Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

মধুটিলা ইকোপার্ক



মধুটিলা ইকোপার্ক। জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষায় নির্মাণাধীন এই ইকোপার্ক। বৃহত্তর ময়মনসিংহের শেরপুর জেলা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের নালিতাবাড়ী উপজেলাধীন এবং ময়মনসিংহ বন বিভাগ নিয়ন্ত্রিত মধুটিলা রেঞ্জের সমেশচূড়া বিটের প্রায় একশ হেক্টর পাহাড়ি বনভূমি নিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীনে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে মধুটিলা ইকোপার্ক প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ প্রায় শেষ। আধুনিক সুবিধাসমৃদ্ধ মধুটিলা ইকোপার্কটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মাধ্যমে একদিকে যেমন সৌন্দর্যপিপাসু লোকজনের জন্য বিনোদনের দ্বার উন্মুক্ত করেছে অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব আয়েরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মধুটিলা ইকোপার্ক এক আলাদা আনন্দের পর্যটন কেন্দ্র। নিঝুম দ্বীপের মতো রয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড়। পাশেই আড়াই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুড়া পাহাড়। মধুটিলা ইকোপার্ক নির্মাণ করার জন্য বন বিভাগ অনুমোদন পায় ২০০০ সালে। জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষায় গহিন অরণ্যের গাছ কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে সমশচূড়ায় মধুটিলা ইকোপার্ক। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও পর্যটন কেন্দ্রে দিন-দিনই দর্শক সমাগম বাড়ছে। রকমারি জীবের প্রতিকৃতিসমৃদ্ধ ইকোপার্কটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়ঘেরা পরিবেশ সত্যিই মুখরিত- আনন্দিত হওয়ার মতো। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা সমেশচূড়া ফরেস্ট বিটের মধুটিলা একটি আকর্ষণীয় চিত্তবিনোদনের স্থান। প্রায় এক কোটি ৬২ লাখ টাকা প্রথম পর্যায়ের ব্যয়সাপেক্ষে জীববৈচিত্র্যের প্রতিকৃতি আর অবকাঠামোগত কাজ ইতিমধ্যে প্রায় শেষ।


পর্যটন কেন্দ্রে যা দেখা যাবে
পর্যটন সুবিধাদির মধ্যে আছে পনের একর শোভাবর্ধনকারী ও বিরল প্রজাতির বনায়ন। বিশ একর বনভূমিতে রয়েছে ঔষধি প্রজাতির বনায়ন, রেস্টহাউজ, বাসগৃহ। চার রুমবিশিষ্ট অত্যাধুনিক রেস্টহাউজ নির্মাণাধীন। বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর ভাস্কর্য বা প্রতিকৃতি হিসেবে রয়েছে ২টি হাত, ২টি বাঘ, মৎস্যকন্যা, ঈগল, হনুমান, প্যাঁচা, সাপ, কুমির, হরিণ, ক্যাঙ্গারু, ব্যাঙ, সিংহ। অবকাঠামোগত কাজের মধ্যে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, ১টি স্টার ব্রিজ, পাবলিক টয়লেট, বসার স্থান। লেকের পানিতে চরে বেড়ানো আর ব্যবহারের জন্য রয়েছে ৩টি প্যাডেল বোট ও ৫টি দেশীয় নৌকা। বর্তমানে ইকোপার্কটি দর্শনার্থী-পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। বিনা পয়সায় পর্যটন কেন্দ্রটি ঘুরে বেড়ানোর জন্য প্রতিনিয়তই ভিড় বাড়ছে। কোলাহলমুক্ত শান্ত পরিবেশে এসে অনেকেই উপভোগ করছে অনাবিল আনন্দ। শহরের কোলাহল ছেড়ে প্রতিদিন ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা আসছে লোভনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকনে। ঘুরে বেড়াচ্ছে পাহাড়ের পর পাহাড়। চিত্তবিনোদনের জন্য রয়েছে বিশাল পরিসর।

