বগুড়া শহরের প্রবেশ পথে শেরপুর উপজেলায় এই অসাধারণ মসজিদটি অবস্থিত। শেরপুরের ধনুট মোড় থেকে পাঁচ মিনিট হেঁটে খেরুয়া মসজিদে পৌঁছানো যায়। ধনুট মোড়ে নামলেই চোখে পড়বে প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের একটি সাইবোর্ড। যেটা খেরুয়া মসজিদে যাবার দিক নের্দেশ করছে। খেরুয়া মসজিদ একটু গ্রামের ভিতর। গ্রামের পথ ধরে হেঁটে যেতে ভালই লাগবে। পথে লোকজনকে জিজ্ঞেস করে পথ দেখে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
তিন গম্বুজ বিশিষ্ট আয়তাকার পরিকল্পনায় নির্মিত এই মসজিদ এবং মসজিদের ৪ কোনে রয়েছে ৪টি মজবুত টাওয়ার। পূর্ব প্রাচীরে ৩টি খিলানকৃত প্রবেশ পথ। প্রত্যেকটি প্রবেশ পথ একটি আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে অবস্থিত এবং সাধারন ইটের দেয়ালের মধ্যে বৈচিত্র্য আনার জন্য দরজার মধ্যবর্তী স্থানে খাড়া প্যানেলের ব্যবহার লক্ষণীয়।
বক্রছাদ কিনারা বিশিষ্ট প্রাচীন বৈশিষ্ট্যমন্ডিত এই মসজিদের কার্নিশের নিচ দিয়ে রয়েছে ছোট খিলানকৃত প্যানেলের সারি। উত্তর ও দক্ষিন দেয়ালে রয়েছে একটি করে খিলানকৃত প্রবেশ পথ এবং পশ্চিম দেয়ালে কেন্দ্রীয় মিহরাবের বিপরীতে দেয়ালের উদগত অংশ। আয়তাকার মসজিদটিকে দুটি পার্শ্ব খিলানের দ্বারা তিনটি বর্গাকার অংশে ভাগ করে তার উপর তিনটি অর্ধগোলাকৃতির গম্বুজ নির্মান করা হয়েছে এবং পার্শ্ব খিলান ও দেয়ালের সংযোগ স্থলে করবেল পেনডেন্টিভের ব্যবহার করা হয়েছে। পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে তিনটি অর্ধগোলায়িত মিহরাব যার প্রত্যেকটিরই আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে অবস্থিত।
মিহরাবগুলোর খিলানের স্পানড্রেলসমূহ সুন্দর সুন্দর নকশা ও আয়তাকার ফ্রেমের পার্শ্ববর্তী অংশ লতাপাতা ও উপরের অংশ মার্লন নকশা দ্বারা অলংকৃত।
মসজিদটিতে মুঘল পূর্ব যুগের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা গেলেও ভূমি পরিকল্পনায় মুঘল স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। দেয়ালের সামনের দিকে মসজিদ থেকে পাওয়া শিলালিপিটি বসানো আছে। শিলালিপিটি পাথরের তৈরী। দেয়াল গাত্রের শিলালিপি অনুযায়ী ৯৮৯ হিজরী/১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে জনৈক মির্জা মুরাদ খান কাকশাল কর্তৃক মসজিদটি নির্মিত। মসজিদের সামনে খোলা চত্বরে সবুজ ঘাস কার্পেটের মত বিছানো। তাছাড়া আশেপাশে কিছু অন্যান্য বৃক্ষ মসজিদের সৌন্দর্য অনেকখানি বৃদ্ধি করেছে। মসজিদ চত্বর অনেক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। মসজিদে একজন কেয়ারটেকার আছেন। যিনি সার্বক্ষণিক সেখানে থাকেন। তার সাথে কথা বলে মসজিদের ভিতরেও যেতে পারবেন। এই মসজিদটিতে এখনও নামাজ পড়া হয়। সকালে মক্তবে আরবি শিক্ষা দেয়া হয়।
যাতায়াত-
ঢাকা থেকে খুব সহজেই সড়ক পথে বগুড়া যাওয়া যায়। রাজধানীর কল্যাণপুর, গাবতলী ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতি ৩০ মিনিট পর পর বাস ছাড়ে। এস.আর, শ্যামলী, টি.আর, হানিফ, বাবলু, শাহ্ সুলতান সহ আরো অনেক পরিবহন সংস্থার বাস চলাচল করে এই রুটে। সময় লাগে ৪ থেকে ৬ ঘন্টা এবং ভাড়া পড়বে ৩৮০ থেকে ৬০০ টাকা। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনেও বগুড়া আসা যায়। রংপুর এক্সপ্রেস ও লালমানিরহাট এক্সপ্রেস নামের দুটো ট্রেন পাবেন এখান থেকে। লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ১০.২০ মিনিটে এবং রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি রবিবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯.০০ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়।
বগুড়ার সাতমাথা থেকে বাস অথবা সিএনজিতে যেতে পারেন। বগুড়া শহর থেকে সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় ঘন্টাখানেকের মধ্যে ধনুট মোড়ে পৌছানো যায়। সিএনজিতে ভ্রমন বাসের থেকে আরামদায়ক হবে। ভাড়া বাসে ধনুট মোড় পর্যন্ত ১৫ টাকা এবং সিএনজিতে ২৫টাকা ।
থাকা খাওয়া-
শেরপুরে রাতযাপনের মতো ভাল কোনো হোটেল নেই। থাকার জন্য বেছে নিন বগুড়া শহরের হোটেল গুলো। সব ধরণের ও মানের থাকা-খাওয়ার জায়গা পাবেন এখানে। ২০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকায় রাতযাপনের ভাল ব্যবস্থা হয়ে যাবে। উল্লেখ যোগ্য কিছু হোটেল হল থ্রি স্টার হোটেল নাজ গার্ডেন, পর্যটন মোটেল, আকবরিয়া, সিয়াস্তা কিংবা হোটেল সেফওয়ে । এছাড়াও আরো অনেক হোটেল পাবেন। খাবারের ব্যবস্থা আছে সবগুলিতেই।