থানা পুলিশের সাথে বিনোদন জগতের তারকাদের কার্যত কোনো সম্পর্ক নেই। থানা পুলিশের কাজ অপরাধীদের খোঁজ করা, আর তারকারা সাধারণ মানুষদের বিনোদনের রসদ যোগান। কিন্তু কখনো কখনো বিনোদন তারকারা ফ্যান্টাসি জীবন যাপন করতে করতে বিচ্যূত হোন তার মূল ট্র্যাক থেকে। মিশে যান অপরাধ জগতের সাথে। তারা একবারো কল্পনা করেন না সাধারণ মানুষেরা তাদের কতো আপন মনে করেন, কতো নির্দোষ মনে করেন।
বর্তমান সময়ে হলিউডের পরই সবচেয়ে বড়ো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বলা হয় বলিউডকে। অথচ এটা আজ অপরাধ প্রবনতায় সবচেয়ে এগিয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে বলিউডকে যেনো থানা পুলিশ কোনোভাবেই পিছু ছাড়ছে না। দুর্নীতি, অপহরণ, ধর্ষণ, মাধক বহন আর অবৈধ অস্ত্র বহনের বিভিন্ন মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন তারকারা। সব ক্ষেত্রেই যে তারাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য প্রমানিত হয়, তাও না। কাউকে হয়তো অহেতুক হয়রানির জন্যই মামলা-হামলা করা হয়, কেউ আবার অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য পুলিশি ঝামেলায় জড়িয়ে যান, আবার কেউ সত্যি সত্যিই অপরাধকে ধারণ করেন। হয়তো তার এই অপরাধী মুখোশ একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রীর চেহারার আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়। কিন্তু কোনো না কোনো সময় ঠিকই উম্মোচিত হয়ে পড়ে তার আসল রূপ! পুলিশি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়া এমন পাঁচজন বলিউড তারার কথা জানাচ্ছি।
অস্ত্র মামলায় হাজত বাসই সঞ্জয়ের পরিনতি…
অপরাধী যতো ক্ষমতাশীলই হোক আইনের শাসন সকলের জন্যই সমান, এই কথাটি সম্পূর্ণতা পাবে বলিউডের প্রভাবশালী অভিনেতা সঞ্জয় দত্তের দিকে একটু নজর দিলে। যদিও ভারতে আইনের শাসনের এমন নিরপেক্ষ চেহেরা নতুন কিছু নয়, অপরাধ করে কোনো রাজনৈতিক শক্তিধর নেতা থেকে একেবারে জনপ্রিয় অভিনেতা পর্যন্ত কেউ-ই পার পেয়ে গেছেন এমন দৃষ্টান্ত খুব কমই আছে।
১৯৯৩ সালের মুম্বাই হামলার দায় ও অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে সঞ্জয় দত্তকে অভিযুক্ত করা হয়। মুম্বাইয়ের সেই হামলায় অন্তত ২৫৭ জনের মৃত্যু ঘটে। যদিও পরবর্তীতে সঞ্জয়ের নামে হত্যা মামলা প্রত্যাহার করে নিয়ে অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে গ্রেপ্তার দেখিয়েছিলো ভারতের আদালত। সঞ্জয় দত্ত এখনো পাঁচ বছরের মেয়াদে জেল বাস করে যাচ্ছেন। যদিও চূড়ান্ত রায়ের আগে দেড় বছরের জেল বাস করেছিলেন তিনি।
সাজা পেয়েও স্থগিত হলো সালমানের…
‘হামারি পুলিশ হামেশা লেট আতি হ্যায়, আউর গলত ইনসানকো হি অ্যারেস্ট কারতি হ্যায়’ –এমনই ছিলো সালমানের মুক্তিপ্রাপ্ত শেষ ব্লকবাস্টার সিনেমা ‘কিক’-এর ডাইলগ! ছবিতে সালমানের মুখ নিশ্রিত এই হিন্দি ডাইলগটির বাংলায় অর্থ দাঁড়ায়, ‘আমাদের পুলিশ সব সময়ই ঘটনার শেষে এসে হাজির হয়, আর কিছু নিরীহ মানুষদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যান। রিলে সালমান খান এমনটি বললেও রিয়েল জীবনে তার ক্ষেত্রেই ঘটে গেলো উল্টোটা। পুলিশ ঘটনা সংঘঠিত হওয়ার পর আসলেও নিরীহ মানুষকে ধরেনি, বরং ঠিকঠাক লোককেই ধরেছে। ১৩ বছর পরে হলেও সেই বিষয়টিই প্রমান করেছে মুম্বাইয়ের স্থানীয় একটি আদালত। ফলে ২০০২ সালে এক উদ্বাস্তুকে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ী চাপা দিয়ে মেরে ফেলার ঘটনায় ফেঁসে যান সালমান। তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ সত্য প্রমানিত হলে চলতি মাসের ৬মে মুম্বাইয়ের স্থানীয় আদালত ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
