Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Technology Image

অ্যান্ড্রয়েড এম: নতুন যে সকল ফিচার যুক্ত হয়েছে




গতমাসের শেষের দিকে গুগল প্রকাশ করেছে তাদের নতুন অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন 'অ্যান্ড্রয়েড এম' যার হালনাগাদ হওয়া ফিচার সমূহ নিয়ে একটি ব্লগ লিখেছিলাম 'অ্যান্ড্রয়েড এম: হালনাগাদ হয়েছে যে ফিচারসমূহ'। আজ চলুন, নতুন এই অপারেটিং সিস্টেমের ভার্সনটিতে নতুন সব যুক্ত হওয়া ফিচারগুলো একনজরে দেখে নেয়া যাক।



১। অ্যাপ্লিকেশনের জন্য অটো ব্যাক-আপ এবং রিস্টোর সুবিধা
সম্ভবত এই সুবিধাটিই অ্যান্ড্রয়েডের নতুন এই অপারেটিং সিস্টেম 'অ্যান্ড্রয়েড এম' এর সবচাইতে চমৎকার নতুন সংযোজন হওয়া একটি সুবিধা। আমরা যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকি তাদের মধ্যে বেশির ভাগ ব্যবহারকারিই তাদের অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসগুলোতে বিভিন্ন ধরণের গেম খেলি। আপনার নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে প্রায় সব গেমের ডাটাই হারিয়ে যায় যদি আপনি গেমটি আনইন্সটল করে ফেলেন। তাই পরবর্তীতে যখন আপনি সেই গেমটি নতুন করে আবার আপনার স্মার্টফোনে ইন্সটল করেন তখন পূর্বের ডাটাগুলো ফেরত পাওয়া যায়না। কিছু কিছু গেম ব্যতিক্রম, কেননা এখন অনেক গেমই অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের জন্য ব্যবহার করা ইমেইল আইডিটি ব্যবহার করে গেম প্রোগ্রেস সংরক্ষণ করে থাকে। কিন্তু বাকি গেম গুলোর ক্ষেত্রে ডাটা অর্থাৎ প্রোগ্রেস হারিয়ে যায়। অবশ্য, অ্যাডভান্সড ইউজার বা পাওয়ার ইউজাররা বেশ কিছু পদ্ধতিতে যেকোনো গেমের ডাটাই সংরক্ষণ করতে পারেন তবে তা কিছুটা হলেও কমপ্লেক্স। কিন্তু নতুন এই অপারেটিং সিস্টেমের চমৎকার এই সুবিধাটি খুব সহজেই আপনার জন্য স্বয়ংক্রিয় ভাবে আপনার প্রতিটি অ্যাপলিকেশনের ডাটা এবং সেটিংস আপনার গুগল ড্রাইভের একটি ফাইলের মধ্যে জমা রাখবে এবং সেই ফাইলটির আকার হবে প্রায় ২৫ মেগাবাইট (কিছুটা কম বেশি হতে পারে)।

গুগলের বিবৃতি অনুযায়ী এই ব্যাক-আপ প্রসিডিউর দিনে মাত্র একবার ঘটবে তাও যখন আপনার স্মার্টফোনটি ওয়াইফাই এবং পাওয়ার ক্যাবলে যুক্ত থাকবে এবং অবশ্যই আইডিয়াল অবস্থায় থাকবে। মজার বিষয় হচ্ছে, এই ২৫ মেগাবাইটের ফাইলটি আপনার গুগল ড্রাইভে সংরক্ষিত থাকলেও এটি আপনার গুগল ড্রাইভে থাকা বরাদ্দকৃত অংশ ব্যবহার করবেনা এবং ফাইলটি অবশ্যই এনক্রিপটেড অবস্থায় থাকবে।

এই সুবিধার ফলে আপনি যদি আপনার ডিভাইসটি হারিয়ে ফেলেন বা ডিভাইস থেকে কোন অ্যাপলিকেশন আন-ইন্সটল করে ফেলেন তবে সেই ফাইলটির পূর্বের রেকর্ড আপনার ড্রাইভে জমা থাকবে এবং পরবর্তীতে যখনই আপনি আবার সেই অ্যাপলিকেশনটি আপনার ডিভাইসে ইন্সটল করবেন তখন পূর্বের জমা হয়ে থাকা সেই ডাটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ডিভাইসে জমা হবে। এই সুবিধাটি সাইড-লোডেড অ্যাপ্লিকেশনতো বটেই এমনকি থার্ড-পার্টি অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড করা অ্যাপলিকেশনের ক্ষেত্রেও চমৎকার ভাবে কাজ করতে সক্ষম। এখন থেকে তাই গুগল অ্যাপলিকেশনের বিশেষ করে গেমের প্রোগ্রেস করার ঝামেলাও কমিয়ে দিলো, কি বলেন?



