Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Entertainment Image

স্বর্ণযুগের সেরা ১০ পরিচালক



১৯৫০ থেকে ১৯৭০ দশক পর্যন্ত সময়কে চলচ্চিত্রের জন্য বলা হয় নিউ ওয়েভ যুগ। ক্ল্যাসিক্যাল হলিউড সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ফ্রান্সের কিছু চলচ্চিত্র নির্মাতা কোন ধরনের সাংগঠনিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত না হয়েও সিনেমার ভাষা পরিবর্তন করে দেন। সিনেমার ভাষা, বক্তব্য ও নির্মানের মাধ্যমে সেই সময়ের নিউ ওয়েভ যুগের সকল নির্মাতা ও পরিচালকেরা একে অপরের সাথে যুক্ত ছিলেন। নিউ ওয়েভ একটি জাতীয় চলচ্চিত্র আন্দোলন, যেটার বৈশিষ্ট্য ছিলো সহজ লোকেশনে অনভিজ্ঞ অভিনেতাদের দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী কর্মজীবী এবং গরিব মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক গল্প বলা।

শুধু ফ্রেঞ্চ নয়, সারা ইউরোপের চলচ্চিত্র নির্মাতারা এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়েছিলেন। মজার ব্যাপার হলো- নিউ ওয়েভ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই আধুনিক হলিউড ও জার্মান সিনেমার জন্ম। সেই স্বর্ণযুগের সেরা ১০ পরিচালকের অবদান তুলে ধরা হচ্ছে।

জ্যাক রিভেট
নিউ ওয়েভ যুগের সফলতার মাঝামাঝি সময়ে রেভেত কাহেরস ডু সিনেমার সুচনা করেন। যদিও তিনি তাঁর সহকর্মীদের সাথে উদ্যোগটি নিয়ে উচ্ছ্বাস করেন নি, কিন্তু এই জাতীয় সিনেমা তৈরিতে নিজের সক্ষমতা ও পরিপক্কতার স্বাক্ষর রেখেছেন।
কাহেরস ডু সিনেমা সংগঠনের নেতা হিসেবে রেভেতের নাম পরিচিতি পায়। তবে ১৯৫০ সালের দিকে গ্রুপের অন্য সদস্যদের মতো তিনিও চলচ্চিত্র উন্নয়নের সুযোগ লাভের উদ্দেশ্যে প্যারিসে চলে আসেন। তাঁর সমসাময়িকদের মতো একইভাবে তিনিও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। তবে ১৯৬১ সালে তিনি তাঁর সবচাইতে সফল ছবি নির্মাণ করেন। ছবিটির ইংরেজী নাম ‘প্যারিস বিলংস টু আস’।
এই ছবিটির পর রেভেতি নিউ ওয়েভ আন্দোলনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা যোগ করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি নির্মাণ করেন তাঁর আরেক সফল চলচ্চিত্র ‘নান’।
১৯৭০ সালের শুরুর দিকে নিউ ওয়েভ যুগের ইতি ঘটে। তবে রেভেত তারপরেও চলচ্চিত্র নির্মাণ করে প্রশংসিত হতে থাকেন। দুঃখজনকভাবে নিউ ওয়েভ নির্মাতা হিসেবে তিনি তাঁর সামঞ্জস্যতা ধরে রাখতে পারেন নি।

অ্যালেন রিসনেইস
লেফট ব্যাংক ও কাহেরস ডু সিনেমা সংগঠনের পরিচালকেরা একসাথে কাজ করতেন। রিসনেইস যদি লেফট ব্যাংকের পরিচালকদের নেতা না হতেন, তাঁকে তাহলে একজন সদস্যই বলা যেত। যদি কখনো এই দুই চলচ্চিত্র নির্মাণ সংস্থার একে অপরের সাথে মতভেদ তৈরি হতো, তবে সেটা অবিলম্বেই মিমাংসা করা হতো। রিসনেইস স্বীকার করেন, কাহেরস গ্রুপের সবার সাথে তাঁর পরস্পর সহানুভূতিশীল সম্পর্ক ছিল।
নিউ ওয়েভ প্রতিষ্ঠা পাবার সময় কালেই রিসনেইস এককভাবে একজন সফল পরিচালকে পরিণত হন। এবং প্রথম নিউ ওয়েভ সিনেমা তৈরির তিন বছর আগে তিনি জনপ্রিয় হোলোকাস্ট তথ্যচিত্র ‘নাইট অ্যান্ড ফগ’ (১৯৫৫) পরিচালনা করেন।
যাইহোক, রিসনেইস পরিচালিত প্রথম তিনটি চলচ্চিত্র সব দিক থেকেই নিউ ওয়েভ সিনেমার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাঁর সাফল্যে এই ছবিগুলোই বিশেষ প্রভাব তৈরি করে। বলা বাহুল্য, তাঁর পরিচালিত ‘হিরোশিমা মন আমর’ ছবিটি অস্কার মনোনয়ন পায়।

