১৯৪৪ সালে চব্বিশ পরগনা পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আক্কাস আলী মণ্ডল, মা কায়সুন নেসা। আর্থিক সচ্ছলতার জন্য লেখাপড়া অসমাপ্ত করেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। এর ৫১ দিনের মাথায় ২৫ মার্চ রাতে পাকবাহিনীর আক্রমণকালে তিনি সেনানিবাস ত্যাগ করে নিজ বাড়িতে চলে আসেন। দেশের সংকটকালে নিজেকে আর পরিবারের বাঁধনে আটকে রাখতে পারেননি। সিলেটের শ্রীমঙ্গল উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে ধলই নামক স্থানে মুক্তিবাহিনীতে যোগদেন। পাকসেনাদের ধলই সীমান্ত ঘাঁটির সামরিক গুরুত্বের কারণে মুক্তিযোদ্ধারা ঘাঁটিটি দখলের পরিকল্পনা করে। প্রথম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ‘সি’ কোম্পানিকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়।
হামিদুর রহমান ছিলেন এ কোম্পানির সদস্য। ২৮ অক্টোবরের পূর্ব রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩টি প্লাটুন অতি সন্তর্পণে ঘাঁটি অভিমুখে অগ্রসর হয়। শত্রুর ঘাঁটির কাছাকছি এসে মুক্তিযোদ্ধারা যখন অতর্কিত আক্রমণের উদ্যোগ নেন, তখন অকস্মাৎ একটি মাইন বিস্ফোরণের শব্দে শত্রুপক্ষ সচকিত হয়ে এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। এক ঘণ্টাব্যাপী দুপক্ষে সংঘর্ষ চলে। দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে শত্রুপক্ষের এলএমজির গুলিবর্ষণের ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রগতি মারাÍভাবে ব্যাহত হয়। এ সংকটকালে হামিদুর রহমান তার দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধকারে সন্তর্পণে হামাগুড়ি দিয়ে এলএমজির পোস্টের দিকে অগ্রসর হন এবং ২ এলএমজি চালকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হত্যা করে। সঙ্গে সঙ্গে শত্রুর এলএমজি স্তব্ধ হয়ে যায়। আর তিনি শত্রুর গুলিতে বিদ্ধ হয়ে মাত্র ১৭ বছর ৪ মাস বয়সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এলএমজির গুলিবর্ষণ বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। তীব্র আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর ঘাঁটি দখল করে নেয়।
বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি মোহাম্মদ হামিদুর রহমানের মৃতদেহ প্রথমে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আমবাসা গ্রামে সমাহিত করা হয়। স্বাধীনতার ৩৬ বছর পর ১১ ডিসেম্বর ২০০৭-এ দেশের মাটিতে ফিরিয়ে এনে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। তার শাহদাত বরণকারী স্থান মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই-এ অবস্থতি বিজিবি (সাবকে বিডিআর) চকেপোস্টসংলগ্ন এলাকায় একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।
কপোতাক্ষ নদের একটি শাখা গেছে ঝিনাইদহের মহেশপুরের খোর্দ খালিশপুর গ্রামের পাশ দিয়ে। এ গ্রামটি দেশের ইতিহাসে স্থান করে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের গ্রাম বলে। এ মহান বীরের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে ২০০৮ সালে শহীদের গ্রাম খোর্দখালিশপুরের নাম পরিবর্তন করে ‘হামিদ নগর’ করা হয়েছে এবং হামিদ নগরে তার নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজ মাঠে নির্মাণ করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি হামিদুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার।