নাম দিলেন সেরেস (Ceres),এর ব্যাস ৯৫০কিঃমিঃ এটি সবচেয়ে বড় গ্রহানু, সেরেসের ভর গ্রহানুপুঞ্জের সব গ্রহানুর মোট ভরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।জার্মান গনিতবিদ গাউস (১৭৭৭-১৮৫৫) কক্ষপথ গনণার এক নতুন গানিতিক উপায় উদ্ভাবন করেন,এবং তিনিই পিয়াজি আবিষ্কৃত বস্তুটির কক্ষপথ সার্থকভাবে গনণা করেন।

পরের কয়েক বছরের মধ্যেই আরো তিনটি গ্রহানু আবিস্কৃত হয়, ১৮০২ সালে পালাস (Palls), ১৮০৪ সালে জুনো (Juno), এবং 1807 সালে ভেস্তা (Vesta)।এই ভেস্তা সৌরজগতের দ্বিতীয় বড় গ্রহানু এর ব্যাস ৫৩০ কিঃমিঃ, এই গ্রহানুটিকে খালি চোখে দেখা যায় যদি আকাশে এর অবস্হান জানা থাকে।এরপর 1845 সালে আরো একটি গ্রহানু আবিষ্কার করা হলো এর নাম এস্ট্রিয়া (Astraea),এর ব্যাস ১৬০ কিঃমিঃ। এরপর থেকে প্রতি বছর আবিস্কারের সংখ্যা বাড়তে লাগলো।এবং দুরবীনের সাথে ক্যামেরা লাগিয়ে ছবি তোলার পরে সেই ছবিতে ঝাকে ঝাকে গ্রহানুর সন্ধান পাওয়া গেল।এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০০ মত গ্রহানু আবিষ্কার করা হয়েছে। পরবর্তীতে উপগ্রহের মাধ্যমে তোলা ছবিতে দেখা গেল মঙ্গ ল ও বৃহস্পতি গ্রহের মাঝখানে বিশাল একটি গ্রহানু বলয় রয়েছে।

সৌরজগতের গ্রহরা যেভাবে সূর্যকে প্রদক্ষিন করে,এইসব গ্রহানুরাও ঠিক সেই ভাবেই সূর্যকে প্রদক্ষিন করে।গ্রহানুদের কক্ষপথ উপবৃক্তাকার (Ellipse অনেকটা ডিমের খোলসের মত)। আবার কিছু গহানুর কক্ষপথ বৃত্তাকার। গ্রহানুদের প্রত্যেকের কক্ষপথের তল পৃথিবীর কক্ষপথের যে তল তার সন্গে মিলে যায়।বেশির ভাগ গ্রহানুর সেমি মেজর অক্ষ ২.৩ থেকে ৩.৩ জ্যেতির্বিদ্যা একক।গ্রহানুদের সাইডরিয়েল সময়কাল ৩.৫ থেকে ৬ বছর। গ্রহানুদের সজ্জার মাঝে মাঝে ফাক দেখা যায়, এই ফাঁককে বলা হয় কার্কউড (Kirk wood gap) ফাঁক। বিজ্ঞানী কার্কউড প্রমান করেন যে বৃহস্পতির প্রভাবে এ ধরনের ফাঁকের সৃষ্টি হয়।

গ্রহানুদের নাম করনের ব্যাপারে একটি নিয়ম কঠোর ভাবে মেনে চলা হয়।অবশ্য প্রথম দিকে যেসব গ্রহানু আবিষ্কৃত হয়েছিল তাদের নাম বদলানো হয়নি।বর্তমানে যদি কোন গ্রহানুর সন্ধান পাওয়া যায়, যেটি মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝামাঝি আছে তাহলে তার নাম এমন ভাবে রাখতে হবে যাতে নামের শেষে a অক্ষরটি থাকে,যেমন গ্রহানু রিসিয়া (Ricca) এবং যেসব গ্রহানু সূর্যের কাছাকাছি এসে পড়ে তাদের নামের শেষে থাকে us।কিছু গ্রহানু আছে যারা সূর্য এবং বৃহস্পতির সমদূরবর্তী এদের বলা হয় ট্রোজান (Trojan) গ্রহানু ।