২। নতুন অ্যাপ ড্রয়ার
অ্যান্ড্রয়েড এম অপারেটিং সিস্টেম সমৃদ্ধ একটি ডিভাইস হাতে নেয়ার পর সবচাইতে দ্রুত যে ভিজ্যুয়াল পরিবর্তনটি আপনি দেখতে পাবেন তা হচ্ছে সম্পূর্ণ নতুন অ্যাপ ড্রয়ারটি। পূর্বের মত অ্যাপ ড্রয়ারটিতে আর হরাইজন্টালি স্ক্রলের সুবিধা না রেখে বরং গুগল ভার্টিক্যালি স্ক্রল সুবিধাটি যোগ করেছে। এছাড়াও, পূর্বের অ্যাপ ড্রয়ারটির ব্যাকগ্রাউন্ডে হোম স্ক্রিনের একটি শেড থাকলেও বর্তমানের অ্যাপ ড্রয়ারটিতে আপনি অ্যাপ ড্রয়ারটিকে একটি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের উপরে দেখতে পারবেন। অ্যাপ ড্রয়ারটির সবচাইতে উপরে দেখতে পাবেন রিসেন্টলি সবচাইতে বেশি ব্যবহার করা চারটি অ্যাপলিকেশন এবং অ্যাপ ড্রয়ারের স্ক্রিনের বাম দিকে অ্যালফাবেটিকালি অর্ডার দেখতে পারবেন।



বামের স্ক্রিনশটটি নতুন অ্যাপ ড্রয়ারের এবং ডানের স্ক্রিনশটটি অ্যান্ড্রয়েড এম-এর র‍্যাম ম্যানেজারের।


৩। অ্যান্ড্রয়েড এম র‍্যাম ম্যানেজার
অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনেকেই র‍্যামের ব্যবহার নিয়ে অনেক চিন্তায় থাকেন! অনেকে আবার বেটার র‍্যাম ম্যানেজমেন্টের জন্য থার্ড-পার্টি অ্যাপলিকেশন পর্যন্ত ব্যবহার করে থাকেন যেখানে মজার বিষয় হচ্ছে সেই থার্ড পার্টি র‍্যাম ম্যানেজমেন্ট অ্যাপলিকেশনগুলো মূলত র‍্যাম ম্যানেজ করতে গিয়ে কিছুটা হলেও বাড়তি র‍্যাম রিসোর্স ব্যবহার করে থাকে। যাই হোক, গুগল তার ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় রেখেই হয়তো অ্যান্ড্রয়েড এম অপারেটিং সিস্টেমে সংযোজন করেছে নতুন র‍্যাম ম্যানেজারের সুবিধা। গুগলের মতে নতুন এই র‍্যাম ম্যানেজার একজন ব্যবহারকারীকে অ্যাপলিকেশনের সর্বোচ্চ এবং গড় র‍্যাম ব্যবহারের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে তার ডিভাইসের র্যা ম সম্পর্কে আরও বেশি অ্যাকুরেট এবং যথেষ্ট তথ্য প্রদান করবে।

নতুন র‍্যাম ম্যানেজমেন্টের এই মেন্যুটির জন্য আপনাকে নেভিগেট করতে হবে, Settings > Apps > Options (three dots button) > Advanced > Memory-তে। যদিও এটা সরাসরি সহজেই নেভিগেট করা যায়না তবুও এই পেজটি থেকেই আপনি আপনার ডিভাইসের র‍্যাম রিসোর্স সম্পর্কে চমৎকার ধারণা পেয়ে যাবেন।

