Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Sports Image

সৌরভে সুরভিত টাইগার ক্রিকেটাঙ্গন



ব্যাটিং গডের দিক থেকে হিসেব করলে দুনিয়া কাঁপানে অনেক নামীদামী তারকাই তার পিছনে চলে যায়। কিন্তু সে সময়টা এখনো আসেনি এই ক্রিকেটারের জন্য। সবে তো ক্যারিয়ারের শুরু হয়েছে মাত্র। তবে ২২ গজের ঐ ক্যানভাসে ব্যাট হাতে শিল্পের শৈল্পিক প্রদর্শনীটা ভালোই দেখাচ্ছেন।

টেস্ট ক্রিকেটে টেকনিক আর টেম্পারমেন্ট সমৃদ্ধ ব্যাটসম্যানের ঘাটতি প্রথম থেকেই ছিল টাইগারদের। হাবিবুল বাশার পরবর্তি সময়ে হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র আলো ছড়িয়েছেন। তবে তার আলোটাকে আলো না বলে আলোর ঝলকানিই বলাটাই শ্রেয়।

বলছিলাম মমিনুল হক সৌরভের কথা। ২০১৩’র ০৮ মার্চ লংকানদের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয়েছিল তার। অভিষেক সিরিজেই আলো ছড়িয়েছিলেন। কিন্তু “Morning shows the Day” প্রবাদটার কার্যকারিতা ক্রিকেটের ক্ষেত্রে প্রমানিত নয় বলে সন্দেহটা থেকেই গেছিল।

mominul, bspnবাংলাদেশের টেস্ট খেলার সুযোগটা কম থাকে বলে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ১২ টির বেশি ম্যাচ খেলা হয়ে উঠেনি। যেই আলো ছড়িয়েছিলেন শুরুতে সে আলোর ঝলকানিটা কমতে দেননি বিন্দুমাত্রও।বরং মাঝেমধ্যে তার ব্যাটের তীব্র আলোর ঝলকানিতে প্রতিপক্ষের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে।

আলো-ছায়ার সমীকরণ ছেড়ে ক্রিকেটের মাঠেই ফিরা যাক তাহলে।

১২ টি টেস্ট খেলা মমিনুল ২৩ ইনিংসে ৬৩ গড়ে করেছেন ১১৯৮ রান। ছোট এই ক্যারিয়ারে ইতোমধ্যেই করে ফেলেছেন ৪ টি ফিফটি ও ৭ টি অর্ধশত রান। সাথে যোগ করুন পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টের প্রথম দিনের ৮০ রানের অনবদ্য ইনিংসটি। কমপক্ষে ১০ টেস্ট খেলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ৯৯.৯৪ ব্যাটিং গড় নিয়ে তার উপরে আছেন কেবল স্যার ডন ব্র্যাডম্যান। প্রথম ১৩ টেস্টে ১২ টি পঞ্চোশোর্ধ ইনিংস নিয়ে মার্ক টেলর আর গাভাস্কারের পরে তৃতীয় স্থানে।

ব্যাট হাতে মমিনুল অনেক শান্ত। আজেবাজে শট খেলেন না একেবারেই। একেবারে ক্রিকেটের ব্যাকরণ থেকে শটগুলো যেন ঢেলে দেন ওই ২২ গজে। তবে আপনি যদি মমিনুলকে রক্ষনাত্মক খেলোয়াড় ভাবেন তাহলে ভুল করবেন। কারন ব্যাট হাতে যেমন ঠান্ডা মাথায় ব্যাট করেন ঠিক তেমনি ভাবে বোলারদের উপর চড়াও হওয়ার অভ্যাসটাও রপ্ত করেছেন এই লিটল মাস্টার।

হাতে আছে স্ট্রোকের ফুলঝুরি। পেস-স্পীনে সমান দক্ষ এই ব্যাটসম্যান উইকেটের চারপাশেই সমান শক্তিশালী। তবে লেট স্কয়ার কাট আর অন সাইডে পুল শটেই তার ব্যাট থেকে অধিক রান আসে।

ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি অনুরাগী এই ব্যাটসম্যান অনেক পরিশ্রমী। উচ্চতা কিছুটা কম হওয়ায় বুক বরাবর বাউন্সি বলে তার কিছুটা দুর্বলতা ছিল, কিন্তু সে সময়টাতে নেটে ঘন্টার পর ঘন্টা অনুশীলন করে গেছেন। ফলাফল কিউই ক্যাপ্টেন ম্যাককুলাম ব্যাটের কাছে ছ’জন ফিল্ডার রেখে বাউন্সার দিয়েও টলাতে পারেননি। উল্টো উপহার দিয়েছেন ১৮১ ও ১২৬* রানের দুটি অনবদ্য সেঞ্চুরি।

ব্যাটসম্যান হিসেবে যতই রুদ্রমূর্তি ধারন করেন না কেন মাঠের বাইরে মমিনুল কিন্তু অত্যন্ত বিনয়ী। নিজেকে রাখতে চান প্রচারের বাইরেই। তাকে লিটল মাস্টার বলা হলে অত্যন্ত বিনয়ের সাথেই এড়িয়ে যান। মাঠের বাইরে তাকে দেখলে বোঝাই যাবেনা তিনিই কিছুক্ষণ আগে বোলারদের ঠান্ডা মাথায় বারবার সীমানা ছাড়া করেছেন।

টেস্ট ক্রিকেটকে বলা হয় ক্রিকেটের রাজা। যেখানে টিকে থাকতে হলে যোগ্যতা দিয়েই থাকতে হয়। সেই হিসেবে মমিনুল তার যোগ্যতার দিক থেকে শতভাগ সফল। সবে ক্যারিয়ার শুরু করেছেন, সামনে পড়ে রয়েছে অফুরন্ত সময়। ভবিষ্যতের সময়টাকে উজ্জ্বল করার দায়িত্বটা তাকেই নিতে হবে।

এদেশের কোটি ক্রিকেট ভক্তের আশা সৌরভ তার ব্যাটের সৌরভে সুরভিত করবে আমাদের ক্রিকেট আঙ্গিনা। আর করবেই বা না কেন? করলে তো আর ক্ষতি নেই।