১৭৭২ সালে গনিতবিদ লাগরান্জ হিসাব করে দেখান যে বৃহস্পতির কক্ষপথের কাছাকাছি দুটি বিন্দু থাকবে। যে বিন্দু দুটিতে সূর্য, বৃহস্পতি ও গ্রহানু সমবাহু ত্রিভূজ সৃষ্টি করে সেই দুটিই হবে লারগান্জ নির্দেশিত বিন্দু। এই দুটি বিন্দুতে যে গ্রহানুরা আছে, তারা বৃহস্পতির সাথে একই কক্ষপথে সামনে এবং পিছন থেকে একই সময় সূর্যকে প্রদক্ষিন করে চলছে। এদের কে বলে ট্রোজান গহানু। ১৯৫৯ সালের মধ্যে এই রকম ১৪টি ট্রোজান গ্রহানু আবিষ্কার করা হয়েছে,এর একটির নাম হলো আ্যকিলিজ। বৃহস্পতির দূরত্ব খুব বেশি বলে বড় আকারের ট্রোজান গ্রহানু ছাড়া ছোট আকারের গ্রহানু আবিষ্কার করা অনেক অসুবিধা জনক। এই জন্য ধারনা করা হয় যে এই কারনে অনেক ট্রোজান গ্রহানু অনাবিষ্কৃত থেকে গেছে।

বেশির ভাগ গ্রহানুর গড়ে ২.৬৬ একক দূর থেকে সূর্যের চারিদিকে ঘোড়ে।অন্য গ্রহদের মত গ্রহানুদের গতিবিধি সুশৃঙ্খল নয়। গ্রহদের কক্ষপথের তুলনায় গ্রহানুদের কক্ষপথ অনেক বেশী উপবৃত্তাকার।উল্টা পাল্টায় চলায় এদের জুড়ি মেলা ভার।এই গ্রহানুদের দল পৃথিবীসহ সৌরজগতের অন্যসব গ্রহদের জন্য আতন্কের বিষয়। যেমন গ্রহানু এরস্ (Eros) তার কক্ষপথে চলাকালিন এক সময় পৃথিবীর ১৪,০০০,০০০ মাইলের মধ্যে এসে যায়,এরসের ব্যাস ৮ কিঃমিঃ এবং লম্বায় ৩১ কিঃমিঃ। হিদালগো গ্রহানুর কক্ষপথের ব্যাস সবচেয়ে বড় ৫৩১,০০০,০০০ মাইল যা পৃথিবীর কক্ষপথের ব্যাসের তিন গুন, এটি পথ চলতে চলতে শনি গ্রহের কাছাকাছি চলে যায়।সবচেয়ে ছোট গ্রহানু এডোনিস ১৯৩৬ সালে পৃথিবীর ১,৫০০,০০০ মাইলের মধ্যে এসে গিয়েছিল, এর ব্যাস আধামাইলের মত।

গ্রহানু হারমেস আবিষ্কারের দুই দিনের মধ্যে পৃথিবীর ৫০০০,০০০ মাইলের মধ্যে এসে গিয়েছিল। অনেকে মনে করেন যে হারমেস এমন একটি পথ অনুসরন করে যার ফলে,এটি যে কোন সময় পৃথিবীর ২২১,০০০ মাইলের মধ্যে এসে যেতে পারে।