নতুন এই র‍্যাম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম একজন ব্যবহারকারীকে তার ডিভাইসের প্রতিটি অ্যাপলিকেশনের দ্বারা ব্যবহার করা র‍্যাম রিসোর্সের পরিমাণ থেকে শুরু করে কতক্ষণ পর্যন্ত তা ব্যাকগ্রাউন্ডে রান করছে, এই সমস্ত তথ্য প্রদান করতে পারবে আর এর ফলে একজন ব্যবহারকারী সহজেই বুঝতে পারবেন যে কোন অ্যাপলিকেশনটি র‍্যাম বেশি ব্যবহার করছে এবং এতে করে সে র‍্যাম রিসোর্সের সাথে সাথে কিছুটা হলেও ব্যাটারি লাইফও সংরক্ষণ করতে পারবে।
অ্যান্ড্রয়েড এম অপারেটিং সিস্টেমের নতুন এই র‍্যাম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম পেজের উপরেই একটি সিম্পল বার দেখতে পারবেন যেখানে একটি ডিভাইসের কারেন্ট পারফর্মেন্স সম্পর্কে লেখা থাকবে। যদি এটি বলে 'গুড পারফর্মেন্স' তবে স্বাভাবিক ভাবেই আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার ব্যবহৃত অ্যাপলিকেশনগুলো এফিসিয়েন্ট কি না।



৪। অ্যাডোপ্টেবল স্টোরেজ ডিভাইসেস
আপনার যারা নেক্সাস ডিভাইসগুলো ব্যবহার করেছেন তারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে ডিভাইসগুলোতে এক্সটারনাল স্টোরেজের সুবিধা দেয়া ছিলোনা, কেননা গুগল তাদের ডিভাইসগুলোতে এক্সটারনাল স্টোরেজের ফিচারটি বাদ রাখতে চেয়েছিল তবে অ্যান্ড্রয়েড এম - অপারেটিং সিস্টেমটিতে সম্ভবত এই সুবিধাটি নতুন ভাবে যুক্ত করতে যাচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড।
অ্যাডোপ্টেবল স্টোরেজ ডিভাইস সুবিধাটি হচ্ছে গুগলের নতুন স্টোরেজ ফিচার যা মূলত একটি এক্সটারনাল স্টোরেজ সোর্সকে (যেমন ধরুন, এসডি কার্ড বা ইউএসবি ড্রাইভ) এমনভাবে ফরম্যাট করে যেন সেটি স্মার্টফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজ স্পেসের মত করেই ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ, এই অ্যাডোপ্টেবল স্টোরেজ ডিভাইসগুলোতেও আপনি খুব সহজেই পার্সোনাল ডাটা বা অ্যাপ ডাটা মুভ করতে পারবেন।



৫। ডার্ক থিম
গুগল এর নতুন এই অপারেটিং সিস্টেমটিতে যোগ করেছে ডার্ক থিম নামক একটি সুবিধা যা ব্যবহারের ফলে আপনার ডিভাইসে মেন্যু ব্যাকগ্রাউন্ডটি সাদা শেড এর পরিবর্তে ডার্ক গ্রে রঙে পরিবর্তিত হবে। আপাতত এই থিমটি শুধুমাত্র সেটিংস মেন্যুতেই কাজ করে এমনকি অ্যাপ ড্রয়ারেও এই সুবিধাটি আপনি ব্যবহার করতে পারবেন না, তবে ভবিষ্যতে এর পরিবর্তন হলেও হতে পারে।



ডার্ক থিম সুবিধাটি ব্যবহার করার জন্য আপনাকে নেভিগেট করতে হবে Settings > Developer Options লোকেশনটিতে। মনে রাখবেন, এই অপশনটি প্রথমে অ্যাবাউট পেজে থাকা ডিভাইস বিল্ড নাম্বারের উপর ক্রমাগত ৭ বার ট্যাপ করে প্রথমে এনাবল করে নিতে হবে।



