Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Entertainment Image

‘দ্য ক্রানবেরিস’ আইরিশ ব্যান্ড



১৯৮৯ সালে মধ্যপশ্চিম আয়ারল্যান্ডের লিমেরিক শহরের দুই গিটারিস্ট ভাই মাইক ও নোয়েল হোগান তাদের ড্রামার বন্ধু ফেরগাল লওলার ও গায়িকা নিয়াল কুইন কে নিয়ে একটি গানের দল গঠন করেন যার নাম দেওয়া হয় “The Cranberry Saw Us”। এক বছরের কম সময়ের মধ্যে নিয়াল দল ছেড়ে চলে গেলে বাকি সদস্যরা একজন নারী সঙ্গীতশিল্পী চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন। তখন অনেকের সাথে ডলোরেস ও’রিওরডান বিজ্ঞাপনে সাড়া দিয়ে অডিশন দিতে আসেন। সেখানে তিনি তাঁর লেখা এবং সুর করা কিছু গানের ডেমো পরিবেশন করেন। মাইক ও নোয়েল তখন ডলোরেসকে নতুন আরেকটি ডেমো নিয়ে আসতে বলেন। কিছুদিন পর ডলোরেস ‘লিঙ্গার’ নামের একটি গানের আনকোড়া সংস্করণ নিয়ে আসেন। সেটা শোনার পরপরই ডলোরেসকে দলভুক্ত করে নেওয়া হয়।

এরপর ব্যান্ড হিসেবে তারা কিছু গানের ‘হোম রেকর্ডিং’ করে তা ক্যাসেট হিসেবে বিক্রি করা শুরু করে। প্রায় ৩০০ কপি বিক্রি হয়ে যায়। সেই সময় তাঁরা ব্যান্ডের নাম ছোট করে ‘The Cranberries’ রাখেন। সেই সময় তাঁরা ‘লিঙ্গার’ ও ‘ড্রিমস’ নামের দুটি গানের ডেমো তৈরি করে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন রেকর্ড কোম্পানির কাছে পাঠিয়ে দেন। ডেমো দুটো তাঁরা তৈরি করেন আয়ারল্যান্ডের জেরিক স্টুডিওতে। যার স্বত্বাধিকারী ছিলেন পিয়ারস গিল্মর যিনি পরে দ্য ক্র্যানবেরিসের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

দ্য ক্র্যানবেরিসের পাঠানো ডেমো টেপটি সে সময় ব্রিটিশ মিডিয়াসহ প্রায় সব রেকর্ডিং লেবেলের নজর কাড়ে এবং সবাই তাদের গান করার জন্য রীতিমতো লাইন দিয়ে প্রস্তাব দেওয়া শুরু করে। অবশেষে প্রচুর অর্থের বিনিময়ে বিখ্যাত ব্রিটিশ রেকর্ডিং লেবেল ‘আইল্যান্ড রেকর্ডস’-এর সাথে দ্য ক্র্যানবেরিস চুক্তি করে।

আয়ারল্যান্ডে ফিরে এসে পিয়ারস গিল্মরের স্টুডিওতে দ্য ক্র্যানবেরিস তাদের প্রথম আনঅফিসিয়াল এলপি ‘আনসারটেইন’-এর কাজ শুরু করে, এই অ্যালবাম ছিল সেই সময়ের কোনো ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম যা একইসাথে সিডি এবং এলপি- দুই ভাবেই বাজারে আসে। এ ছাড়া একটি মিউজিক ভিডিও তৈরি করা হয়েছিল এই অ্যালবামটির জন্য। কিন্তু তা প্রচার করা হয়নি। একটি নতুন ব্যান্ড হিসেবে প্রথম অ্যালবামের নাম ‘আনসারটেইন’ রাখার কারণে সেই সময়ে দ্য ক্র্যানবেরিস ব্রিটিশ মিডিয়ায় অনেক সমালোচনার সম্মুখীন হয়, অনেকে এই ব্যান্ডের ভবিষ্যৎ নড়বড়ে বলে মন্তব্য করে, যা পরবর্তীকালে ব্যান্ডের সাথে তাদের ম্যানেজার পিয়ারস গিল্মরের সাথে দূরত্ব তৈরি করে। কারণ ‘আনসারটেইন’ নামটি পিয়ারস গিল্মরের দেওয়া। ১৯৯২ সালের জানুয়ারি মাসে ‘আইল্যান্ড রেকর্ডস’-এর সাথে চুক্তি অনুযায়ী দ্য ক্র্যানবেরিস তাদের প্রথম অফিসিয়াল অ্যালবামের জন্য কাজ শুরু করে। বেশ কয়েকটি অগোছালো রেকর্ডিং সেশনের পর ব্যান্ড তাদের পুরো কাজ বাতিল করে এবং পিয়ারস গিল্মরকে ম্যানেজার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে জেওফ ট্রাভিসকে নতুন ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেয়।

