Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Sports Image

একজন অস্ট্রেলীয় ভদ্রলোক



পুরো নাম এ্যাডাম ক্রেইগ গিলক্রিস্ট। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের অন্যতম ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর যাকে ক্রিকেট বিশ্বে ভক্তরা তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিং ও উইকেটের পিছনে অসাধারণ নৈপুন্যের কারণেই চেনে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে উইকেট রক্ষণে রেকর্ড করা এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের একহিসেবে সফলতার কমতি নেই।

১৯৭১ সালের ১৪ই নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের বেলিনজেনে জন্মগ্রহণ করেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের এই কিংবদন্তি। তাঁকে গিলি এবং চার্চ এই দুটি নিকনেমেও ডাকা হত শৈশবে। গিলক্রিস্টের শৈশব কাটে নিউ সাউথ ওয়েলসের ডোরিগো শহরে যেখানে তিনি তাঁর পরিবারের সাথে বাস করতেন। তিনি তাঁর স্কুল ডেনিলিকুইন সাউথ পাবলিক স্কুলের হয়ে খেলতেন। এসময় তিনি ব্রাইয়ান টেবার শিল্ড পুরস্কার জেতেন। তিনি ১৩ বছর বয়সে তাঁর পরিবারের সাথে লিসমোরে চলে আসেন এবং সেখানে কাডিনা হাই স্কুল ক্রিকেট টিমের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন ।

গিলক্রিস্ট তাঁর হাই স্কুলের সহপাঠি ম্যালিন্ডাকে বিয়ে করেন। ২টি পুত্র সন্তান ও একটি কন্যা সন্তান রয়েছে এই দম্পতির।

১৯৯২-৯৩ মৌসুমে নিউ সাউথ ওয়েলস দলে খেলার মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিষেক হয় গিলক্রিস্টের। যদিও প্রথম মৌসুমে তিনি শুধুমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলেছিলেন নিউ সাউথ ওয়েলসে। গিলক্রিস্টের অভিষেকের মৌসুমেই নিউ সাউথ ওয়েলস শেফিল্ড শিল্ড কাপ জেতে। যদিও এর পরের মৌসুমে দলে জায়গা পেতে বেশ বেগ পেতে হয় গিলক্রিস্টকে। এসময় তিনি মাত্র তিনটি ঘরোয়া ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ পান।



১৯৯৪ সালে গিলক্রিস্ট নিউ সাউথ ওয়েলস দল ছেড়ে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার দল ওয়েস্টার্ন ওয়ারিয়র্সে যোগ দেন। ওয়ারিয়র্সের হয়ে তিনি ব্যাট হাতে এবং উইকেটের পিছনে গ্লাভস হাতে বেশ ভালো পারফর্মেন্স দেখান। তবে তাঁর সবচেয়ে সফল সময়টি ছিলো ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে। এই মৌসুমে তিনি উইকেটের পিছনে থেকে মোট ৫৮টি উইকেট শিকার করেন। এছাড়াও ব্যাট হাতেও তিনি বেশ উজ্জল ছিলেন এই মৌসুমে। পুরো মৌসুমে তাঁর গড় রান ছিলো ৫০.৫২। এর মধ্যে ফাইনাল ম্যাচে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে তিনি অপরাজিত ১৮৯ রানের একটি ইনিংস খেলেন। যদিও সেই ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ড্র হয়েছিলো এবং পয়েন্টের ব্যবধানে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া শেফিল্ড শিল্ড কাপ জিতে নেয় সেবার।

১৯৯৬ সালের ২৫ অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ১২৯তম খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেক ঘটে গিলক্রিস্টের। অভিষেক ম্যাচে ব্যাট হাতে তেমন কিছু করতে পারেননি গিলি। এ্যালান ডোনাল্ডের বলে মাত্র ১৮ রান করে বোল্ড আউট হয়ে ফিরে আসেন তিনি। তবে গ্লাভস হাতে উইকেটের পিছনে দারুণ ছিলেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান হানসি ক্রনিয়ের ক্যাচ নিয়ে তাঁকে গোল্ডেন ডাক উপহার প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে দেন তিনি।

তবে অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে দলেও তেমন একটা সুবিধা করে উঠতে পারছিলেন না গিলি। ইয়ান হিলির পরিবর্তে তিনি দলে নিয়মিত উইকেট রক্ষকের ভূমিকায় খেলার সুযোগ পেলেও হিলির প্রত্যাবর্তনের পর তাঁকে দলে একজন লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে রাখা হয়। কিন্তু সাত নম্বরে নেমে তিনি তেমন সুবিধা করে উঠতে পারছিলেন না।

তাঁর ভাগ্য খুলে যায় ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে যখন অস্ট্রেলিয়া দলের নির্বাচকেরা সিদ্ধান্ত নেন যে তাঁদের টেস্ট এবং ওয়ানডে দলের জন্য আলাদা দল ঘোষণা করা হবে। ফলে গিলক্রিস্টের ব্যাটিং পজিশন উপরের দিকে চলে আসে এবং হিলিকে টেস্ট দলের উইকেট রক্ষক হিসেবে পছন্দ করেন নির্বাচকেরা। ফলে ওয়ানডে দলের নিয়মিত উইকেট রক্ষকের জায়গাটি পেয়ে যান গিলক্রিস্ট।



এদিকে ওয়ানডে দলের ওপেনিং জুটি হিসেবে অধিনায়ক মার্ক টেইলরের সাথে তেমন জমছিলো না মার্ক ওয়াহর। ফলে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি ম্যাচে গিলক্রিস্টকে মার্ক ওয়াহর পার্টনার হিসেবে ওপেনিংয়ে মাঠে নামানো হয়। প্রথম ম্যাচে এই জুটি তেমন সাফল্য পায়নি। গিলক্রিস্টের সাথে মাঠে ভুল বোঝাবুঝির কারণে রান আউট হয়ে যান মার্ক ওয়াহ। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচেই ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠেন গিলি। এদিন সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেন গিলক্রিস্ট। ফলে অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে দলের ওপেনার ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর অবস্থানটি একেবারে পাকাপোক্ত হয়ে যায়।

একদিনের ক্রিকেটে গিলক্রিস্ট অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মোট ২৮৭টি ম্যাচ খেলে ১৬টি সেঞ্চুরি এবং ৫৫টি হাফ সেঞ্চুরি করেন। ওয়ানডেতে গিলক্রিস্টের সর্বোচ্চ ইনিংসটি ১৭২ রানের।

১৯৯৯ সালের নভেম্বর মাসে ব্রিসবেনের গ্যাবায় পাকিস্তানের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ৩৮১তম টেস্ট খেলোয়াড় হিসেবে টেস্টে অভিষেক ঘটে গিলক্রিস্টের। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিনি ৯৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ১৭টি সেঞ্চুরি এবং ২৬টি হাফ সেঞ্চুরি করেন। এসময় তিনি উইকেটের পিছনে থেকে মোট ৩৮৯টি ক্যাচ নেন এবং ৩৭টি স্ট্যাম্পিং করেন।

২০০৮ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতের বিপক্ষে সিরিজের ৪র্থ ও শেষ টেস্ট ম্যাচে গিলক্রিস্ট ঘোষণা দেন তিনি এই টেস্ট ম্যাচের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করবেন। সেই টেস্টে চোট পেয়ে অসি অধিনায়ক রিকি পন্টিং মাঠের বাইরে চলে গেলে নিজের শেষ টেস্ট ম্যাচের শেষ সময়টাতে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।