Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

এই বর্ষায় মেঘেদের দেশে


বৃষ্টির সময় প্রকৃতি যেন তার সবটুকু রূপ ঢেলে দিয়েছে বান্দরবানে। এই সময় পাহাড়ের এই সবুজ গালিচার ওপর আপনার আগমনে যোগ হবে ভিন্ন মাত্রা। বান্দরবানের রিসোর্টগুলোর কোনো একটায় বসে দূর পাহাড়ে ঝুম বৃষ্টি দেখে মনে ঘোর লেগে যাবে সত্যি। আর তাই মেঘের ছোঁয়া পাওয়ার আশায় এই বর্ষা মৌসুমেও বান্দরবানের পাহাড়ে পর্যটকের ঢল নামে।

বর্ষা এলেই বান্দরবানের উঁচু পাহাড়গুলোকে সারা ক্ষণই ছুঁয়ে যায় জমাট বাঁধা মেঘের সারি। দেখে মনে হয় মেঘ আর পাহাড় একে অপরের সঙ্গে নিজ ভাষায় সুখ-দুঃখের যেন গল্প করছে। বান্দরবানের নীলাচল, নীলগিরি, চিম্বুক, বগা লেক, দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং, তাজিংডংসহ বিভিন্ন স্পটে দাঁড়িয়ে বর্ষায় মেঘের স্পর্শ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও বান্দরবান থেকে থানচি পর্যন্ত সড়ক দিয়ে চলাচল করলেও মেঘের দেখা মেলে। নীলগিরি কিংবা চিম্বুকে দাঁড়ালে মেঘ যে-কাউকে আপনা থেকেই ছুঁয়ে যাবে।
এই বর্ষায় এক ভিন্ন রূপেই দেখা যায় এ পর্যটন শহরকে। আমাদের দেশের ভ্রমণ পিয়াসুরা ভ্রমণের জন্য শীত মৌসুমকে বেছে নিলেও হয়তো অনেকেই জানেন না বৃষ্টির সময় পাহাড়ঘেরা জেলাটি যেন একটি সবুজ কার্পেটের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। যেদিকে দুচোখ যাবে সবুজে সবুজে বর্ণিল এক নতুন সাজ ধরা দেবে আপনার কাছে।

পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে রয়েছে অসংখ্য পর্যটন স্পট। ভরা মৌসুমে এখানে বেড়াতে এলে অনেক কিছুর স্বাদ অপূর্ণ থেকে যায়। বর্ষায় কোলাহলমুক্ত পরিবেশে বান্দরবানের সৌন্দর্য উপভোগ করা অনেকটা সহজ।
শহরের অদূরে মেঘলায় রয়েছে ঝুলন্ত সেতু, মিনি সাফারি পার্ক, শিশু পার্ক, প্রাকৃতিক লেক, চিড়িয়াখানা, চা বাগানসহ পর্যটকদের মন ভোলানো সব আয়োজন। এ ছাড়া শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে নীলাচল, যেখানে পাহাড়ের সঙ্গে আকাশ মিতালি গড়েছে। দেশি-বিদেশি যে কোনো পর্যটক স্পটটিতে গিয়ে মুগ্ধ হতে বাধ্য। বান্দরবানের আরেকটি দর্শনীয় স্থান নীলগিরি। বান্দরবান শহর থেকে নীলগিরির দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার। এর ২ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতায় না উঠলে বান্দরবান ভ্রমণের মূল আনন্দই অধরা থেকে যাবে। বর্ষা মৌসুমে এর পাশ দিয়ে ভেসে যাওয়া মেঘ দেখে মনে হয় মেঘের স্বর্গরাজ্য। মেঘের হালকা হিম ছোঁয়া মেঘ ছোঁয়ার অনুভূতি এনে দেয় মনে। ভূমি থেকে নীলগিরির উচ্চতা ৩ হাজার ফুট। উচ্চতার কারণে বর্ষায় বান্দরবান বেড়ানোর সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা এই নীলগিরি। এর চারপাশে মেঘেরা খেলা করে। যারা প্রকৃতির এই খেলা খুব কাছে থেকে দেখতে চান তারা একটা রাত থেকে যেতে পারেন সেনাবাহিনী পরিচালিত কটেজে। এর পাশে খাবারের জন্য রয়েছে ভালো মানের রেস্টুরেন্ট। এখানে বসে পেট পুরে খেতে খেতে ডানে-বাঁয়ে চোখ বোলালে দূর-বহু দূরে দেখতে পাবেন কেওক্রাডং পাহাড়, পাহাড় চূড়ার বগা লেক ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর। দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বিজয়, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডংসহ অসংখ্য পাহাড় রুমা উপজেলা অবস্থিত। আরও রয়েছে বাংলার দার্জিলিংখ্যাত চিম্বুক পাহাড়, যেখানে অনায়াসে মেঘের ছোঁয়া পাওয়া যায়। রিজুক ঝরনা নিজস্ব গতিতে সব মৌসুমেই থাকে সচল। শহরের অদূরে শৈলপ্রপাতের স্বচ্ছ পানি বয়ে চলছে অবিরাম ধারায়। এ ছাড়াও শহরের ৪ কিলোমিটার দূরে বালাঘটা এলাকায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের স্বর্ণমন্দির জেলার পর্যটনের ক্ষেত্রে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। এই জেলায় মারমা, ত্রিপুরা, মুরং, বম, তঞ্চঙ্গ্যা, খুমি, খেয়াং, পাঙ্খো, চাকমা, চাক, লুসাইসহ ১৩টি আদিবাসী সম্প্রদায় বসবাস করে। দেশের অন্য কোনো জেলায় এত আদিবাসীর বসত নেই। আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় জীবনচিত্র যে কারও মনকে উত্ফুল্ল করে।