মধুটিলা ইকোপার্ক গেটের বাঁদিকের রাস্তা দিয়ে যেতে হবে পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে। পাহাড়ের উঁচু টিলায় নির্মাণ করা হয়েছে এটি। পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের উপর দাঁড়িয়ে উপভোগ করবেন প্রকৃতির মজা, নিস্তব্ধ-নীরবতা। যেন এক নিথর বাতায়ন। সর্বত্রই যেন সবুজের রাজ্য। দেখবেন সামান্য দূরে অবস্থিত ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুড়া পাহাড়। মূল্যবান ও বিরল উদ্ভিদ। ইকোপার্কের প্রধান ফটক পেরুতেই চোখে পড়বে বন্যপ্রাণী হাতির ভাস্কর্য। এ যেন বাস্তবরূপে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েক পা বাড়ালেই চোখে পড়বে লেকের কোণে কুমারী মৎস্যকন্যা আর লেকে বেড়ানোর পানিতে ৩টি প্যাডেল বোট ও ৫টি দেশীয় নৌকা। পাহাড়ি ঝরনাধারার পানি এসে মিশেছে লেকের পানিতে। কালভার্টের ডানে রয়েছে হালকা নাস্তা চা-কফিসহ স্টেশনারি সামগ্রীর দোকান। একটু এগোলেই মনোরম স্টার ব্রিজ, যা লেকের পানির উপর নির্মিত। একসঙ্গে শতাধিক লোক দাঁড়িয়ে-বসে উপভোগ করা যায় বনভোজনের আড্ডা। পাশেই রয়েছে কৃত্রিম কুমির। দেখতে বাস্তব মনে হবে। এরপর বিস্তর এলাকায় ক্ষণে ক্ষণে চোখে পড়বে বিভিন্ন পশুপাখির ভাস্কর্য। স্থানে স্থানে রয়েছে বসার স্থান। উঁচু পাহাড় কেটে ঢালু রাস্তা তৈরি করা হয়েছে রেস্টহাউজে যেতে। প্রাইভেট-মাইক্রো চলার উপযোগী খাঁজকাটা পাকা রাস্তার মাঝের সারিতে রয়েছে নানা রঙের পাথর বসানো এক শিল্পকর্ম যাতে পা পিছলে না যায়। আর উপর-নীচ থেকে দাঁড়ালে মনে হবে বাহারি ফুলের সারি। দু’পাশে রয়েছে জীববৈচিত্র্যের প্রতিকৃতি। ভাস্কর্যগুলো দেখলে মনে হবে যেন শিল্পীর হাতের নিখুঁত চিত্র। রেস্টহাউজের বাঁকা সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় প্রকৃতির মনোমুগ্ধ পরিবেশ। উঁচু-নীচু পাহাড়গুলোর দিকে তাকালে মনে হবে পানির ঝরনাধারা আর এরই নিচে রয়েছে লেক। আসলে সেগুলো পাহাড়ে ওঠার রাস্তা। কিছুদূর ঘুরে এসে বিশ্রাম করুন রেস্টহাউজে। উপভোগ করুন রেস্টহাউজের আধুনিক সুযোগ সুবিধা। তারপর খাওয়া-দাওয়া সেরে আবার বেরিয়ে পড়–ন পাহাড় থেকে পাহাড়, অন্য পাহাড়ে। জীববৈচিত্র্য, বন্যপ্রাণীর ভাস্কর্য আর প্রকৃতির সঙ্গে মিতালী করে ক্যামেরায় ছবি তুলুন চেনা অতীতকে স্মৃতি করে। ফেরার পালায় সময় পেলে যেতে পারেন নিকটবর্তী বারমারি মিশন বা খ্রিস্টান মিশনে। এটিও জেলার আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত। আবার মধুটিলার অতি নিকটেই রয়েছে বৃহত্তর জেলার অন্যতম পর্যটক কেন্দ্র গজনী অবকাশ কেন্দ্র, যা ইতিমধ্যেই সারাদেশে অত্যাধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি পাইভেট কার, মাক্রোবাস, মিনিবাস ও বড় বাস নিয়ে যেতে পারেন পর্যটন কেন্দ্র মধুটিলা ইকোপার্কে। এছাড়াও মহাখালী বাসটার্মিনাল থেকে শেরপুরের ড্রিমল্যান্ড, তুরাগ, আনন্দ অথবা অন্যান্য সার্ভিস রয়েছে। সেগুলোতে ৯০ থেকে ১৪০ টাকা ভাড়ায় শেরপুর এসে মেক্সি-ট্যাক্সি অথবা পিকআপ ভ্যানে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা সরাসরি যেতে পারবেন পিকনিক স্পটে। এছাড়াও আপনি কিছুটা সময় বাঁচাতে নকলা নালিতাবাড়ী উপজেলা হয়ে যেতে পারেন মেক্সি-ট্যাক্সি অথবা পিকআপ ভ্যানে। তবে দলবদ্ধভাবে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে যাওয়াটাই উত্তম ভ্রমণ। সব মিলিয়ে স্পটে যেতে সময় লাগবে ৪/৫ ঘণ্টা।

স্পটে যা পাবেন
স্পট এলাকার দোকানগুলোতে মিনারেল ওয়াটার, ড্রিংকস, চা-কফিসহ স্টেশনারি, খাবার সবই পাবেন। কিন্তু ফাস্টফুড বা ভারি কোনও খাবার সেখানে পাওয়া যাবে না বিধায় নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী খাবার সঙ্গে নিতে হবে। রান্না করেও নিতে পারেন অথবা স্পটে গিয়েও স্পট সংলগ্ন রেঞ্জ অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে রান্নার ব্যবস্থা করতে পারেন। যদিও রান্নার জন্য উপযুক্ত স্পট না থাকায় এই মুহূর্তে নিজ ব্যবস্থাপনায় মুক্ত আকাশের নিচে রান্না করতে হবে। চার রুমবিশিষ্ট রেস্টহাউজের একটি রুম বুকিং দিয়ে নিতে পারেন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। তাই অবসরে সপরিবারে ঘুরে আসুন বৃহত্তর জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলো। নতুনত্বের খোঁজে উপভোগ করুন এক আলাদা আনন্দ।