৬। গুগল নাও
গুগল নাও সুবিধাটিকে আরও ইম্প্রুভড ফর্মে অ্যান্ড্রয়েড এম অপারেটিং সিস্টেমে তুলে ধরা হয়েছে। এই ইমপ্রুভমেন্ট মূলত ভিত্তি পেয়েছে তিনটি বিষয়ের উপর ফোকাস রেখে, যথা: আলাদা আলাদা কনটেক্সটস বোঝার ক্ষমতা, ব্যবহারকারীর সেবায় আরও অ্যাকুরেট উত্তর এবং স্মার্টনেস! হ্যাঁ পাঠকবৃন্দ, আগের সেই গুগল নাও কিন্তু এখন অনেক বেশি স্মার্ট।
গুগল নাও - এর Context awerness সুবিধাটি বর্তমানে ১০০ মিলিয়নেরও উপরে আলাদা আলাদা জায়গা নির্ণয় করতে সক্ষম তাই এখন যদি আপনি গুগল নাওকে প্রশ্ন করেন যে 'হাও ফার ইই ইট টু গো দেয়ার?' তাহলে এটি খুব স্মার্টলি আপনার সেই স্থানটিকে মার্ক করে আপনাকে সঠিক নির্দেশনা দিতে সক্ষম হবে। এই অ্যাওয়ারনেস মূলত কাজ করে গুগলের নলেজ গ্রাফের উপর ভিত্তি করে যা এক বিলিয়নের মত আলাদা আলাদা এনটিটি বুঝতে সক্ষম, তা স্পোর্টস টিম থেকে গ্যাস স্টেশন হোক বা টিভি শো থেকে কোন মজাদার খাবারের রেসিপি! তাহলে আপনারাই বলুন, ভালোই স্মার্ট এখনকার এই গুগল নাও - নয় কি?

এছাড়াও গুগল নাও একটি নতুন প্রোগ্রাম যুক্ত করেছে এবং তা হচ্ছে 'নাও অন ট্যাপ' যা ১০০টিরও বেশি জনপ্রিয় অ্যাপলিকেশনের ক্ষেত্রে কাজ করবে। এই প্রোগ্রামটি আপনাকে যে কোন সময় কোন প্রকার অ্যাপলিকেশন থেকে বের হয়ে যাওয়া ছাড়াই আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আপনাকে সাহায্য করবে। যেমন ধরুন, আপনি স্পটিফাই ব্যবহার করতে করতে জিজ্ঞেস করলেন, 'Ok Google, what is her real name?' সাথে সাথে নাও অন ট্যাপ প্রোগ্রামটি বুঝতে পারবে যে আপনি যে মিউজিকটি শুনছেন তার সিঙ্গারের ব্যাপারে জানতে আগ্রহী এবং সেটি তখনই আপনাকে সেই শিল্পীর তথ্য আপনাকে প্রদর্শন করবে।



৭। গুগল ফটোস
গুগল তাদের নতুন এই অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড এম-এ প্রকাশ করেছে নতুন গুগল ফটো সার্ভিস ফিচারটি। এই ফিচারটি পূর্বে গুগল+ অ্যাপলিকেশনের একটি অংশ থাকলেও এখন তা আলাদা একটি স্ট্যান্ড অ্যালোন ফটো এবং ভিডিও স্টোরেজ এবং শেয়ারিং সার্ভিসে রূপান্তরিত হয়েছে যা ১৬ মেগাপিক্সেল আকারের ছবি এবং ১০৮০ পিক্সেল আকারের ভিডিওর ক্ষেত্রে আনলিমিটেড ফ্রি স্টোরেজ প্রোভাইড করে থাকে।

গুগলের এই নতুন সুবিধা গুগল ফটো সার্ভিস হাই-কোয়ালিটি ইমেজ এবং ভিডিওর কমপ্রেসড ভার্সন সংরক্ষণ করে রাখে কিন্তু সেগুলো অবশ্যই আপনার স্মার্টফোনে জমা থাকেনা। ফলে, আপনার সংরক্ষণে যত ছবিই থাকুক না কেন সেগুলো আপনি স্ক্রল করতে পারবেন কোন রকম ল্যাগ ছাড়াই!

গুগল ফটো সার্ভিস শক্তিশালী সার্চ সার্ভিস প্রদানও দিয়ে থাকে। আপনি ইচ্ছা করলে পিপল, প্লেস, কোন একটা জিনিষ বা টাইপ এর মাধ্যমে আপনার প্রয়োজনীয় ফাইলটি সহজেই খুঁজে নিতে পারবেন। এছাড়াও এই অ্যাপলিকেশনটির মাধ্যমে ছবি শেয়ার করাও খুবই সহজ কেননা এর ফলে কোন কন্টাক্টও থাকতে হবেনা আপনার ডিরেক্টরিতে! আপনি শুধু লিংক শেয়ার করবেন এবং অন্যজন তা ক্রমের মাধ্যমে দেখে নেবে।