নগরীর যান্ত্রিকতার দাপটে মানুষ অস্থির। তারপরও থাকতে হয় এখানে। প্রতিদিন কাজ করে চলতে হয় রুটিনমাফিক। জীবনের একঘেয়েমি দূর করতে চাই একটু নির্মল পরিবেশে বেড়ানো। অল্প সময়ে নির্মল পরিবেশে বেড়ানো ঢাকায় বিরল হলেও কাছেই আছে বিরুলিয়া। এটি ঢাকা জেলার অন্তর্গত সাভারের একটি গ্রাম। অবস্থানটা ঢাকার অতি নিকটে। মিরপুর-১ নম্বর বেড়িবাঁধ দিয়ে এগিয়ে আশুলিয়ার দিকে অগ্রসর হলে হাতের বাম দিকে প্রথমে যে গ্রামটি চোখে পরবে সে গ্রামটির নামই বিরুলিয়া।
ভাসমান দ্বীপের মতো বিরুলিয়া গ্রাম। ঢাকার অতি নিকটে হলেও ঢাকার মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে এখানের মানুষের জীবনযাত্রার কোনো মিল নেই। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুত্, গ্যাস সব মিলিয়ে পিছিয়ে থাকা লোকগুলো নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে কোনো মতে। বেড়িবাঁধ থেকে গ্রামটিতে যেতে হয় খেয়া নৌকা পার হয়ে। বর্তমানে এটি একটি গণ্ডগ্রাম হলেও একশ বছর আগে এর চিত্র ছিল ভিন্ন। ছোট্ট এই গ্রাম ছিল বিরুলিয়া নগরী। সে সময় এখানে বাস করতেন কিছু বড় ব্যবসায়ী ও জমিদার। তাদের অনেকেরই ব্যবসা ছিল কলকাতায়। স্বাধীনতার পর অনেকেই ফিরে আসেনি কলকাতা থেকে। কিন্তু আজও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে গ্রিক স্থাপত্য নকশায় গড়া বাড়িগুলো। সেটাই এখন দেখার বিষয়। বাড়ির রংহীন উঁচু থাম দাঁড়িয়ে জানান দিচ্ছে এককালের জমিদারির ইতিহাস। ছোট্ট এই গ্রামে রয়েছে আট-দশটি জমিদারবাড়ি। দু-একটা বাড়িতে জমিদারের বংশধররা টিকে আছে। বাকিগুলোতে থাকে কিছু ভূমিহীন পরিবার। যার কারণে এখানের সঠিক ইতিহাসও পাওয়া কঠিন। বহু দিন রক্ষণাবেক্ষণও হচ্ছে না বাড়িগুলো। তাই দিনে দিনে খসে পড়ছে প্লাস্টার ও নকশা। প্রতিনিয়তই ধ্বংস হচ্ছে ইতিহাসের উপাদান এই বাড়িগুলো। সবুজ গাছ-গাছালির মধ্যেখানে বাড়িগুলো চমত্কার দেখায়। বিরুলিয়া গ্রামের সৌন্দর্য একবার দেখে আসুন। নিবিড় সবুজের স্পর্শে আপনার এই শহুরে মন কিছুটা স্বস্তি পাবে এই কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
মিরপুর-১ নম্বর দিয়াবাড়ি থেকে হিউম্যান হলারে উঠলে ১০-১২ মিনিটের পথ এগুলেই নামিয়ে দিবে বিরুলিয়ার সামনে বেড়িবাঁধের ওপর। সেখান থেকে খেয়া নৌকায় বিরুলিয়া গ্রামের পূর্বপ্রান্তে উঠতে হবে। গ্রামের এই অংশে আছে বাঁধানো ঘাট। একটু জিরিয়ে নেওয়া যায় এখানে বসে। শুক্রবার পাশেই বসে সাপ্তাহিক বাজার। গ্রামীণ পরিবেশে এই বাজারের পণ্যও অনেকটা গ্রামীণ। হেঁটেই দেখা যায় জমিদার বাড়িগুলো। পাকা দালানের সঙ্গে এখানে আছে পুরনো মাটির ঘর। কোথাও ভিতর বাড়ি যেতে চাইলে অনুমতি নেওয়াই ভালো। তবে এখানে মানুষ দর্শনার্থীদের নিরাশ করে না। সকালে বাহির হলে দুপুরেই ফেরা যায় নগরীতে। প্রয়োজনে শুকনো খাবার নিয়ে যাওয়া ভালো। মিরপুর-১ নম্বর দিয়াবাড়ি ঘাট থেকে ট্রলার দিয়ে তুরাগ নদী দিয়ে পৌঁছানো যায় বিরুলিয়ায়।