এমন সাজা পেয়ে ভরকে গিয়েছিলেন সালমানসহ পুরো বলিউড। পরে যদিও উচ্চ আদালতে আপিল করায় আপাতত স্থগিত আছে সালমানের বিরুদ্ধে দেয়া নিন্ম আদালতের রায়।
কৃষ্ণসার মামলায় বলিউডের মিস্টার পারফেকশনিস্ট…
সব সময় নিজেকে সকল প্রকার ঝামেলা থেকে দূরে রাখলেও মিস্টার পারফেকশনিস্ট আমির খানের উপরও রয়েছে পুলিশি মামলা। যদিও সালমানের মতোই আদালাতের রায়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা ‘কৃষ্ণসার’ মামলা থেকে ১১ মে অব্যাহতি পেলেন তিনি।
যদিও আমিরের বিরুদ্ধে সালমানের মতো কোনো মানুষ হত্যার মামলা ছিলো না। ২০০১ সালে তৈরী ‘লগন’ ছবিটিতে একটি হরিণ মারার দৃশ্যধারণ করা হয়েছিল, যাতে বাস্তবেই হরিণ শিকার করা হয়েছিলো বলে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন এক ব্যক্তি।
পরবর্তীতে ‘লগন’ ছবিতে যে হরিণই ছিলো তা প্রমানিত না হওয়ায় আমিরসহ অন্যদেরও এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয় আদালত।
দুর্নীতির মামলা থেকে জয় ললিতার মুক্তি…
সালমান ও আমির খানের মতো আদালতের রায়ে স্বস্তি পেলেন অভিনেত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী বনে যাওয়া ভারতের দক্ষিণী অভিনেত্রী জয় ললিতা। তার উপর যদিও কোনো হত্যা মামলা ছিলো না; তিনি যেহেতু একজন রাজনৈতিক, ফলে তার উপর ঝুলছিলো দুর্নীতি দমনের কড়া। এর জন্য অবশ্য এই অভিনেত্রীকে কারাদণ্ডেও ভুগতে হয়েছে। জামিনে মুক্ত থাকলেও চার বছরের সাজা ছিলো তার উপর। এছাড়াও ১০০ কোটি টাকার জরিমানার কঠোর খড়গও ছিলো জয় ললিতার উপর।
জয় ললিতার উপর আদালতের এমন সিদ্ধান্তের পর তার রাজনৈতিক ও অভিনয় জীবনও অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। তবে ১১ মে সোমবার আদালতের রায়ে জয়ললতিতাকে অব্যাহতি দেয় কর্নাটক হাই কোর্ট ।
প্রায় ১৮ বছর আগে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পদ থাকার অভিযোগে বর্তমান বিজেপি নেতা সুব্রামানিয়াম স্বামী জয়ললিতার বিরুদ্ধে ওই মামলাটি করেন। ২০১৪ সালের ২৭ শে সেপ্টেম্বর বেঙ্গালুরুর একটি আদালতে জয়ললিতাকে দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
ধর্ষণ মামলায় নাস্তানাবুদ শাইনি আহুজা…
শাইনি আহুজা বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতাদের একজন। বলিউডে ২০০৩ সালে যাত্রা করলেও ‘গ্যাংস্টার’ ছবির মাধ্যেমেই বাজিমাৎ করেন শাইনি। তারপর একে হু লামহে, লাইফ ইন এ মেট্রো এবং বুলবুলাইয়ার মতো ব্যবসায়িক ছবিতে কাজ করেন তিনি। কিন্তু ২০০৯ সালে গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে শাইনির বিরুদ্ধে মামলা হলে কিছুটা কোনঠাসা অবস্থার মধ্যে পড়েন এই অভিনেতা।
ধর্ষণ মামলার অভিযোগ প্রমানিত হলে তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। প্রায় পাঁচ মাস কারাবন্দী থাকার পর জামিনে মুক্তি পান তিনি। ওই ঘটনার পর নিজেকে গুটিয়ে নেন শাইনি। চলচ্চিত্র কিংবা মিডিয়া থেকেও নিজেকে লুকিয়ে রাখেন। তবে সবকিছু ভুলে নিজেকে শুধরিয়ে ফের চলচ্চিত্রে আসেন তিনি। চলতি বছরেই মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে শাইনি অভিনীত ‘ওয়েলকাম ব্যাক’ ছবিটি। যা এ মাসের ২৯ মে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে।