বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থাপত্য বুরুজ খলিফা আকাশ ছুঁই ছুঁই করে দাঁড়িয়ে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে। এটিকে বুরুজ দুবাই নামেও ডাকা হয়। ২ হাজার ৭১৭ ফুট উঁচু এ ভবন নির্মাণ শুরু হয় ২০০৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর এবং তা শেষ হয় ২০০৯ সালের ২ ডিসেম্বর। ১৬০ তলা এ ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ২০১০ সালের ৪ জানুয়ারি। বাণিজ্যিক এ ভবনের আওতায় রয়েছে ২ বর্গকিলোমিটার বা ৪৯০ একর জায়গা। এতে এমন কিছু বিচিত্র প্রতীক ব্যবহার করা হয়েছে যেগুলো বিশ্বের ১৯৬ দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। আর এই প্রতীকগুলোকে ঘিরে রেখেছে যে বর্ডারÑ তা নির্মিত হয়েছে ১৮ ক্যারেটের সোনা দিয়ে।
এটি নির্মাণে জড়িত হয়েছিল ২ কোটি ২০ লাখ লোক। ভবনের মোট পরিসর ৫৬ লাখ ৭০ হাজার বর্গফুট। ১২ হাজার লোক এই ভবনের ওপর জীবিকা নির্বাহ করেন। আর ১৯২টি পাইলের ওপর স্থাপিত হয়েছে এর ভিত্তিপ্রস্তর।
ভবনটি নির্মাণে খরচ হয়েছিল দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর পুরো এলাকাটির শোভা বর্ধন ও উন্নয়নে খরচ গিয়ে পৌঁছেছিল ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। ভবনটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ইমার প্রপার্টিজ কড়ায়-গণ্ডায় পুষিয়ে নিয়েছিল তাদের খরচ। এমনকি লাভ দেখেছিল দ্বিগুণেরও বেশি। প্রতি বর্গফুট বাণিজ্যিক ফ্লোর তারা বিক্রি করেছিল ৪ হাজার মার্কিন ডলার এবং প্রতি বর্গফুট আবাসিক ফ্লোর বিক্রি হয়েছিল সাড়ে ৩ হাজার মার্কিন ডলারে।
এর ৩৯ তলা পর্যন্ত রয়েছে আরমানি হোটেল। ৪৩ ও ৭৬তম তলায় রয়েছে চমৎকার সুইমিং পুল। এ ছাড়া ৪০ থেকে ১০৮ তলা পর্যন্ত রয়েছে আবাসিক ফ্লোর। ১২২, ১২৩ ও ১২৪ তলা বাদ দিয়ে বাকি অন্য ফ্লোরগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন কর্পোরেট অফিস বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। আর এই তিনটি তলায় রেস্টুরেন্ট, স্কাই লবি এবং ইনডোর আউটডোর অবজারভেশন ডেক। টিকিট ছাড়া এই অবজারভেশন ডেকে ঢোকা যায় না। এতে ওঠানামার জন্য রয়েছে ১২-১৪ জনের ৫৭টি লিফ্ট এবং ৮টি এসকেলেটর। ভবনটির সবচেয়ে উপরের তলায় ব্যবহƒত এয়ারকুলার থেকে ১ দিনে যে পরিমাণ ঠাণ্ডা বের হয়Ñ তা দিয়ে ১৩ হাজার টন বরফ উৎপন্ন করা সম্ভব। এর নিচতলা থেকে ১৬০ তলায় পৌঁছতে আপনাকে ভাঙতে হবে ২ হাজার ৯০৯টি সিঁড়ি। এই ভবনে যে কোন সময় গুনে পাওয়া যাবে কমপক্ষে ৩৫ হাজার লোককে।
ভবনটিতে রয়েছে ২৪ হাজার ৩৪৮টি জানালা। এসব জানালার গ্লাস পরিষ্কার করতে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন থেকে আনা হয়েছে যে মেশিনটি তার মূল্য ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ভবনটির ১৬০ তলা থেকে প্যারাসুট ব্যবহার করে নিচে লাফাতে একজন প্যারাট্র–পার সময় নিয়েছেন ৯০ সেকেন্ড। ভবনটির উচ্চতা পরিমাপের জন্য একজন প্রকৌশলীর সময় লেগেছিল ৬ ঘণ্টা।