Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

ঢাকার প্রথম মসজিদ



মানুষের জীবনে ব্যস্ততার কোনো শেষ নেই। শহর কিংবা গ্রাম সব জায়গাতে একই অবস্থা। মানুষ ছুটছে তো ছুটছেই। বেঁচে থাকার এই ইঁদুর দৌড়ে টিকতে হবে, সেটাই হয়তো মুখ্য বিষয়। তবে মাঝে মধ্যে ক্লান্ত হয়ে মনটা একটু বিশ্রাম চাইতেই পারে। হয়তো ব্যাকুল হয়ে ওঠে লোকালয় ছেড়ে অনেক দূরে কোথাও ছুটে যেতে। তাই তো ভ্রমণ শব্দটি শুনলেই চেহারায় ফুটে ওঠে চওড়া হাসি, চকচক করে ওঠে ওই চোখজোড়া। সচরাচর আমরা ভ্রমণ বলতে দূরে কোথাও যাওয়া কিংবা ঘুরে বেড়ানোকে বুঝি। তবে মানুষ নিজেদের মনের টানে ভ্রমণকে করেছে বৈচিত্র্যময়। সেটা হতে পারে কাছে কিংবা দূরে, নিরিবিলি অথবা রোমাঞ্চকর। অনেক ক্ষেত্রে এমনও হয় যে, বাড়ির কাছে দেখার মতো বা জানার মতো এমন অনেক কিছুই রয়েছে। তবু আমরা ছুটে যাই দূর অজানায়। তাই কাছের জায়গাগুলো দেখতে বা সেটা সম্পর্কে জানতে, কেবল ইচ্ছা থাকলেই হল। আর কিছুর প্রয়োজন নেই। অনেকে আবার ঘুরে ঘুরে দেখে থাকে বিভিন্ন মসজিদ।

তবে ভ্রমণপিপাসু মন, যদি ঢাকার ইতিহাসের প্রথম মসজিদটি একটু ঘুরে দেখতে চায় তাহলে বোধহয় মন্দ হয় না। তাই সোজা চলে যাওয়া যাক পুরনো ঢাকার নারিন্দা এলাকায়। কারণ, সেখানে প্রায় ৫৫৫ বছরের ইতিহাস নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিনত্ বিবির মসজিদ, যাকে ঢাকার প্রথম মসজিদ বলা হয়। ১৪৫৬ সালে, অর্থাৎ বাংলার সুলতান নাসির উদ্দিন মাহমুদের আমলে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। সে সময় ধোলাইখাল বয়ে গিয়ে বুড়িগঙ্গায় মিশত। আর বুড়িগঙ্গা মিশত শীতলক্ষ্যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিল নদীনির্ভর। তাই পারস্য উপমহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য সওদাগরের মতো আরাকান আলীও এই অঞ্চলে বাণিজ্য করতে আসেন। মেয়ে বিনত্ বিবিকে নিয়ে বসবাস করতে লাগলেন স্থায়ীভাবে। এ সময় নামাজ পড়তে অসুবিধা হয় বলে তিনি এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। তার কিছুদিন পরই বিনত্ বিবি আকস্মিক মারা যান। ফলে তাকে মসজিদের পাশেই দাফন করা হয়। ঠিক তার ছয় মাস পরে আরাকান আলীও মারা যান। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকেও একই জায়গায়, অর্থাত্ মেয়ের কবরের পাশেই সমাধিস্থ করা হয়। সেই থেকে এই মসজিদটি সবার কাছে বিনত্ বিবির মসজিদ নামেই পরিচিতি পায়।



এখন কালের বিবর্তনে সবই বদলেছে। নারিন্দা এলাকাটিও এর ব্যতিক্রম নয়। চারপাশের দালানগলো চোখের দৃষ্টিকে করেছে সীমাবদ্ধ। মসজিদের চারপাশে কিছু লেদ মেশিনের কারখানা গড়ে উঠেছে। ভোজনবিলাসীদের জন্য রয়েছে বেশকিছু নামিদামি রেস্তোরাঁ। তবে মসজিদের পুরনো দালানটি এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। দেয়ালের কালো পাথরটিতে, ফার্সি ভাষায় লেখা রয়েছে মসজিদটির ইতিহাস। বিনত্ বিবির মাজারটিও ঠিক তেমনি আছে। তবে আরও বড় করে মসজিদটি নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এলাকাবাসী। ইতোমধ্যে অনেক কাজ শেষও হয়ে গিয়েছে।
তবে যাই হোক, অনেক প্রশ্ন কিন্তু রয়েই গেল। এই যেমন, বিনত্ বিবির সমাধিস্থলে মাজার কবে তৈরি করা হল? কে পুরনো দালানটি রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্বে আছেন? নতুন দালানগুলোই বা কতটা সুন্দর করা হয়েছে? সব মিলিয়ে বর্তমানে কী অবস্থায় আছে ঢাকার সর্বপ্রথম মসজিদটি? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না হয় একবার নিজ চোখে দেখেই জানা যাক। প্রতিদিন বিদেশি পর্যটক এখানে এসে ভিড় জমায়। ঢাকার প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে আমরা কতটুকুই বা জানি, তাই এবার ভ্রমণ করা যাক একটু ভিন্নভাবে। ঘুরে বেড়ানো যাক আনাচে কানাচে। নতুন করে আরও একবার দেখা যাক নিজের চারপাশটাকে। কী জানি, চলতে ফিরতে দেখা চিরচেনা জায়গাটিই হয়তো সাক্ষ্য দিচ্ছে অজানা কোনো ইতিহাসের!