মার্চ মাসে তারা আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে স্টিফেন স্ট্রিটের অধীনে নতুন করে কাজ শুরু করে। এই সময়ের মধ্যে তারা আয়ারল্যান্ডের ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে সঙ্গীত পরিবেশন করে যা ব্রিটিশ মিডিয়ার নজর কাড়ে। এ ছাড়া ব্যান্ড আইরিশ ও ব্রিটিশ বিভিন্ন রেডিও ও টেলিভিশনের জন্য লাইভ এবং স্টুডিও রেকর্ডিং করে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ২এফএমের ‘দ্য ডেভ ফ্যানিং শো’ এবং বিবিসি রেডিও ওয়ানের ‘জন পিল শো’।

১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম সিঙ্গেল ‘ড্রিমস’ বাজারে ছাড়া হয় এবং দ্য ক্র্যানবেরিস তাদের প্রথম অফিসিয়াল অ্যালবাম ‘Everybody else is doing it, so why can’t we?’ ১৯৯৩ সালের মার্চে বাজারে ছাড়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এটি তেমন ভাবে শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি। এমন কি তাদের দ্বিতীয় সিঙ্গেল ‘লিঙ্গার’ সঙ্গীতপ্রেমীদের আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়। Suede নামের একটি ব্যান্ডের সাথে পরিবেশনের সময় জনপ্রিয় মিউজিক চ্যানেল এমটিভির নজরে পরে দ্য ক্র্যানবেরিসের ওপর। তারা ব্যান্ডের ‘ড্রিমস’ এবং ‘লিঙ্গার’সহ বেশ কিছু গানের ভিডিও তৈরি করে ক্রমাগত প্রচার করা শুরু করে। যদিও গানগুলো ১৯৯৩ সালে বাজারে ছাড়া হয়েছিল তার পরও ১৯৯৪ সালে আবারও অ্যালবামটি বাজারে ছাড়া হয় এবং এবার অ্যালবামটি ইউকে অ্যালবাম চার্টের প্রথম স্থানে চলে আসে। ১৯৯৪ সালের জুলাইতে ডলোরেস ও’রিওরডান ব্যান্ডের ট্যুর ম্যানেজার ডন বারটনকে বিয়ে করেন।

ব্যতিক্রম গায়কী ঢঙের কারণে ডলোরেস ও’রিওরডান এর চাহিদা ব্যান্ডে দিন দিন বাড়তে থাকে এবং ব্যান্ডের দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘নো নিড টু আরগ্যু’ বাজারে ছাড়া পাওয়ার সময় তার জনপ্রিয়তা চরমে ওঠে। স্টিফেন স্ট্রিটের তত্ত্বাবধানে রিলিজ পাওয়া এই অ্যালবামটি মার্কিন টপ চার্টের ষষ্ঠ স্থান দখল করে নেয় এবং এক বছরের মধ্যে তৃতীয় বারের মতো প্লাটিনাম অ্যালবাম হিসেবে নাম লেখায়। এই অ্যালবামের ‘জম্বি’ গানটি মার্কিন টপ চার্টের ১ম স্থান দখল করে এবং ১৯৯৫ সালের মডার্ন রক ট্র্যাকস চার্টে অপর একটি গান ‘ওডে টু মাই ফ্যামিলি’ ১১তম স্থান দখল করে। অ্যালবামটি কানাডায় পাঁচ বারের মতো প্লাটিনাম, সুইজারল্যান্ডে একবার প্লাটিনাম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাত বারের মতো প্লাটিনাম পায়। এর মধ্যে ব্যান্ড ‘ক্যান্ট বি উইথ ইউ’ এবং ‘রিডিউক্যুলাস থটস’ শিরোনামে আরো দুটি সিঙ্গেল বাজারে ছাড়ে যা প্রচুর জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৯৬ সালে ব্যান্ড অনেক উচ্চাশা নিয়ে তাদের তৃতীয় অ্যালবাম ‘টু দ্য ফেইথফুল ডিপার্ট’ বাজারে ছাড়ে কিন্তু সেটা তুলনামুলকভাবে সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হয়। যদিও অ্যালবামটি ইউকে অ্যালবাম চার্টের দ্বিতীয় স্থানে আসে এবং বিলবোর্ড ২০০-এর মধ্যে চতুর্থ স্থানে আসে কিন্তু ‘নো নিড টু আরগ্যু’ অ্যালবামের তুলনায় তা কিছুই ছিল না।