অ্যাগনেস ভারদা
ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিমান নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা ছিলেন ভারদা। তাঁর এবং লেফট ব্যাংক পরিচালক জ্যাকুয়েস ডেমির প্রেম ও বিয়ের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছিল অনেক নিউ ওয়েভ পরিচালকদের সিনেমায়। এই দম্পতি নিঃসন্দেহে একে অপরকে অনুপ্রেরণা যোগাতেন।
১৯৯০ সালে ভারদার স্বামী ডেমি মারা যায়। প্রয়াত স্বামীর সম্মানে তিনি ১৯৯১ সালে নির্মাণ করেন ‘জ্যাকোট দি নান্তেস’ ছবিটি। সিনেমার কাহিনী ও পরিচালনা দুইদিকই সমান দক্ষতার প্রমাণ রাখে। তবে ভারদা তাঁর স্বামীর মৃত্যুর আগেই চলচ্চিত্র অঙ্গনে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করে নেন।
নিউ ওয়েভ সিনেমায় ভারদার দুটি শ্রেষ্ঠ অবদান হচ্ছে ‘ক্লেও ফ্রম ফাইভ টু সেভেন’ এবং ‘লে বোনহেউর’। তাঁর নির্মিত ছবিগুলো দার্শনিক চিন্তা চেতনার ভিত্তিতে তৈরি। তাঁর ছবির বার্তা, বিশেষ করে নারী সমাজকে কাজে নিয়োজিত করার প্রয়োজনীয়তা এবং সুফলতা নিউ ওয়েভ ছবিতে নিপুণভাবে প্রকাশ পায়।

জ্যাক ডেমি
ডেমির তৈরি ছবি নিউ ওয়েভ জগতের অন্যসব পরিচালকদের মতো ছিলোনা। এর মানে এই নয় যে তিনি ভালো পরিচালকদের একজন ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন সবার চেয়ে সেরা। ডেমি তাঁর চমকপ্রদ চিন্তাশক্তি খেয়ালি প্রেমের গল্পে যোগ করেন। তাঁর অনেক জনপ্রিয় সিনেমার মধ্যে প্রথম শারীর তিনটি ছবি হচ্ছে ‘লোলা’, ‘দ্য আম্ব্রেলা অফ চেরবারগ’ ও ‘দ্য ইয়ং গার্ল অফ রোচফোরট’।
এই নিরমাতার বিশেষত্ব ছিল তাঁর ছবির সুর ও সঙ্গীত। আর এই সুরের পেছনে ছিলেন তাঁর অনেক দিনের সহযোগী মাইকেল লেগ্রান্ড। যার অবদান তাঁর সহকর্মীদের থেকে ডেমিকে আলাদা করে নিউ ওয়েভ সিনেমার অন্য এক আসনে বসায়।
ডেমির সিনেমার সকল প্রেম কাহিনীর তুলনায় তাঁর নিজের জীবনে রোমান্সের ডালা হালকা। প্রেম বলতে শুধুমাত্র চিত্রনির্মাতা ভারদা ছিল তাঁর জীবনে। তবে এটি অনস্বীকার্য যে তাদের দুজনের শৈল্পিক সহযোগীতা ফ্রান্সের চলচ্চিত্র ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো কিছু ছবি নির্মাণের কারণ।

