Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

শ্রীমঙ্গলে নতুন জলপ্রপাত হামহাম



মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার নয়নাভিরাম হামহাম জলপ্রপাতে পর্যটকের ঢল নেমেছে গহিন অরণ্যের এই জলপ্রপাতটি দেখার জন্য প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে। ওই জলপ্রপাতকে পর্যটন উপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের চেয়ে তিনগুণ বড় হামহাম জলপ্রপাতটি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পর্যটন শিল্পে নবদিগন্তের সূচনা করবে। কমলগঞ্জ উপজেলার কুরমা বনাঞ্চলের ভারতীয় সীমান্তে গহিন অরণ্যের হামহাম জলপ্রপাতটির সংবাদ সম্প্রতি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার হলে পর্যটকদের আগমন শুরু হয়। ঈদ ছুটি উপভোগ করতে গত কয়েক দিন ধরে পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে ১৬০ ফুট উচ্চতা থেকে প্রবাহিত হামহাম জলপ্রপাত। এই জলপ্রপাতে যাওয়ার কোন রাস্তা না থাকলেও পর্যটকরা দুর্গম পাহাড়ের ভেতর দিয়ে সংগ্রাম করে এক নজর হামহাম দেখতে ছুটছেন। গত এক সপ্তাহে প্রায় ৫ শতাধিক পর্যটক এই জলপ্রপাত ভ্রমণ করেছেন বলে স্থানীয় গাইডরা জানান।
ঢাকা থেকে আগত পর্যটক আবদুল্লাহ্ মামুন বলেন, পাহাড়ি উঁচু-নিচু আঁকাবাঁকা দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে এখানে আসার পর জলপ্রপাতের পানির শব্দ আমাকে মুগ্ধ করেছে। তিনি বলেন, মাধবকুণ্ডের চেয়ে তিনগুণ বড় হয়ে পানি পড়ছে। কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কি.মি. পূর্ব-দক্ষিণে রাজকান্দি বন রেঞ্জের কুরমা বনবিট এলাকার প্রায় ১০ কি.মি. অভ্যন্তরে দৃষ্টিনন্দন হামহাম জলপ্রপাতের অবস্থান। এখানকার পাহাড়ি অধিবাসীরা পানি পতনের স্রোতধ্বনিকে হামহাম বলে। তাই এটি হামহাম নামে পরিচিত। হামহাম জলপ্রপাতে সরাসরি যানবাহন নিয়ে পৌঁছার কোন ব্যবস্থা নেই। কমলগঞ্জ-কুরমা চেকপোস্ট পর্যন্ত প্রায় ২৫ কি. পাকা রাস্তায় স্থানীয় বাস, জিপ, মাইক্রোবাসযোগে যেতে পারলেও বাকি ৩-৪ কি. মি. পথ পাড়ি দিতে হয় পায়ে হেঁটে। কুরমা চেকপোস্ট থেকে চাম্পারায় চা বাগান পর্যন্ত মাটির রাস্তা। সেখান থেকে প্রায় ৫ কি.মি. দূরে সীমান্ত এলাকায় ত্রিপুরা আদিবাসীদের পল্লীর বন বিভাগের কুরমা বিটের অরণ্যঘেরা দুর্ঘম পাহাড়ি এলাকা তৈলংবাড়ি কলাবন বস্তিতে। সেখান থেকে একটু এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে প্রত্যাশিত সেই হামহাম জলপ্রপাতের। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু পথে ট্রেকিং করা খুবই কঠিন এবং কষ্টের। মাঝে মধ্যে সিমেন্টের ঢালাই করার মতো দেখতে বড় বড় পাথরের খণ্ড খুবই পিছলে, ডানে-বামে তাকালেই চিৎপটাং হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এই পথটি ট্রেকিং করতে হলে হাতে বাঁশের লাঠি নিয়ে সাবধানে চলতে হবে। কলাবন পাড়া থেকে হাঁটার সময় কলাগাছগুলো দেখলে মনে হবে কে যেন সুন্দর, সুশৃংখল, সারিবদ্ধভাবে লাগিয়ে রেখেছে। কদমের জারুল আর চিকরাশি গাছের সারিবদ্ধ চারাগুলোর ফাঁকে ফাঁকে নানা রঙের প্রজাপতি ডানা মেলে উড়ে যাওয়ার দৃশ্য পথচলাকে রোমাঞ্চিত করবে। পাশাপাশি ডুমুর গাছের শাখা আর বেত বাগানে দেখা মিলবে চশমা বানরের। চারদিকে গাছগাছালি ও প্রাকৃতিক বাঁশবনে ভরপুর আর মিরতিঙ্গা, কালি, ডলু, মুলি ইত্যাদি নামের নানা প্রজাতির বাঁশ বাগান আপনাকে দেবে বাড়তি আনন্দ। পাথুরে পাহাড়ের ঝিরি পথে হেঁটে চলার পথে সুমধুর পাখির কলরব আর দূর থেকে ভেসে আসা বিপন্ন বনমানুষ, উল্লুক, গিবনসের ডাক আপনার মনকে ভালোলাগার অনুভূতিতে ভরিয়ে দেবে। এভাবে কিছুদূর এগিয়ে গেলেই দু’চোখে ভেসে উঠবে পাহাড় থেকে ধোঁয়ার মতো ঘন কুয়াশা ভেসে ওঠার অপূর্ব দৃশ্য। মনে হবে নয়নাভিরাম পাহাড় হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এভাবেই হাঁটতে হাঁটতে এক সময় পৌঁছানো যায় হামহাম জলপ্রপাতের খুব কাছাকাছি। দূর থেকে শুনতে পাবেন হামহাম জলপ্রপাতের শব্দ। জল প্রপাতের পানি ছুঁয়ে দেখতে পারবেন। তবে পানির রক্ত চোষা প্রাণী জোঁক থেকে সাবধান।