গত মার্চে রিভালদো বলেছিলেন, “আমি আমার ক্যারিয়ার তৈরি করেছিলাম আশ্চর্যজনকভাবে।”
ব্রাজিলের আনাচে-কানাচে থেকে ফুটবল প্রতিভার উত্থান নতুন নয় ফুটবলের এই দেশে। তবে নিজের বাহ্যিক পশ্চাদপদতার এতোটা পথ অতিক্রম করে আলোয় আসতে রিভালদোর মতো এতোটা কষ্ট কেউ করেন নি মনে হয়।
ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রেসিফের ফাভেলাস নামে পরিচিত এক অখ্যাত বস্তিতে ১৯৭২ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বড় দুই ভাই এবং ছোট দুই বোনের সাথে খাবার টেবিলে প্রায়ই অভাবে পড়তো তাঁর পরিবার। পুষ্টিহীনতার কারণে তিনি তাঁর সামনের দাঁত হারান এবং হাঁটুতে স্পষ্ট বাঁক দেখা যায়। ১৯৮৯ সালে ১৫ বছর বয়সে বাস দুর্ঘটনায় নিজের বাবাকে হারান রিভালদো।
তবে কোন কিছুই তাঁকে শিখরে পৌঁছানো থেকে বিরত রাখতে পারে নি। তাঁকে সকালে প্রায় আট কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে অনুশীলনে যেতে হতো। আর কিশোর বয়সে তাঁর দৈহিক অবস্থার জন্যে বেশকিছু কোচও ফিরিয়ে দেন তাঁকে। ১৯৯১ সালে ব্রাজিলের ক্লাব সান্তা ক্রুজের হয়ে যোগ দেন রিভালদো ভিতর বরবা ফেরেইরা। ফুটবল বুটে নিজেকে মানিয়ে নিতে এবং নিজের প্রতিভা প্রদর্শনে কিছুটা দেরি হলেও পাঁচ বছর পর তিনি স্প্যানিশ ক্লাব দেপোর্তিভো লা করুনায় যোগ দেন। আর এই ক্লাবের হয়ে ৪১ ম্যাচে তাঁর ২১ গোল বার্সেলোনার মতো বড় ক্লাবকে আকর্ষণ করার জন্যে যথেষ্ঠ।
১৯৯৭ সালে বার্সায় যোগ দেওয়ার পর তিনি তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা পাঁচ বছর পাড় করেন। কাতালানদের হয়ে ২৩৫ ম্যাচে ১৩০ গোল করার পাশাপাশি নিজেকে বিশ্বের অন্যতম আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন এই তারকা। বাম পায়ের কারুকার্যে এবং রক্ষণভাগকে তছনছ করে দেওয়ার ক্ষমতার কারণে অসাধারণ রিভালদো। ২০০১ সালে ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ৩-২ গোলের জয়ের পথে প্রথমে দুইবার দলকে সমতায় আনা এই ফুটবলার শেষ গোলটি করেন তাঁর বিখ্যাত বাইসাইকেল কিক থেকে। আর সেই গোলটি ফুটবলের অন্যতম “সিন্ড্রেলা” মুহূর্ত হিসেবে সুপরিচিত।
ব্রাজিলের চেয়ে বার্সেলোনায় ভালো খেলার জন্যে তখন বেশ সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে। আর নিন্দুকের মুখ বন্ধ করতে ২০০২ সালে বিশ্বকাপ শিরোপা জেতার মাধ্যমে ব্রাজিলের হয়ে নিজের সেরাটা দেন রিভালদো। আক্রমণত্রয়ী রোনালদো, রিভালদো এবং রনালদিনহোর সমন্বয়ে গড়া ব্রাজিলিও আক্রমণভাগের এই ফুটবলার দলের হয়ে প্রথম পাঁচ ম্যাচেই গোল করেন। তাঁর আট গোলের কল্যাণে গোল্ডেন বুট শিরোপা জিতে নেন এই তারকা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠের মধ্যভাগ থেকে অসাধারণ গোলটি করে রোনালদো পত্রিকার শিরোনাম হলেও ব্রাজিল কোচ লুইজ ফেলিপ স্কলারির মতে “টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় রিভালদো।”
রিভালদো নিজের ক্যারিয়ারে এসি মিলানের হয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা, বার্সেলোনার হয়ে দুইটি লা লিগা এবং একটি কোপা ডেল রে শিরোপা, ব্রাজিলের হয়ে একটি বিশ্বকাপ শিরোপা এবং ১৯৯৯ সালে ব্যালন ডি’ওর জেতেন। এই বছরের জুলাইয়ে ব্রাজিলের দ্বিতীয় বিভাগের দলে নিজ পুত্র রিভালদিনহোর সাথে মাঠে নেমে গোল করেন তিনি। পাশাপাশি, মাঠ ছাড়ার আগ পর্যন্ত দলের অন্য তিন গোলেও অবদান ছিল তাঁর।
“ট্রফি, মেডেল, পুরস্কার এবং শিরোপার যুগে যেখানে সবই ক্ষণস্থায়ী সেখানে আমার নিজের একটি গল্প আছে, হতে পারে আমি একটি উদাহরণ।” বলেন রিভালদো। সত্যিই বটে!