Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

নাটোরের পথে



রাজশাহী বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা নাটোর। আর নাটোরের কথা এলেই কেন জানি শুধু কাঁচা গোল্লার কথা মনে পড়ে। কি সুস্বাদু সেই কাঁচা গোল্লা! যাক সে কথা, এ নাটোর জেলার উত্তরে নওগাঁ ও বগুড়া জেলা, দক্ষিণে পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলা, পূর্বে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে রাজশাহী জেলা। আত্রাই, বড়াল, নারদ ও নন্দকুঁজা জেলার প্রধান নদী। আমরা এবার আমাদের যাত্রায় অগ্রসর হয়েছি নাটোর জেলার দিকে।


রানী ভবানী রাজপ্রাসাদ
নাটোর জেলা শহরের বঙ্গজ্জল এলাকায় রয়েছে রানী ভবানী রাজপ্রাসাদ। তোরণ পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলে চোখে পড়বে রাজবাড়ির কামান। রাজবাড়িটি ভেতরে রয়েছে ৬টি দিঘি। আর পুরো রাজবাড়িটি বাইরের দিক থেকে লেক আকৃতির দিঘি দিয়ে ঘেরা। ভেতরে রয়েছে বড় তরফ ভবন নামে পরিচিত রানী ভবানীর রাজপ্রাসাদ। সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত সুরম্য এ ভবনটি আজও সবার দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম। জানা যায়, রাজা রামজীবন ১৭০৬-১৭১০ সালের কোন এক সময় পুঠিয়ার রাজার কাছ থেকে প্রায় ১৮০ বিঘার একটি বিল দান হিসেবে গ্রহণ করে সেখানে এ রাজপ্রাসাদ গড়ে তোলেন। রাজা রামজীবনের একমাত্র ছেলে কলিকা প্রসাদ মারা গেলে তার দত্তক ছেলের সঙ্গে রানী ভবানীর বিয়ে দেন।



উত্তরা গণভবন
জেলা শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ি, যা উত্তরা গণভবন নামে পরিচিত। নাটোরের রানী ভবানী তার নায়েব দয়ারামের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে তাকে দিঘাপাতিয়া পরগনা উপহার দেন। এখানে তিনি গড়ে তোলেন বেশ ক’টি সুরম্য প্রাসাদ। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে সেগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। পরে তার উত্তরসূরি প্রমোদনাথ রায় নতুন করে এখানে কয়েকটি প্রাসাদ নির্মাণ করেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত করার পর ১৯৫২ সালে দিঘাপাতিয়ার শেষ রাজা প্রতিভানাথ সপরিবারে ভারত চলে যান। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত এ রাজপ্রাসাদটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার পর ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের নজরে আসে এবং এর সংস্কার করা হয়।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার এটিকে ব্যবহার করে উত্তরা গণভবন হিসেবে। প্রায় ৪৩ একর জায়গাজুড়ে চারদিকে লেক ও প্রাচীরবেষ্টিত এ রাজবাড়িটিতে ছোট-বড় বারোটি সুরম্য ভবন আছে। ভেতরে আছে ইতালি থেকে সংগৃহীত ভাস্কর্যে সজ্জিত বাগান। উত্তরা গণভবনের প্রবেশপথে চারতলা বিশিষ্ট পিরামিড আকৃতির প্রবেশদ্বার। আর এর চূঁড়ায় রয়েছে বিলেতের কোক অ্যান্ড টেলভি কোম্পানির শতবর্ষ প্রাচীন ঘণ্টা ঘড়ি।


চলনবিল
চলনবিলের একটি অংশ পড়েছে নাটোরে। জেলার সিংড়া উপজেলায় রয়েছে চলনবিলের বড় একটি অংশ। এছাড়া সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে বনপাড়া পর্যন্ত দীর্ঘ সড়ক তৈরি হয়েছে চলনবিলের ওপর দিয়েই। শীতে এসব বিলের পানি শুকিয়ে গেলেও বর্ষায় থাকে পরিপূর্ণ। সড়কের দু’পাশে এ সময় যে দিকে চোখ যায় শুধু অথৈ জলরাশি। নিজস্ব গাড়িতে গেলে যাত্রাপথেই চলনবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব।


চলনবিল জাদুঘর
জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর গ্রামে আছে চলনবিল জাদুঘর। স্থানীয় শিক্ষক আবদুল হামিদ ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় নিজ বাড়িতে ১৯৭৮ সালে গড়ে তুলেছেন বিচিত্র এ জাদুঘর। চলনবিলে প্রাপ্ত নানা নিদর্শন, মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম ছাড়াও এখানে আছে অনেক দুর্লভ সংগ্রহ। নাটোর থেকে বাসে গুরুদাসপুর উপজেলায় এসে সেখান থেকে নদী পার হয়ে রিকশায় আসা যাবে খুবজিপুর গ্রামের এ জাদুঘরে। শনিবার জাদুঘরটি বন্ধ থাকে।



হাইতি বিল
জেলা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে নলডাঙ্গা উপজেলায় আছে হাইতি বিল। প্রায় ৪৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ বিলটি দেশের সবচেয়ে গভীর বিল। প্রায় বারো মিটার গভীর এ বিলে সারাবছরই পানি থাকে। তবে বর্ষায় পানির পরিমাণ বেড়ে যায় অনেক বেশি।

কিভাবে যাবেন
ঢাকার গাবতলী থেকে প্রচুর পরিবহন প্রভূতি বাসে যাওয়া যায় নাটোর। এছাড়া রাজশাহীগামী যে কোন বাসেই নাটোরে আসা সম্ভব।
এছাড়া ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেন একতা এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেসে নাটোরে আসা যায়।

কোথায় থাকবেন
নাটোর শহরে থাকার জন্য সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। নাটোর থেকে রাজশাহীর দূরত্ব প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার। ভালো কোন হোটেলে থাকতে চাইলে রাজশাহী শহরে যেতে পারেন।