নড়াইল জেলার কালিয়ার বিখ্যাত ৮০ মণ ওজনের পিতলের তৈরি রথ অব হেলায় ধ্বংসের মুখে । অযত্ন ও রক্ষনা বেক্ষণেরঅভাবে কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছেদেশের সর্ববৃহৎ এই পিতলের রথ । প্রতিদিন দেশ –বিদেশ থেকে বহু মানুষ আসেন এই রথ দেখতে। পর্যটক ও দর্শনার্থীরা এই রথটি কে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় রথ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। উনবিংশ শতাব্দির গোড়ার দিকে কালিয়ার সেন পরিবার দৃস্টি নন্দন রথতৈরি করেন। তিনি ছিলেন ব্যারিটার । নিজ বাড়ীতে ব্রম্মময়ী আশ্রম ও দেবত্র বাটি নির্মানের উদ্যোগ গ্রহন করেন। ব্রম্মময়ী আশ্রম ও দেবত্র বাটিতে ব্যারিষ্টার ভামিনী রঞ্জন সেন চারটি মন্দির নির্মান করেন। এগুলো হচ্ছে জগন্নাথ দেবেররথ, শিব মন্দির, ব্রম্মময়ী মন্দিও ও নারায়ন মন্দির। পিতল দিয়ে ৮০ মন ওজনের নকশা ও কারুকার্য খচিত একটি নযনাভিরাম রথ তেরি কওে জগন্নাথ দেবের রথ মন্দিরে রাখা হয়। সে সময় সেখানে বিশাল রথ যাত্রা ও মেলা অনুষ্ঠিত হতো । বিরাট উৎসবে টানা হতো রথ। এই রথ এক নজর দেখতে হাজার হাজার মানুষ আসতেন কালিয়ার সেন বাড়িতে। চারদিকে এই রথের নাম ডাক ছড়িয়ে পড়ে। রথ যাত্রার সময় সেন পরিবারের সবাই কালিয়ায় এসে মিলিত হতেন। চারটি চাকার ওপর একটি বেদী , এই বেদিও ওপর পুরো রথটি তৈরি করা হয়েছে দ্বিতল বিশিষ্ট এ রথের প্রথমতলা চতুর্ভুজ আকৃতির। দ্বিতলাটি গম্বুজ আকৃতির। রথের অগ্রভাগে রয়েছে দুটি পিতলের ঘোড়া। ঘোড়া দুটির ঠিক পেচনে রয়েছে রথের সারী। রথের মূল আসনে জগন্নাথ দেব, বলরাম ও শুভদ্রার মুর্তি স্থাপন করা হয়েছে। রথের চতুর্ভূজ আকৃতির বাইরের অংশের কার্নিশ জ্যামিতিক নকশার সারি দিয়ে অলকৃত। এই অংশের সুদৃশ্য ব্যালকনির মধ্যেই রয়েছে হিন্দুদের প্রায় সব দেব- দেবী ও মুনি- ঋষিদের মুর্তি । গম্বুজের ওপরে ছিল মনোরম চুড়া। ৮০মণ ওজনের এই ঐতিহ্যবাহী রথ থেকে সোনার চূড়া ও অসংখ্য দেবদেবীর মুর্তি চুরি হয়ে গেছে । রথের সৌন্দর্যও নষ্ট হয়ে গেছে ।এখন আর এই রথের জৌলুস নেই। ৩০/৩৫ বছর আগে রথের চাকা নষ্ট হয়ে যায় । এর পর থেকে রথ টানা হয় না। রথের বেশ কিছু অংশ মরিচা ধরে ক্ষয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। তারপর ও এর অপুর্ব নির্মান শৈলী দেখতে এখনো মানুষ কালিয়ায় আসেন। আষাঢ় মাসে রথযাত্রা উপলক্ষে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলাটি এখনে বসে। মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয় পূজা। ব্যারিস্টার ভামিনী রঞ্জন সেন নারী শিক্ষা বিস্তার ও কর্মসংস্থান সৃস্টির জন্য ব্রম্ম মযী আশ্রমে মহিলা সমিতি ও ব্রম্মময়ী পাঠশালা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর সেন পরিবারের সবাই ভারত চলে যান। ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত ভারতের বিভিন্নস্থানে কর্মরত সেন পরিবারের সদস্যরা পূজার সময় নিয়মিত কালিয়ায় নিজ বাড়ীতে আসতেন। দুর্গা পূজা ও রথ যাত্রায় মাসব্যাপী চলত উৎসব । শিবমন্দির, ব্রম্মময়ীমন্দির ও নারায়ন মন্দিরের আশপাশ ঝোপ জঙ্গলে ভেসে গেছে। এসব মন্দির ও দিন দিন ধ্বংস হয়ে হচ্ছে । ভামিনী রঞ্জন সেনের বসতবাড়ীতে গড়ে উঠেছে শহীদ আবদুল সালাম কলেজ। ওই কলেজের বেশ কয়েক জন শিক্ষক ভামিনী রঞ্জন সেনের মূল বাস ভবন, মহিলা সমিতি, পাঠাগার ও ব্রম্মময়ী পাঠশালার ভবনে বসবাস করছেন। পর্যটক ও দর্শনার্থীরা এখানে এসে জানতে পারবেন বিখ্যাত রথ ও ব্যারিষ্টার ভামিনী রঞ্জন সেনের পরিবার সম্পর্কে। মন্দিরের পুরোহিত কালীপদ ভট্রাচার্য ৪২ বছর ধওে মন্দিরে পূজা করে আসছেন। আগলে রাখার চেষ্টা করছেন এই সম্পদগুলো। বিনিময়ে কোনো অর্থ তিনি পাচ্ছে না। চুড়ান্তা অবহেলায় ঝোপ-জঙ্গেও মধ্যে নষ্ট হচ্ছে এই পুরাকীর্তি গুলো। জরাজীর্ণ দশার মধ্য দিয়ে আর কত দিন এই মনোরম স্থাপত্য শিল্প টিকেথাকতে পারবে তা নিয়ে স্থানীয়দেও মধ্যে প্রশ্নদেখা দিয়েছে। তারা ব্যারিষ্টার ভামিনী রঞ্জন সেনের জমিদার বাড়ী , পিতলের রথ সহ সকল পুরার্কীতির রক্ষার দাবী জানিয়েছে।
দেশে টিকাদান কর্মসূচিতে নিউমোনিয়ার টিকাও দেওয়া হবে শিশুদের