মাদারীপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম শকুনি লেক । শহরের মাঝখানে বিশাল । এলাকাজুড়ে লেকের অবস্থান । কৃত্রিম এ লেকটি যে কোন দেশ- বিদেশি পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষন করে । নবায়নের প্রয়োজনে এক সময় খনন করে এই লেক তৈরি করা হয় । বর্তমানে এর চার পাশের সৌন্দর্য দেখলে সবার মন কাড়ে । লেকের চার পাশে সারি সারি নারিকেল গাছ ও বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ রয়েছে । যা এর সৌন্দর্য পিপাসু অনেকই দূর-দূরন্ত থেকে এসে প্রতিদিন এই লেকের পাড়ে আড্ডা জমান । সকাল বেলার নির্মল হাওয়া আর বিকেলের হাজার মানুষের পদচারনায় লেকের পাড় হয়ে ওঠে মোহনীয় । শিশু-কিশোর থেকে শুরূ করে বিভিন্ন বয়সী মানুষের ঢল নামে শকুনি লেকে ।
রাত ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত মুখর থাকে লেকের পাড় । ফলে একে ঘিরে এক শ্রেণীর গরিব মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে । ফেরিওয়ালা চটপটিওয়ালা, ছোটদের খেলনা বিক্রেতা, বাদাম, চানাচুর বিক্রেতা সহ বিভিন্ন পেশার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এই শকুনি লেক । এ লেকের সুনাম সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র । বর্তমানে এটি দেখার জন্য জেলার বাইরে থেকেও লোকজন আসছে । কৃত্রিমভাবে এই লেক সৃষ্টি করা হলেও সময়ের ব্যবধানে নিজে নিজেই সেখানে ফুটে উঠছে প্রাকৃতিক চিত্র । মাদারীপুর শহরের মাঝামাঝি শকুনি নামক এলাকায় ২০ একর জমির ওপর চল্লিশ দশকের দিকে লেকটি খনন করা হয় । পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙ্গা-গড়ার খেলায় যখন মাদারীপুর শহরের অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে তখনই ঐতিহাসিক এ শহরকে তৃতীয়বারের মতো রক্ষা করার লক্ষ্যে ১৯৪৩সালে খনন করা হয় । চল্লিশের দশকের এ অঞ্চলে মাটিকাটা শ্রমিকের অভাব থাকায় ২০ একর আয়তনের এই লেক খনন করার জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ প্রসাশন ভারতের বিহার ও উড়িষ্যা অঞ্চল থেকে ২ হাজার শ্রমিক ভাড়া করে আনে । বিপুল সংখ্যক বিদেশী শ্রমিক এক নাগারে কাজ করে প্রায় ৯ মাসে এর খনন কাজ সম্পূর্ণ করে ।
এখনো এটি এ অঞ্চলের দীর্ঘতম লেক হিসেবে পরিচিত । বহিরাগত যে কেউ মাদারীপুর শহরে প্রথম প্রবেশ করেই এই লেকের মনোরম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যান । প্রচন্ড তাপদাহে দূর- দূরান্ত থেকে এসে অনেকেই গা জুড়িয়ে নেন লেকের স্বচ্ছজলে । শীতের বিকেলেও দর্শনার্থীদের প্রচুর ভীড় জমে ওঠে । আশ পাশের অধিবাসীরা অপরিকল্পিত ভাবে বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করায় লেকের পাড় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । প্রতিদিন লেকের চারপাশে মানুষ গোসল করা সহ গরু-ছাগল গোসল করানো নানা দূষনীয় কাজের জন্য লেকের পাড়ের মাটি দ্রুত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। লেকের ঠিকমতো সংরক্ষনের ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই আরও বড় কয়েকটি গাছপাড় ভেঙ্গে লেকের মধ্যে পড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে । এছাড়া ২-৩ বছর ধরে লেকের পূর্বপাড়ে গড়ে ওঠা বাজারের বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা পানিতে পড়ে নষ্টহচ্ছে লেকের পানি এবং পরিবেশ ।
শকুনি লেকের চারপাশে ঘিরে থাকা পিচঢালা পথে ছোট-বড় সবাই প্রতিদিন ভোরে ও সন্ধ্যায় ভ্রমণে বের হন । বর্তমানে লেকটির এই পরিবেশ নিয়ে এলাকাবাসী ক্ষুদ্ধ । তীর সংরক্ষনের ব্যবস্থা সহ চারপাশের রাস্তাটি সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ব্যবহার ও যানবাহন চলাচল সীমিত রেখে স্বাস্থ্য সচেতন ও সৌন্দর্য পিপাসুদের নির্বিঘ্নে চলাচলের ব্যবস্থা করার জন্য কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন মাদারীপুরবাসী ।