জাঁ পিয়ে ম্যালভো
এই চলচ্চিত্র পরিচালক আমেরিকান উপন্যাসিক হারমান ম্যালভিলের কাছ থেকে ধার করা ছদ্মনাম নিয়ে কাজ করতেন। তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র রুচি এবং জমকালো কল্পনাশক্তির অধিকারী একজন শিল্পী। এক কথায় বলা যায়, তিনি ছিলেন অপরাধ ভিত্তিক কাহিনীর সর্বকালের সেরা পরিচালক। যদিও এটি একান্তই ব্যক্তিগত মতামত, তবে নিউ ওয়েভ ধারার অনেক চলচ্চিত্র পরিচালকই এমন ধারণা পোষণ করেন।
উচ্চবিলাসী সম্ভাবনাময় চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রতিবন্ধকতা ছিল প্রকাশনার খরচ। সেই সময় জিন পিয়ারে তাঁর নিজের স্টুডিওতে নিজেই মানসম্মত ছবি বানাতেন। এর মাধ্যমে তিনি অনেক সমালোচকদের সমালোচনা ত্যাগ করে ছবি নির্মাণে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এই পরিচালক নিউ ওয়েভ চলচ্চিত্রে অবর্ণনীয় অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন।
জিন পিয়ারে অ্যালাইন রেসনাইনের মতো সফলতার স্বাদ পান ১৯৫৮ সালে। ‘বব দ্য গ্যাম্বলার’ ও ‘লেস এনফান্টস টেরিবল’এর মতো ছবিগুলো ইতিপূর্বেই তাঁর খ্যাতিকে দৃঢ় করে এবং এই এই চলচ্চিত্রগুলোই হয়তো তাঁকে ফ্রান্সের ইতিহাসে সেরা পরিচালকদের একজন হিসেবে অমর করে রাখার জন্য যথেষ্ট হতো যদি না তিনি ১৯৬০ দশকে নিজেই নিজেকে অতিক্রম করতেন।
১৯৬২ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তিনি একঝাঁক অপরাধ বিষয়ক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তিনিই নতুন করে এই ধারার সিনেমাকে পরিচিতি দেন এবং সমৃদ্ধ করেন। তিনি এমন অনেক ছবি নির্মাণ করে নিউ ওয়েভের একজন আইকনে পরিণত হন।
জাঁ পিয়েরে মেলভিল ক্রাইমভিত্তিক চলচ্চিত্রকে পুনর্জন্ম দেন। এবং তিনিই তাঁর এই সফল পথে চলায় অনুপ্রাণিত করেন অনেক চলচ্চিত্র নির্মাতাকে।

লুইস মাল
নিউ ওয়েভের মতো সংক্ষিপ্ত ও সীমাবদ্ধ শব্দের একটি সমস্যা হচ্ছে যদি না একজন নির্মাতা নিজেকে এই শব্দের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেন তবে বলা কঠিন হয়ে যায় তিনি নিউ ওয়েভের অন্তর্ভুক্ত কিনা। লুইস মাল খুবই ভিন্ন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি অন্যসব নির্মাতাদের থেকে উল্টো কাজ করেছিলেন। তিনি সরাসরি নিউ ওয়েভ লেবেলটি প্রত্যাখ্যান করেন, এবং তিনি এই ধারার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রধানদের সাথে কোন সম্পর্ক খুঁজে পান নি বলে জানান।
তবু অনেকেই মালের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন এবং কিছু ক্ষেত্রে তাদের সেটি করার অধিকার ছিল। এই পরিচালকের সবসময়ের জন্য বিস্ময়কর ও অনিশ্চিত ক্যারিয়ার ১৯৫৮ সালে রোমাঞ্চকর ও চমৎকারভাবে ধারণকৃত ‘এলিভেটর টু দ্য গেলোস’ ছবির মাধ্যমে শুরু হয়। মাইলস ডেভিস এই ছবিটিকে আশীর্বাদ করেন তাঁর একটি সুর এই ছবিতে প্রদান করে, যা এই ছবিটি দেখার ইচ্ছা জোগানোর জন্য যথেষ্ট। মালে বলেছিলেন তিনি তাঁর বাকি জীবনে কখনোই বাজে ছবি নির্মাণ করবেন না। যার প্রমাণ পাওয়া যায় ৬০ দশকে তাঁর নির্মিত ছবিগুলোর দিকে তাকালে।
মাল তাঁর বেশিরভাগ ছবি তৈরি করেছেন তাঁর ছবির চরিত্রগুলোকে বিশ্লেষণের লক্ষে এবং তা করতে গিয়ে তিনি কিছু চরিত্রের জন্ম দিয়েছেন যা বিশেষভাবে স্মরণীয়। আর যদি তাঁর মতো কোনো পরিচালকের সুন্দর সংলাপ ও দৃশ্যধারনের আসক্তি থাকে, তাহলে তিনি হবেন একজন সিনেমার রাজা। মালের এরপরের বানানো আরও কিছু ছবি সফল হয়, তবে তিনি তাঁর নির্মিত ৬০ দশকের ছবিগুলোর জন্যই স্মরণীয়।

