Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় কানাইঘাটের লোভা-মূলাগুল



বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অসংখ্য ছোট বড় নদী বিধৌত অপূর্ব শোভায় শোভিত প্রাচীন জনপদটির নাম কানাইঘাট। সিলেট বিভাগীয় শহর থেকে প্রায় ৫১.২ কিলোমিটার (৩২ মাইল) দূরে উত্তর পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত। সিলেট শহর থেকে কানাইঘাটে আসতে হলে সিলেট-তামাবিল রোড অথবা,জকিগজ্ঞ রোডে কানাইঘাট উপজেলা সদরে আসা যায়। কানাইঘাট বাজার ঘেঁষে প্রবাহিত সুরমা নদীর দু’পারেই দু’টি বাস ষ্টেশন আছে। সীমান্তকে ঘিরে রেখেছে খাসিয়া জৈয়ন্তিয়া পাহাড়। এর পাদদেশে অবস্থিত অসংখ্য টিলা,মণিপুরী টিলা,মিকিরপাড়া,লুহাজুড়ি সহ অসংখ্য টিলার অবস্থান এ উপজেলায়। আবার এসব টিলার মধ্য দিয়ে অসংখ্য নদী বা ছড়া পাহাড় থেকে এসেছে। এর মধ্যে লোভা,নুনগাং,কালিজুড়ি,আপাং,সুরই,সিংগাইর,নাপিতখাল অন্যতম, এগুলি দিয়ে উজান বেয়ে পাহাড়মুখী উপরদিকে উঠলে এক অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবার চোখে ভাসে। এসব আঁকাবাঁকা নদীর দু’পাশে শত শত জাতের গাছপালা,আর বনজফুল,ফলে শোভিত টিলার বন-জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে নৌকায় চড়ে উঠলে কি এক অপরূপ মনোরম দৃশ্য মন কেড়ে নেয়। কানাইঘাট উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লোভা ছড়া চা বাগান,লোভা পাথর কোয়ারী,বালুমহাল,বনায়ন প্রকল্প,রিজার্ভ ফিসারী ও লোভা নদী তীর ঘেঁষা এলাকার নয়নাভিরাম দৃশ্যকে ঘিরে রয়েছে পর্যটন শিল্পের উজ্জল সম্ভাবনা। এই প্রাচীন এলাকাটিতে রয়েছে উপভোগ করার মত বেশ কিছূ দৃশ্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় উঁচু নিচু পাহাড়। পাহাড়ের ঢালে রয়েছে ঝর্ণা লেক। যা দেখলে হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এই এলাকায় রয়েছে সুবিশাল চা বাগান। আর তাতে শত শত শ্রমিক আপন মনে কচি কচি পাতা তুলে নেয়। মূলাগুলের লোভা ছড়া চা বাগানে প্রচুর লিচু,আম,কাঠাল,সুপারী,তেজপাতা,পান,কামরাঙ্গা প্রভৃতি ও জন্মে। ১৯২৫ সালে ইংরেজদের নির্মিত ঝুলন্ত ব্রীজ আছে। আছে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের মহান আন্তত্যাগের স্মৃতি গাঁথা শহীদ মিনার। চা বাগানের পাশ দিয়ে প্রবাহিত পাহাড়িয়া খরস্রোতা লোভা নদী। পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ ও সুন্দর। ভারত সীমান্তের কাছাকাছি লোভা এলাকায় পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌরভ-সম্ভার মানুষকে ভাবিয়ে তুলে । যা লেখার নয় দেখার। উপলব্দি ও উপভোগ করার। সূর্য ডোবার সাথে সাথেই জোনাকী পোকার মতই ভারতের বিজলী বাতিগুলো জ্বলে উঠে। চাঁদনীরাতে নবরূপ যৌবনে ভরে উঠে লোভা নদী। সৌন্দর্যের লীলাভূমি কানাইঘাটের লোভা-মূলাগুল এলাকা সম্পদে ও সমৃদ্ব। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার পাথর কোয়ারী থেকে আহরিত হয়। প্রায় সারা বৎসরই পাথর,বালু আহরিত হয় এখান থেকে। তাছাড়া মজার ব্যাপর হল খাসিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড়ের ঢল নামার সাথে ভারত থেকে যখন কাঠ,বাঁশ নামে তখন নদী তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ জ্বালনি কাঠ সংগ্রহে মহানন্দে নেমে পড়ে। খাসিয়া-জৈয়ন্তিয়া পাহাড় থেকে অতীতে অসংখ্য বানর,শুকর,হাতি,বাঘ ইত্যাদি প্রাণী এখানকার লোকালয়ে নেমে আসত। এখনো শরৎ হেমন্তকালে বাঘ নামে। মূলাগুল,বড়বন্দ,সুরইঘাট,কালিনগর,নিহালপুর, ইত্যাদি পাহাড়ী এলাকার গ্রামগুলোতে বাঘ নামলে লোকজন সুকৌশলে বাঘের অবস্থানের বন,টিলা, ঘিরে জাল দিয়ে বাঘকে আটকে রেখে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে হাজার,হাজার লোক বিভিন্ন জায়গা থেকে বাঘ দেখতে এসে ভীড় জমায়। আনন্দ করে মেলা বসায়। কোন কোন সময ৭/৮ দিন এ মেলা চলে। স্থানীয় লোকজন এ আনন্দ মেলাকে (বাঘ খেওড়) বলে। খাসিয়া-জৈয়ন্তিয়া পাহাড় থেকে যে দু’টি নদীর উৎপত্তি তার নাম লোভা ও সারী। লোভা নদীর পানি অথ্যন্ত স্বচ্ছ। নদীটি খরস্রোতা। ৫/৭ ফুট নিচে অবস্থানরত মাছের চলাফেরা খালি চোখে পরিষ্কার দেখা যায়। নদীর মূখে ভারত সীমানা সংলগ্ন স্থানে বিরাট পাথর কোয়ারী আছে। হাজার হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক নৌকা দিয়ে প্রতিদিন এ কোয়ারী থেকে পাথর আহরণ করে। সারা বছরই কম বেশী পাথর আহরিত হয়। শত শত কার্গো,ট্রলার,ষ্টীমার,ট্রাকযোগে প্রতিনিয়ত এসব পাথর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় যে,প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কানাইঘাটের লোভা-মুলাগুল এলাকায় আজও যাতায়াতের সুষ্টু ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। স্বাধীনতার ৩৯ বছর পরও এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়নি। কানাইঘাট উপজেলা সদর থেকে সুরমা নদী দিয়ে নৌকায় লোভা-মূলাগুল এলাকার লোকজন যাতায়াত করে। এতে দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগে। ইঞ্জিন চালিত নৌকা দিয়ে কানাইঘাট বজার থেকে লোভা-মূলাগুলে(রিজার্ভ করে) ২-৩শত টাকা খরচ পড়ে। সৌন্দর্যের লীলাভূমি কানাইঘাটের লুভা-মূলাগুল এলাকাকে পর্যটন কেন্দ্র রূপে গড়ে তোলার অনুকূল পরিবেশ আছে। এখানের পাথর,টিলা,নদী ইত্যাদি প্রকৃতির সৃষ্ট অপরূপ দৃশ্য দেখার জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকগণ বেড়াতে আসবেন। যদি সত্যিই পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয় এবং আকর্ষণীয় ভ্রমণ স্থান হিসেবে পরিণত করা যায় তাহলে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত অনেক পর্যটন কেন্দ্রের চেয়ে ও অধিকতর আকর্ষণীয় হবে,এ নৈসর্গিক দৃশ্যের ভ্রমণ স্থান কানাইঘাটের লোভা-মূলাগুল।

যে ভাবে আসবেন লোভা-মূলাগুলেঃ
সিলেট বিভাগীয় শহর থেকে প্রায় ৫১.২ কিলোমিটার (৩২ মাইল) দূরে উত্তর পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত কানাইঘাট উপজেলা। সিলেট শহর থেকে কানাইঘাটে আসতে হলে সিলেট-তামাবিল রোড অথবা,জকিগজ্ঞ রোডে কানাইঘাট উপজেলা সদরে আসা যায়। কানাইঘাট বাজার ঘেঁষে প্রবাহিত সুরমা নদীর দু’পারেই দুটি বাস ষ্টেশন আছে।