১৯৯৬ সালের শরতে ব্যান্ড তাদের অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপিয়ান ট্যুর বাতিল করে এবং গুজব ছড়িয়ে পড়ে ডলোরেস তাঁর একক ক্যারিয়ার শুরু করতে যাচ্ছেন। কিন্তু সেসব গুজবকে উড়িয়ে দিয়ে ১৯৯৯ সালে ব্যান্ড তাদের চতুর্থ অ্যালবাম ‘বারি দ্য হ্যাচেট’ বাজারে ছাড়ে যা বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। মার্কিন টেলিভিশনের জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘চার্মড’-এর একটি পর্বে দ্য ক্র্যানবেরিসকে অতিথি শিল্পী হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তারা সেখানে অ্যালবামের ‘জাস্ট মাই ইমাজিনেশন’ গানটি পরিবেশন করে। সেই সাথে ১৯৯৯ সালের এপ্রিলে ব্যান্ড তাদের ওয়ার্ল্ড ট্যুর শুরু করে যা ২০০০ সালের জুলাইতে গিয়ে শেষ হয়। এই ট্যুরটিই ব্যান্ডের সবচেয়ে বড় এবং সফল ট্যুর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই ট্যুর চলাকালে ব্যান্ড ‘বারি দ্য হ্যাচেট – দ্য কমপ্লিট সেশনস’ নামে একটি ডাবল সিডি বের করে যার একটি সিডিতে প্যারিসে অনুষ্ঠিত তাদের পরিবেশিত গানগুলো স্থান পায়। ২০০১ এর অক্টোবর এ ব্যান্ড তাদের অপর অ্যালবাম ‘ওয়েক আপ এ্যান্ড স্মেল দ্য কফি’ বাজারে ছাড়ে এবং এর জন্য বেশ কয়েকটি মিউজিক ভিডিও তৈরি করে। এই অ্যালবামটি বিলবোর্ড ২০০ এর মধ্যে ৪৬তম স্থান দখল করে এবং ইউকে অ্যালবাম চার্টের ৬১তম স্থান পায়। এর মধ্যে তারা আরো দুইটি সিঙ্গেল ‘টাইম ইজ টিকিং আউট’ এবং ‘দিস ইজ দ্য ডে’ রিলিজ করে যা অবশ্য সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হয়।

২০০২ সালে দ্য ক্র্যানবেরিস তাদের সব হিট গান নিয়ে ‘স্টার্স – দ্য বেস্ট অব ১৯৯২-২০০২’ নামের অ্যালবাম বের করে সেই সাথে তাদের সমস্ত মিউজিক ভিডিও নিয়ে একটি ডিভিডি বাজারে ছাড়ে। ২০০২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা ইউরোপ ভ্রমণ করে।

২০০৩ সালের মে মাসে নর্দান আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্টে তাদের নতুন অ্যালবামের কাজ শুরু হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই সেপ্টেম্বর মাসে তারা সিদ্ধান্ত নেয় এবার একক ক্যারিয়ারের দিকে মনোযোগ দিবে।

