কর্মব্যস্ত জীবনে কাজের চাপে প্রাণ যখন ওষ্ঠগত, তখনই মনে হয় একটু ঘুরে আসি প্রাকৃতিক কোল থেকে। কিন্তু ঢাকায় কোথায় পাবেন প্রকৃতির ছোঁয়া? ঢাকার কেন্দ্রে না হলেও একটু দূরেই কিন্তু পেয়ে যাবেন প্রকৃতির স্পর্শ। দর্শনীয় বহু স্থান তো আছেই, চাইলে ঘুরতেও পারবেন নদীর কোলে কিছুক্ষণ। খুব বেশি দূরে যেতে হবে না এর জন্য। ঢাকা থেকে মাত্র কয়েক কি.মি দূরত্বে পেয়ে যাবেন নদী, জমিদার বাড়িসহ দারুণ বৈচিত্র্যময় এই স্থানের খোঁজ আর খরচও হবে বেশ কম। সময় পেলে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার কাছে নবাবগঞ্জ থেকে। আসুন চিনে নিই নবাবগঞ্জ এর দর্শনীয় জায়গাগুলো।
ইছামতি নদী
নবাবগঞ্জ শহরে মহাকবি কায়কোবাদ মোড় থেকে পশ্চিম দিকে কলাকোপার দিকে শহরে বয়ে চলেছে ইছামতি নদী। শান্ত, স্নিগ্ধ এক নদী। চাইলে এই নদীর বুকে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারেন কিছুক্ষণ। এখানকার বাসিন্দা, বর্তমানে ঢাকার তিতুমির কলেজে পড়াশোনারত সৌরভ প্রিয়.কম কে বলেন “ ইছামতি নদীতে আসলে মন ভাল হয়ে যায়। এখানে বিকেলে ঘুরতে আসা দর্শনাথীদের খাওয়ার জন্য ফুচকা, চটপটির দোকান বসে”।
এখানকার নিরাপত্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে সৌরভ প্রিয়.কম কে বলেন “ ইছামতি নদী অনেক নিরাপদ। আর প্রতি শুক্রবার এখানে পুলিশ টহল দিয়ে থাকে”।
এছাড়া পৌষ মাসে পৌষ মেলা, বৈশাখ মাসে বৈশাখমেলা বসে এই নদীর পাড়ে।
গান্ধী মাঠ
নবাবগঞ্জ এলাকায় বিখ্যাত একটি জায়গা হল গান্ধী মাঠ। এই মাঠে দেখার মত একটি বট গাছ আছে। তবে বর্তমানে বিশাল এই মাঠ পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়।
আর এন হাউজ
গান্ধী মাঠ থেকে কিছুটা সামনে গেলে দেখতে পাবেন প্রাচীন একটি বাড়ি। এই বাড়ীটির নাম হল আর এন হাউজ। আগের জৌলুস থাকলেও এখন বাড়ীটি চুন সুরকি খসে ধ্বংসের প্রহর গুণছে। তবে এখন এখানে দেখার মত অনেক কিছু আছে। চারিদিকে কক্ষ ঘেরা এই বাড়ির সামনের অংশে ছিল অতিথিশালা, পেছনে অন্দর মহল এবং পাশেই মন্দির। আর তার মাঝে ছোট একটি খোলা জায়গা। এই হাউজের সামনে একেবারে ইছামতির তীর ঘেঁষে রয়েছে সুন্দর দোতলা বাড়ি। দেখে আসতে পারেন এই প্রাচীন দোতলা বাড়ী থেকে।
জগবন্ধু সাহা হাউস
আর এন হাউজ থেকে কিছুটা দূরে গেলে দেখতে পাবেন আরেকটি প্রচীন ভবন জগবন্ধু সাহা হাউস। জগবন্ধুসাহা তৈরি করেছিলেন এ বাড়ি। এই দ্বিতলা বাড়িটির নির্মাণশৈলী আপনাকে মুগ্ধ করবে।
খোলারাম দাতার বাড়ি
কলাকোপা থেকে ছোট্ট করটি সড়ক চলে গেছে বান্দুরার দিকে। আর এই বান্দুরায় দেখতে পাওয়া যায় একটি বিশাল বাড়ি তার নাম হল খোলারাম দাতার বাড়ি। এই বাড়ির মালিক খেলারামকে নিয়ে এ অঞ্চলে অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে।
এই বাড়ি থেকে একটি সুড়ঙ্গ পথ ছিল ইছামতির পাড়ে। দোতলা এ বাড়ির নিচতলায় এখনো সুড়ঙ্গ পথটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। নিচতলায় অনেকগুলো কক্ষ থাকলেও এখন তার প্রায় সবই আবর্জনা আর মাটিতে ঢেকে আছে। আর দোতলায় চারপাশে ও চার কোণে চারটি করে বাংলা ঘরের আকৃতিতে এক কক্ষ বিশিষ্ট আটটি ঘর। মাঝে রয়েছে মঠ আকৃতির আরেকটি ঘর।
ব্রজ নিকেতন
বান্দুরা- দোহার সড়কের পাশেই দেখতে পাবেন প্রাচীন আরেকটি বাড়ি। দ্বিতলা এই সুন্দর বাড়িটির নাম হল ব্রজ নিকেতন। তবে বর্তমানে বাড়িটি জজ বাড়ি নামে পরিচিত। এর অসাধারণ নির্মাণশৈলী আপনাকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও বিমোহিত করবে।
নতুন বাড়ি
ব্রজ নিকেতনের পাশে আরেকটি বাড়ি হল নতুন বাড়ি। বিশাল পুকুরের পাড়ে সুপারি বাগানের মাঝে এক অপূর্ব বাড়ি, যার নাম ‘নতুন বাড়ি’।
জপমালা রানীর গির্জা
কলাকোপা থেকে কিছুটা সামনে বান্দুরায় আছে প্রাচীন গির্জা। গির্জার পাশেই রয়েছে খ্রীস্টানদের একটি কবরস্থান ও সেন্ট ইউফ্রেটিজ কনভেন্ট নামে সিস্টারদের একটি থাকার জায়গা। বড়দিন, ইস্টার সানডে’তে এখানে বড় উৎসবের আয়োজন থাকে।
কীভাবে যাবেন
নিজের গাড়ি করে যেতে পারলে সবচেয়ে ভাল হয়। গুলিস্তান গোলাপশাহ্ মাজার থেকে বান্দুরাগামি বাসে করে সোজা চলে যাবেন নবাবগঞ্জ। এছাড়া ঢাকার গুলিস্তান ও নয়াবাজার থেকে যমুনা, শিশির ও নবাবগঞ্জ পরিবহনের বাস চলাচল করে এই রুটে। ভাড়া জনপ্রতি ৫০-৬০ টাকা। এরপর এখান থেকে রিক্সা করে ঘুরে আসতে পারেন যে কোন জায়গা থেকে।