স্মার্টফোন ব্যবহার করে আসলেই কি স্মার্ট হওয়া যায়? আমার মতে, আপনি স্মার্ট হলে আপনার সেই স্মার্টনেসের পেছনে কাজ করবে আপনার জ্ঞান, বিচার এবং দৃষ্টি ভঙ্গি। স্মার্টফোন নয়। নইলে, স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে নিশ্চয়ই কোন রকমের ভ্রান্ত ধারণা বা সহজে যদি বলি 'মিথ' কাজ করতো না। আসলে তাদেরও দোষ দেয়া যায় না, সহজ সরল ব্যবহারকারীরা একান-ওকান হওয়া কথাগুলোতেই কেন যেন ভরসা করে থাকেন সবচাইতে বেশি। যাই হোক, আজ আমি আপনাদের সাথে ছোট্ট করে স্মার্টফোন সম্পর্কে ৫টি প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা শেয়ার করতে যাচ্ছি। আসা করি এর কোনটি যদি আপনার মনেও কাজ করে থাকে তবে আজকের পর তা কেটে যাবে।
টাস্ক কিলার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের গতি বৃদ্ধি করে
অনেকেই মনে করেন অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের টাস্ক কিলার টাইপের অ্যাপলিকেশন ব্যবহার করলে স্মার্টফোনের গতি বৃদ্ধি হয়। অনেকের ধারণা, একটি টাস্ক কিলার ব্যবহারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাপলিকেশন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে মুছে ফেলা যায় যা র্যাম রিসোর্সকে মুক্ত করে দেয় এবং ফলে স্মার্টফোন হয় আরও বেশি গতি সম্পন্ন।
তবে আমার মতে আপনার টাস্ক কিলার ব্যবহার করা উচিৎ নয় এমনকি ম্যানুয়ালি রিসেন্ট অ্যাপ লিস্ট থেকেও অ্যাপ মোছার দরকার নেই। কেননা তারা মোটামুটি ফ্রোজেন অবস্থায় ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকে। যদিও অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম বিভিন্ন অ্যাপলিকেশনকে ব্যাকগ্রাউন্ডে খুব বেশি রেস্ট্রিকশন ছাড়াই চলতে দেয় তবে কোন অ্যাপ মিসবিহেভ না করা পর্যন্ত তা টাস্ক কিলার দিয়ে মুছে দিয়ে লাভ নেই। কেননা ব্যাকগ্রাউন্ডে সেই অ্যাপটি কিছুক্ষণ পর মূলত রি-স্টার্ট নেয় যা প্রকৃতপক্ষে স্মার্টফোনকে আরও ধীর করে দেয়।
চার্জ দেয়ার পূর্বে সম্পুর্ণ ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে ফেলা উচিৎ
অনেকেই এখনো পূর্বের মত ব্যাটারির চার্জ সম্পুর্ণ শেষ না হবার আগে মোবাইল চার্জে দেন না। কিন্তু আধুনিক এই লিথিয়াম-আয়নের যুগে এর কোন প্রয়োজনই নেই। আপনি যখন খুশি তখন আপনার ব্যাটারিটি চার্জ করতে পারেন, ব্যাটারি ১০% অবশিষ্ট আছে না ৮০% - তা আপনার মাথা ঘামানোর কারণ হওয়া উচিৎ নয়। তবে মাঝে মধ্যে একবার পুরো চার্জ শেষ করে ব্যাটারি চার্জ করতে দিলে এটি বেশি সার্ভিস দিয়ে থাকে বলেই বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গিয়েছে।
ডিভাইসের সাথে আসা চার্জারই ব্যবহার করতে হবে
আধুনিক স্মার্টফোনগুলোর ইউএসবি চার্জারগুলো কিন্তু প্রায় সব ক্ষেত্রেই এক। তাই আপনি যদি ভাবেন যে আপনার স্মার্টফোনে আমার ফোনের চার্জারটি দিয়ে চার্জ দেয়া যাবেনা তাহলে আপনি এখনো সেকেলে। হয়তোবা আউটপুটের কম বেশির কারণে ডিফল্ট চার্জার ব্যবহার না করলে স্মার্টফোন কিছুটা দ্রুত বা ধীরভাবে চার্জ হয়ে থাকে তবে এখানে ক্ষতির কিছু নেই।
স্ক্র্যাচ থেকে বাঁচাবে স্ক্রিন প্রোটেক্টর
স্ক্রিন প্রটেক্টর হচ্ছে একটি পাতলা শিটের মত প্রোডাক্ট যা স্মার্টফোনের স্ক্রিনের উপরের অংশে জুড়ে দেয়া হয়। ফলে, কোন কিছুর আঘাত আর সরাসরি ডিভাইসের স্ক্রিনে লাগে না, লাগে স্ক্রিন প্রটেক্টরটিতে। আর তাই সবাই বর্তমানে স্মার্টফোন কিনেই স্ক্রিন প্রটেক্টর লাগিয়ে ফেলেন এবং এই ব্যাপারটি একটি রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায়।
কিন্তু আপনি খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন বর্তমানে বেশিরভাগ স্মার্টফোন গরিলা গ্লাস বা এর সমমানের টেকনোলজির সাথে আসে যা অত্যন্ত স্ক্র্যাচ রেজিস্ট্যান্ট গ্লাস। যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি খুব বেশি রাফ ব্যবহার না করবেন আপনার ফোনটি ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার স্মার্টফোনের পর্দার উপরে থাকা এই নিরাপত্তার স্তর বেশ ভালোই সাপোর্ট দিয়ে যাবে আপনাকে। তাই, স্ক্রিন প্রটেক্টরের দিন আর নেই বললেই চলে।
বেশি মেগাপিক্সেল মানেই ভালো ক্যামেরা
এখনো অনেক ব্যবহারকারী রয়েছেন যারা 'মেগা পিক্সেলের' হিসাব করে নতুন ডিভাইস কিনে থাকেন। হাস্যকর তবে সত্যি। তবে মজার বিষয় হচ্ছে মেগাপিক্সেল ছবির মান নয়, ছবির আকার নির্দেশ করে। ৮ মেগাপিক্সেলের তুলনায় ১৬ মেগাপিক্সেল খাতা কলমের হিসেবে প্রায় দ্বিগুণ ছবি তুলতে সক্ষম তবে সেগুলোতে যদি একই সেন্সর ব্যবহার করা হয় সেক্ষেত্রে আকার ছাড়া ছবির কোয়ালিটিতে পার্থক্য পাওয়া যাবেনা। তাই স্মার্টফোন কেনার সময় এখন থেকে আর মেগাপিক্সেল না বরং পারলে এর মধ্যে ব্যবহৃত সেন্সর, লেন্স এবং ইমেজ প্রসেসিং ফিচারগুলোই দেখে কেনা উচিৎ।