২৬ কিলোমিটার দূরে রয়েছে বাংলার দার্জিলিংখ্যাত চিম্বুক পাহাড়। ৩ হাজার ৫০০ ফুট উঁচু এ পাহাড়টিতে না উঠলে বান্দরবান ভ্রমণের মূল আনন্দই অধরা থেকে যাবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা ভারতের দার্জিলিংয়ে বেড়াতে যান। অথচ পর্যাপ্ত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা এবং জেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো আরও উন্নত করা গেলে আমাদের বান্দরবানের সৌন্দর্য ভারতের দার্জিলিংকেও হার মানাবে। এবার নিশ্চয় মন চাইছে মেঘের সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে। তবে আর দেরি কেন, জীবনের ছক থেকে বেরিয়ে হারিয়ে যেতে পারেন নীলাচলের মেঘে ঢাকা পাহাড়ে, মেঘলা লেকের স্বচ্ছ জলে, ভাসাতে পারেন ডিঙি নৌকা অথবা ঘুরে আসতে পারেন চিম্বুক পাহাড়ের আদিবাসীদের গ্রামে।
যাতায়াত এবং পথখরচা
ঢাকা থেকে বান্দরবান চলে যাবেন রাতের বাসে, ভাড়া ৪৫০ টাকা। বান্দরবানের পথে ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে শ্যামলী, সৌদিয়া, ডলফিন পরিবহনের কয়েকটি গাড়ি রাতে ছেড়ে যায়।
বেবিস্ট্যান্ড থেকে মেঘলার যাওয়া-আসার ভাড়া ২০০ টাকা।
রাজবাড়ি হয়ে উপজাতি জাদুঘর থেকে কেয়াংঘর পর্যন্ত রিকশা ভাড়া ২৫ টাকা।
কেয়াংঘর থেকে হাসপাতালের সামনের ব্রিজ রিকশা ভাড়া ১০-১৫ টাকা।
বেবিস্ট্যান্ড থেকে স্বর্ণমন্দিরে যাওয়া-আসার ভাড়া ১৫০-২০০টাকা। হোটেল ভাড়া ৪০০-৫০০ টাকা।

ভ্রমণ সংস্থায় যোগাযোগ
রিভার অ্যান্ড গ্রিন : ফোন- ৮৮২৬৭৫৯।
পেট্রো অ্যান্ড এভিয়েশন : ফোন- ০১৭৩০০৪৩৬১৯।
বেঙ্গল ট্যুর : ফোন- ৮৮৫৭৪২৪।
জার্নি প্লাস : ফোন- ৯৬৬০২৩৪
ঠান্ডা মাথার টারান্টিনো