Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

মধুকবির দেশে



কবির বাড়ির পুকুর। নবগঙ্গা নদীর কাছে যাওয়ার পর মনে হলো যশোর আর বেশি দূরে নয়। মাগুরার সেই নবগঙ্গার তীরে কিছুটা সময় কাটিয়ে আবার যশোরের পথ ধরা। উদ্দেশ্য, যশোর রোড ও সাগরদাঁড়িতে গিয়ে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি দেখা। প্রকৃতিতে বিকেলের ভাবটা আসতে না আসতেই এক পশলা বৃষ্টি। যশোরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। একটি গেস্ট হাউসে রাতটা পার করলাম আমরা কজন। রাতে শুধু জামতলার মিষ্টি নিয়ে কিছু কথা হলো, আগে কয়েকবার জামতলা গিয়ে মিষ্টির দেখা পাওয়া যায়নি। ফেরার পথে এবারও ঢুঁ মারার পরিকল্পনা নিয়ে ঘুমের দেশে হারিয়ে যেতে হলো।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে যাত্রা শুরু হলো। আটটার মধ্যে কেশবপুর চলে এসে ব্রেকফাস্ট বিরতি। নাশতা করে কেশবপুর উপজেলা পরিষদে হনুমান দেখতে গেলাম আমরা কজন। এবার কপাল ভালো। মাত্র একটি হনুমান দেখা গেল। একটু আগেই নাকি দলবল নিয়ে বাকি হনুমানগুলো জায়গা ত্যাগ করেছে। আবার আসবে খাবার দেওয়ার সময়।

কেশবপুর বাজার পার হয়ে হাইওয়ে থেকে বাঁদিকে ছোট্ট এক পিচঢালা সড়ক চলে গেছে। সড়কটির শুরুতেই আছে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রতিকৃতি। এ রাস্তা দিয়ে পথ চললেই পাওয়া যাবে সাগরদাঁড়ি, মধুকবির জন্মভিটা। আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে চলছে গাড়ি। দুই ধারে সবুজ ধানক্ষেত। কোথাও আছে বাবলার সারি। খেজুরগাছের মহাসমারোহ দেখতে দেখতে চলে এলাম সাগরদাঁড়ি। সাগরদাঁড়ির গায়ের কাছেই কপোতাক্ষ নদ।

গাড়ি থেকে নেমে আমরা টিকিট কেটে কবির বাড়িতে ঢুকি। প্রথম দর্শনেই পুকুরের কিনারজুড়ে দেখা যাবে একটি কবিতার পঙিতমালা—‘দাঁড়াও, পথিক বর জন্ম যদি তব বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল!’ অন্যান্য পর্যটককে দেখা গেল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কবিতার লাইন পড়ছে। বাড়ির মধ্যে হালকা হলুদ ও সাদা রঙের দুটি ভবন দেখা গেল। মূল বাড়ি সংস্কার করে এ রূপ দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে প্রবেশ করার পর দেখা যাবে মোটামুটি লম্বা ধাঁচের একটি সুদৃশ্য পুকুর। বেশ বড় ও পুরোনো কিছু আমগাছ রয়েছে পুকুরের চারপাশে। ধারণা করা হয়, এ আমগাছগুলো কবির আমলেও ছিল। পুকুর পাড়ের শানবাঁধানো ঘাটে আমগাছের ছায়া অনেক দূর-দূরান্ত থেকে কবির বাড়ি দেখতে আসা মানুষ কিছুটা সময় বসে দেহ জুড়িয়ে নেয়। কবির বাড়ির দুটি ভবনের মধ্যে আছে কবির ও তাঁর পরিবারের ব্যবহূত সামগ্রী। যেমন—দা, আলনা, খাট, থালা, কাঠের সিন্দুক, কবির লিখিত পাণ্ডুলিপি, পারিবারিক ছবি, কবির বন্ধুদের ছবিসহ নানা কিছু। পুরো বাড়িটি দেখে চলে যেতে পারেন দত্ত বাড়ির নদীর ঘাটে। কপোতাক্ষ নদের তীরের যে স্থানটিতে কবি শেষবার এসেছিলেন, সেখানেও যেতে পারেন। একটি স্মৃৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে।

বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাড়ি ও অন্য সবকিছু সংরক্ষণ করা হয়েছে। কবির জন্মদিনে প্রতি বছর কবির এ পৈত্রিক বাড়িতে জন্মোৎসব ও মধুমেলা হয়।

কীভাবে যাবেন
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি যেতে চাইলে ঢাকা থেকে যশোর। যশোর শহর থেকে বাসে করে কেশবপুর। সেখান থেকে সিএনজি বা মাইক্রোবাসে করে সাগরদাঁড়ি যেতে হবে।