এরিক রোমার
ফ্রান্সের গতিবেগ হারানোর আগ পর্যন্ত খুব বেশি ছবি পরিচালনা করেন নি এরিক রোমার। তবে তিন নিউ ওয়েভ ছবি ভিত্তিক সকল বাঁধা বিপত্তি মোকাবেলা করে ক্যামেরার পেছনে থেকে কাজ করে গেছেন। যদি কেউ তাঁর গুরুত্বের প্রমাণ চান তবে আপনার জানা উচিত প্রাক্তন এক কোহেরস ডু সিনেমার এডিটর ফ্রাঞ্চইস ট্রুফোট এ ব্যপারে কি বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘রোমার আমাদের সবার তুলনায় অনেক পর জনপ্রিয় হইয়েছে, কিন্তু গত ১৫ বছর ধরেই সে আমাদের সবার কাজের পেছনে অবদান রেখে আসছে’।
প্রশ্নাতীতভাবে বলা যায় রোমারের প্রতিটি ছবিতে দার্শনিক ভাব পাওয়া যায়। তাঁর ছবি বানানো ছিল শব্দ, মুখের ভাবভঙ্গি প্রকাশের একটি মাধ্যম। অভিযোগ আছে তাঁর ছবিতে নিউ ওয়েভ ধারার ছোঁয়া কম পাওয়া যায়। কিন্তু যে কয়টি ছবিই তিনি নির্মাণ করেছেন প্রতিটিই অতুলনীয়, এবং অবশ্যই নীতিমালা অনুসারেই তৈরি।
তাঁর কিছু ছবি যেমন ‘সাইন অফ লিও’ (১৯৫৯), ‘দ্য কালেক্টর’ (১৯৬৭) এবং ‘মাই নাইটস অ্যাট মাইউদস’ (১৯৬৯) সব ছবিতেই নীতিমূলক সচেতনীয় বার্তা দেয়া হয়েছে। দর্শকদের নির্দিষ্ট প্রেমের গল্প থেকে বের করে এধরণের ছবি দেখতে ও ভাবতে উৎসাহী করেছেন তিনি। রোমারের পরের কিছু কাজ অন্যরকম আলাদা আকৃতি পায়, যেগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। সবকিছুর উর্ধ্বে রোমার ছিলেন একজন শিক্ষক এবং আপনি যদি তাঁর কাছ থেকে কিছি না শিখে থেকে থাকেন, তবে তাঁর ছবিগুলো আপনাকে কিছু শেখানোর একটি শক্তিশালী মাধ্যম।

ক্লোড চাব্রোল
ক্লোডের নিজের ক্যারিয়ারে খ্যাতি পেয়েছিলেন তাঁর বানানো ছবিগুলোর কারণে। সমালোচকদের কাছে ২০১০ সালে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি প্রশংসনীয় ছিলেন। এইধারার নির্মাতাদের মধ্যে অন্যদের মতো তাঁর কাজগুলোও নিউ ওয়েভের যুগের শীর্ষস্থানে। এই চলচ্চিত্রবোদ্ধা ও নির্মাতা ক্লোড প্রখ্যাত জীবনীকার আলফ্রেড হিচককের শিষ্য ছিলেন। হিচককের নিজের ছবি থেকে অনুপ্রেরণা তাঁর ছবিতে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। তাঁর নির্মিত ‘লে বিউ সারজ’ (১৯৫৮) ছবিটি নিউ ওয়েভ আন্দোলনের দিকটি চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলায় সেই ছবিকে এই ধারাটি বোঝানোর জন্য দেখতে বলা হয়।
ক্লোডের বৈচিত্র্যময় মেধা দেখতে পাওয়া যায় তাঁর নির্মিত ছবিগুলো দেখলে। এটি পরিস্কার যে তিনি কখনো একই ধারায় ছবি নির্মাণ করেন নি। তাঁর ছবির কাহিনিতে নাট্য আবহের সাথে কমেডির সংমিশ্রণ থেকে শুরু করে বিশাল জনসমাবেশ এবং অনেক বড় এলাকা দেখানো হয়েছে। নিউ ওয়েভ ধারায় এমন কিছু প্রথম বারের মতো দেখানো হয়েছিলো। তিনি একজন সম্পূর্ণ বিনোদন দাতা ছিলেন বলে তাকে নির্মাতাদের নির্মাতা বলা হয়ে থাকে আজও।