সবচেয়ে ছোট গ্রহানু এডোনিসের সাথেও যদি পৃথিবীর ধাক্কা লাগে তবে কয়েকটি শহর ধ্বংস হয়ে যাবে। আর বড় কোন গ্রহানুর সাথে পৃথিবীর ধাক্কা লাগলে তার ফল হবে পারমানবিক বোমার বিস্ফোরনের মত।তবে চিন্তা নেই নাসার আলাদা একটা বিভাগ আছে সেখান থেকে এদেরকে দিন রাত ২৪ ঘন্টা সবসময় পর্যবেক্ষনের মধ্যে রাখা হয়, যেই গ্রহানুগুলি পৃথিবীর জন্য হুমকি তাদের উপর। তাছাড়াও আমাদের ভাগ্যেও ভাল যখন এই গ্রহানুগুলি পৃথিবীর কক্ষপথের ভিতরে এসে পড়ে তখন পৃথিবী কক্ষপথের সেই জায়গায় থাকে না।

এরপরেও যদি পৃথিবীর সামনে কোন গ্রহানু এসে যায় তখন সেই গ্রহানুটিকে আন্ত মহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্র মেরে পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে হঠিয়ে দেবার ব্যাবস্থা রাখা হয়েছে। যাক পৃথিবীর মানুষ মারার কাজে এই ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবহার না করে ওদেরকে প্রতিহত করার কাজেই ব্যবহার করা হোক।

তাহলে দেখা যাচ্ছে যে গ্রহানুদের কক্ষপথ সব সময় মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝখানে থাকে না তবে কি পৃথিবীর সাথে কোন গ্রহানুর ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা আছে? বলা যায় সম্ভাবনা খুবই কম। তারপর ও যদি কোন গ্রহানু পৃথিবীর কক্ষপথে এসেই যায়,চিন্তা করার কোন কারন নেই। কারন অতীতে এইসব গ্রহানুরা পৃথিবী পৃষ্ঠে আঘাত করেছিল, ধারনা করা হয় এদের কারনেই পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছিল।

আবার কোন গ্রহানু যখন পৃথিবীর কাছে চলে আসে তখন জ্যোতিষবিদরা নানা রকমের পরীক্ষা করেন। নাসা এই গ্রহানুদের সাহায্যে নিয়ে পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব ভাল ভাবে মাপা সম্ভব হয়েছে।এছাড়া ও নাসা (NASA) বড় গ্রহানু ভেস্তা ও সেরেস কে পরীক্ষা করার জন্য উপগ্রহ পাঠিয়েছে,এবং গ্রহানু পৃষ্ঠে নভোচারী নামানোর চিন্তা করছে।

এই গ্রহানুদের সৃষ্টি হলো কি ভাবে? এখানে দুটি মতবাদ আছে, একটি হলো অতীতে কোন এক সময় দুটি ছোট গ্রহ পরস্পরের সাথে ধাক্কা লেগে টুকরো টুকরো হয়ে যায়, এবং এই টুকরো গুলিই হচ্ছে এইসব গ্রহানুরা।
অন্যটি হলো গ্রহানুরা হলো সেই সব বস্তু কনা যাদের দিয়ে গ্রহ তৈরী হয়। কিন্তু বৃহস্পতির মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারনে এই বস্তু কনা গুলো একসাথে সংযুক্ত হয়ে গ্রহে পরিনত হতে পারে না, তবে এই মতবাদ গুলো সবই অনুমান।
কতগুলো গ্রহানু আছে তা কেউ জানে না, তবে হিসেব করে দেখা গেছে যে প্রায় ৫০,০০০ (আনুমানিক) গ্রহানু আছে। পার্শ্ববর্তী গ্রহদের কক্ষপথের ওপর সমগ্র গ্রহানুরা কি প্রভাব সৃষ্টিকরছে তা অনুমান করে, গ্রহানু বলয়ে যে বস্তু আছে তাদের সামগ্রিক ভর গননা সম্ভব।

তবে বিজ্ঞানীরা হয়তো কোনদিনই জানতে পারবে না, শেষ গ্রহানুটি আবিষ্কৃত হলো কিনা।

তাছাড়া এদের অস্বীকার করার কোন উপায় নেই, কারন এরাও অন্যসব গ্রহদের মতই সৌর জগতের আদি বাসিন্দা।