২০০৪ সাল থেকে ডলোরেস ও’রিওরডান বিভিন্ন মিউজিক্যাল প্রজেক্টে কাজ করেন এবং একক ভাবে কিছু কনসার্টে গান পরিবেশন করেন। অবশেষে ২০০৭ সালে তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম ‘আর ইউ লিসেনিং?’ বের হয় যা বেশ গ্রহণযোগ্যতা পায়। এর মধ্যে ২০০৯ সালে ডলোরেস তাঁর প্রাক্তন ব্যান্ড দ্য ক্র্যানবেরিসের সাথে তাদের অন্যতম হিট ‘লিঙ্গার’ গানটি হলিউডের এডাম স্যান্ডলার অভিনীত ‘ক্লিক’ ছবিতে পরিবেশন করেন। এদিকে ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নোয়েল হোগান ‘মনো ব্যান্ড’ নামে একটি প্রোজেক্ট শুরু করেন। এর প্রথম সেলফ টাইটেল্ড অ্যালবাম ২০০৫ ‘লিমিটেড অ্যাডিশন’ হিসেবে বাজারে আসে। এ ছাড়া হোগান তাঁর জন্মভূমি আয়ারল্যান্ডের লিমেরিকে ফিরে গিয়ে আরো কিছু ছোটখাটো প্রেজেক্টে কাজ করেন।

২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজের ‘ইউনিভার্সিটি ফিলোসফিক্যাল সোসাইটি’ ডলোরেস ও’রিওরডানকে তাদের প্যাট্রন হিসেবে সম্মানিত করা উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে দ্য ক্র্যানবেরিসের সব সদস্য আবার একত্রিত হন। যদিও তাঁরা উল্লেখ করেন যে এটা তাদের অফিশিয়াল রি-ইউনিয়ন নয়- তবুও তাঁদের ফ্যানদের মনে আবার আশা জাগে যে ব্যান্ড আবার একত্রিত হবে। অবশেষে একই বছরের ২৫ অগাস্ট ডলোরেস ও’রিওরডান তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘নো ব্যাগেজ’ প্রকাশ করেন। সেই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি ঘোষণা করেন যে, ‘দ্য ক্র্যানবেরিস’ আবারও একত্রিত হচ্ছে এবং তারা উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপ ট্যুরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেখানে ডলোরেস আরো জানান যে সেই ট্যুরে তাঁরা ডলোরেসের একক অ্যালবামসহ ব্যান্ডের হিট গানগুলো পরিবেশন করবেন। সেই সাথে চমক হিসেবে কিছু নতুন গানও থাকবে যা কি না ব্যান্ডের নতুন অ্যালবামে অন্তর্ভুক্ত হবে।

২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল থেকে ১৫ মে পর্যন্ত কানাডার মেটালওয়ার্কস স্টুডিওতে দ্য ক্র্যানবেরিস তাদের পুরনো প্রোডিউসার স্টিফেন স্ট্রিটের তত্ত্বাবধানে ব্যান্ডের রি-ইউনিয়ন এবং এখন পর্যন্ত সর্বশেষ অ্যালবাম ‘রোজেস’-এর রেকর্ডিংয়ের কাজ শুরু করে। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া ব্যান্ডের সর্বশেষ এই অ্যালবামটিতে ১১টি গান অন্তর্ভুক্ত করা হয় যদিও ১৫টি গান তারা রেকর্ড করেছিলেন।

২০১২ এর পর থেকে ব্যান্ডের আর তেমন কোনো কাজ আর দেখা যায়নি, বরং ২০১৩ সালের অক্টোবরে কোনো এক অজ্ঞাত কারণে ডলোরেস অপর ব্যান্ড সদস্য নোয়েল হোগানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন, এই ব্যাপারে অবশ্য কেউই মিডিয়ার কাছে মুখ খুলছেন না। যদিও ব্যান্ড থেকে বলা হচ্ছে এখন তাদের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক ‘…only work related’। মামলাটি এখনো আদালতে বিচারাধীন। তবে দ্য ক্র্যানবেরিসের ভক্তরা আশা করছে অচিরেই সবকিছুর সমাধান করে ব্যান্ড আবার সঙ্গীত পরিবেশনায় ফিরে আসবে।