Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

অতীত রাজাদের রাজপাট: মহীশূর



সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭৭০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত মহীশূরকে কেউ বলেন বাগিচার শহর, আবার কেউ বলেন চন্দনের। কথিত আছে, অসুররাজ মহিষাসুরের থেকেই এ শহরের নাম - মহীশূর। কর্নাটকের প্রাচীন রাজধানী শহর মহীশূর যেন আজও অতীত রাজাদের রাজ্য। রাজত্ব গেলেও রাজরাজড়াদের বৈভব আজও মহীশূরের অন্যতম আকর্ষণ। ওদিয়ার রাজবংশ দীর্ঘদিন রাজত্ব করেছে মহীশূরে।

স্থাপত্যরীতির নান্দনিকতার কারণে মহীশূরের প্রকাণ্ড রাজপ্রাসাদটিই হলো পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। ১৮৯৭ সালে পুরনো প্রাসাদ আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর ইন্দো-সেরাসেনিক শৈলীতে নতুন করে তৈরি করা হয়েছে এ প্রাসাদ। নানা স্মারক সংগ্রহে সুসজ্জিত প্রাসাদের বিভিন্ন মহল খুলে দেয়া হয়েছ দর্শকদের জন্য।

রাজপ্রাসাদের দরবাল হলে রয়েছে ষোড়শ শতকের ওদিয়ার রাজের রত্নখচিত সোনার সিংহাসন। এছাড়াও মুগ্ধ করবে প্রাসাদের বিভিন্ন মহলের কাঠের দরজা, ছাদের সূক্ষ্ম কারুকাজ, রূপার দরজা, শুভ্র মেঝে, ঝাড়লণ্ঠন, হাতির দাঁত ও চন্দন কাঠের আসবাবপত্র। রয়েছে হায়দার আলি ও টিপু সুলতানের তরোয়াল, ছত্রপতি শিবাজির বাঘনখ।

১৮৬১ সালে কৃষ্ণরাজা ওদিয়ারের বিয়ের সময়ে তৈরি জগমোহন প্রাসাদে রয়েছে আর্ট গ্যালারি। এখানে রবি বর্মা, এস এল হলদিকরের ছবি ও নানা অ্যান্টিক আছে। আছে উল্লেখযোগ্য বাদ্যযন্ত্রের সংগ্রহ। মহীশূরের চিড়িয়াখানা চামরাজেন্দ্র জু গার্ডেনটি তৈরি হয়েছিল ১৮৩২ সালে মহীশূররাজের পৃষ্ঠপোষকতায়। ৩৭ হেক্টর জায়গা জুড়ে সবুজ গাছপালায় ছাওয়া, পরিখায় ঘেরা নীল আকাশের নিচে প্রায় ১৫০০ জীবজন্তুর ছড়ানো সংসার।

শহরের দক্ষিণে ১০৯৫ মিটার উঁচু চামুণ্ডি পাহাড়ে রাজপরিবারের কুলদেবী চামুণ্ডেশ্বরী মন্দির। এ মন্দিরে রয়েছে ২০০০ বছরের প্রাচীন মূর্তি। সুন্দর স্থাপত্যের এ মন্দিরটিতে পদব্রজে পৌঁছতে হলে চড়তে হবে ১০০০টি সিঁড়ি। পাহাড় ঘুরে গাড়িতে যাওয়ার পথও আছে। পথে পড়বে একখণ্ড পাথর কুঁদে তৈরি করা ২৫ ফুট দীর্ঘ ও ১৬ ফুট উঁচু বিশাল, বিস্ময়কর নন্দীমূর্তি এবং মন্দিরের সামনে বিশাল মহিষাসুরের মূর্তি। এই মহিষাসুরকেই বধ করেছিলেন দেবী চামুণ্ডেশ্বরী।

মহীশূর শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে কাবেরী নদীর দ্বীপে রয়েছে শ্রীরঙ্গপত্তনম দুর্গ। পঞ্চদশ শতকে বিজয়নগরের রাজাদের তৈরি এই দুর্গেই পরবর্তীকালে রাজত্ব করেছেন হায়দার আলি, টিপু সুলতান। তা সত্ত্বেও এখানে রয়ে গেছে হিন্দুর দেবতা শ্রীরঙ্গনাথস্বামীর মন্দির, কালো পাথরের বিষ্ণু অর্থাত্‍ শ্রীরঙ্গনাথস্বামীর শায়িত মূর্তি। আর এ থেকেই জায়গার নাম শ্রীরঙ্গপত্তনম। এই দুর্গেই ব্রিটিশদের সাথে সম্মুখযুদ্ধে বীরের মতো প্রাণ দেন। ১৭৯৯ সালে ব্রিটিশ দখল নেয় দুর্গের, ধ্বংসও করে এটি। আজও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে মধ্যে স্বাধীন মহীশূরের স্মারক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হায়দার আলি, টিপু সুলতানের স্বপ্নে গড়া দুর্গ। এখানেই কাবেরীর কোলে পারসীয় ধাঁচে তৈরি দরিয়াদৌলত বাগে রয়েছ টিক কাঠের কারুকার্যময় প্রাসাদ, যা এককালে ছিল টিপুর গ্রীষ্মাবাস। আর আছে কালো পাথরের পিলারের ওপর ক্রিমরঙা গম্বুজে টিপু ও তাঁর পূর্বপুরুষদের সমাধি, অষ্টাদশ শতকের জুম্মা মসজিদ, কয়েদিদের পাতালঘর।