ফ্রাঞ্চইস ট্রুফোট
এই নির্মাতাকে এক কথায় চিহ্নিত করার উপায় নেই। সেরা নির্দেশকদের মধ্যে ট্রুফোটের নাম থাকবে সবসময়। যারা তাঁর ছবি দেখেছে তাঁরা খুব সহজেই তাঁর জীবন সম্পর্কে ধারণা করতে পারবেন। তাঁর প্রশংসনীয় কাজের জন্য তাকে ১৯৫০ সালে কোহের ডু সিনেমা ম্যাগাজিনে চাকরির সুযোগ দেয়া হয়। সেখান থেকেই তিনি বিশ্ব সিনেমার সবজান্তায় পরিণত হন। একসময় তিনি ফ্রেঞ্চ সিনেমা বাঁচানোর পদক্ষেপ নেন। তাঁর নির্দেশিত অভিষেক ছবি ‘দ্য ৪০০ ব্লোস’ দিয়ে তিনি তা শুরু করেন। এই ছবির মূল চরিত্র দিয়ে তিনি মুলতঃ তাঁর নিজের যৌবনকালের চিত্রই তুলে ধরেছেন।
পাশাপাশি যখন কোন সেরা ছবি নির্মাণ করা হয় তখন সেটিকে বিতর্কিত প্রতীয়মান করা হয়। যেকারণে এই ছবির শিরোনামটিও তেমন বিশ্বাসযোগ্য ব্যপারে পরিনত হয়েছিল। ১৯৫৯ সালে ট্রুফোরট ও লিওরড কান চলচ্চিত্র উৎসবের অকীর্তিত নায়ক ছিলেন। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানটিই এক বছর আগেও এই নির্মাতাকে বহিষ্কৃত ঘোষনা করেছিল। এই নির্মাতা নিউ ওয়েভ আন্দোলনের একজন পরিচিত মুখ ছিলেন। তাঁর প্রথম ছবিটির শেষ দৃশ্য ফরাসী চলচ্চিত্রে এখনও জাদুর কোন আবির্ভাবের মতো ধারণা করা হয়। ১৯৮৪ সালে একজন সফল নির্মাতা হিসেবেই তিনি মারা যান। তিনি হয়তো অল্পবয়সেই পৃথিবী ত্যাগ করেন, তবুও চলচ্চিত্রে অবদানের কারণে তিনি সবার মনে সবসময় বেঁচে থাকবেন।

জাঁ-লুক গদার
এই তালিকায় এই দুজনকে আলাদা করে রাখাটা দুষ্কর। কারণ এই দুজন নির্মাতাই সবসময়েই ইতিহাসের সবচাইতে অনুপ্রেরক, ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং সাহসী হিসেবে পরিচিত। নিউ ওয়েভ আন্দোলনের ফ্রেমে ট্রুফোরট ও গদার দুজনেরই আলাদা বৈশিষ্ট ছিল। ট্রুফোরটের বিশেষত্ব ছিল সিনেমায় তাঁর ভিন্ন কিছু উপহার দেয়া। তিনি সব সময়েই অসাধারণ কিছু তৈরিতে মনোযোগী ছিলেন। ওদিকে গদারের অবদানও অস্বীকার করা যায় না। তিনিও কিছু ‘মাস্টারপিস’ নির্মাণ করেছিলেন। ভিন্নমাত্রায় নির্দেশনা দিয়ে তিনি অন্য মর্যাদায় নিয়ে যান নিউ ওয়েভ আন্দোলনকে।
জাঁ-লুক গদার তাঁর সহকর্মীদের থেকে সবক্ষেত্রেই আলাদা ছিলেন। তিনি ফ্রান্সের বাইরেও তাঁর নির্মাণকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। চলচ্চিত্র নির্মাণে তাঁর আলাদা তালিকা থাকতো যেটি সময়ে সময়ে তাঁর ছবিতে আমরা দেখতে পাই। চিত্রগ্রহণ নির্দেশনায় তাঁর গুরুত্ব কম ছিল না। নিউ ওয়েভ সময়ে জাঁ-লুক গদারের কাছে অফুরন্ত স্বাধীনতা ছিল তাঁর ছবিকে প্রচার করার জন্য। তিনি অসাধারণভাবে অভিনেতাদের প্রাকৃতিক চেহারাটি ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম ছিলেন। এর দ্বারা তিনি দর্শকদের মোহিত করে রাখতেন। নিউ ওয়েভের স্বর্ণযুগের সবচেয়ে চমৎকার সিনেমা নামে পরিচিত ১৯৬০ সালে নির্মিত ‘ব্রেথলেস’। ১৯৬১ সালের ‘ওম্যান ইজ অ্যা ওম্যান’ ছবিটিও সবসময়ের সেরা দৃশ্যায়িত ছবি হিসেবে বিবেচিত। তাঁর ছবিতে রঙের অসাধারণ ব্যবহার থাকতো যা দেখে বাকীরা অনুপ্রেরণা পেতেন। এভাবেই তিনি চলচ্চিত্রে তাঁর মেধার বহিঃপ্রকাশ রেখেছেন।