তার ক্যারিয়ারটা নানা রঙে রঙিন। এত চড়াই-উৎরাই, উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে আর কারও ক্যারিয়ার এগিয়েছে কি না সন্দেহ। ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারি, বর্ণবাদী আচরণ, ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ‘বিশ্বকাপটাই মাটিতে ফেলে দেওয়া’, ডোপ কেলেঙ্কারি অঙ্গাঅঙ্গিভাবেই জড়িত দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার হার্সেল গিবসের সঙ্গে। তো সেই গিবসের নামের সঙ্গেই কিন্তু জড়িয়ে আছে অনেকগুলো রেকর্ড। তবে সবচেয়ে বেশি যেটা উচ্চারিত হবে, সেটা হলো ওয়ানডে ক্রিকেটে এক ওভারের ছয় বলেই ছয় ছক্কা মারার সেই অবিশ্বাস্য রেকর্ডটির জন্য। যেটা মেরেছিলেন তিনি ২০০৭ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে।
সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্ক স্টেডিয়ামে প্রোটিয়াদের মুখোমুখি নেদারল্যান্ডস। টসে জিতে ডাচরা প্রথমে ফিল্ডিংই বেছে নিলেন। এবং শুরুতে ওপেনার এ বি ডি ভিলিয়ার্সের উইকেট তুলে নিয়ে চমক দেখাতে শুরু করে ডাচরা। তবে পুরো ম্যাচে হাসি শুধু ওই এক ওভারেই শেষ হয়ে যায় তাদের। এরপর শুরু স্মিথ, ক্যালিস, গিবস, বাউচারদের শাসন। ক্যালিস অপরাজিত ছিলেন ১২৮ রানে। ৬৭ রান করেন স্মিথ। ৭২ রান করেন গিবস আর ৭৫ রানে নট আউট মার্ক বাউচার। কার্টেল ওভারের ম্যাচের কারণে ৪০ ওভারেই প্রোটিয়াদের রান গিয়ে দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৩৫৩ রানের বিশাল পর্বতে। ৫০ ওভার পুরো খেলা হলে না জানি হত শেষ পর্যন্ত।
দুই দলের শক্তির বিচারে প্রোটিয়াদের এই ইনিংস খুব বেশি অবাক হওয়ার নয়। তবে ম্যাচটি সবচেয়ে বেশি স্মরনীয় হয়ে থাকবে গিবসের কল্যানেই। ৩০তম ওভারেই ডাচ বোলার ড্যান ফন বাঙয়ের বলগুলোকে একের পর এক যেভাবে মাঠের বাইরে পাঠাতে শুরু করেন, তাতে বিস্ময়ই তৈরী হচ্ছিল শুধু। এমন একটি ওভার কিংবা এমন একটি ইনিংস খেলার জন্য কখনওই বাজিকররা বাজি ধরতে সাহস করবেন না। শতাব্দীকালেও হয়তো এ ঘটনা আর ঘটবে না। জনি ওয়াকারের মত জুয়াড়ি কোম্পানিও চরম অনিশ্চয়তার এই জুয়াটি খেলতে যাবেন না। কিন্তু আসল খেলাটা খেলে দিলেন গিবসই। কোন বাজে শটই আসেনি গিবসের ব্যাট থেকে। কখনও লং অফের ওপর দিয়ে, আবার কখনও লং অনের ওপর দিয়ে, নতুবা মিডউইকেটের ওপর দিয়ে বলকে মাঠের বাইরে পাঠাতে শুরু করেন গিবস। ওয়ানডে ক্রিকেটে এ দৃশ্য যে শুধু একবারই ঘটেছিল!
ড্যান ফন বাঙকে একে একে প্রতিটি বলেই বাউন্ডারির ওপারে আছড়ে ফেলতে থাকেন গিবস। প্রতিটিই ওভার বাউন্ডারি। শেষ বলটিও যখন বাউন্ডারির ওপর দিয়ে ছক্কা মেরে দিলেন, এরপরই তৈরী হয়ে গেলো ওয়ানডে ইতিহাসের একক রেকর্ডটি। অবিশ্বাস্য রেকর্ডটি গড়ার পর গিবস বলেছিলেন, ‘আসলে তেমন কোন কিছুই মাথায় ছিল না। বলগুলো আসছিলই খেলার মত করে। আর আমিও খেলছিলাম। আমি ভাগ্যবান যে একে একে বাউন্ডারিগুলো আসছিল। কিন্তু ছয় বলে ছয় ছক্কা! এটা সত্যিই আমার কাছেও অবিশ্বাস্য। এটা বোনাস।’ কখনও মনে হয়েছিল ছয় বলে ছয় ছক্কা মারার কথা! গিবস জানিয়েছেন ওভারের মাঝ পথেই। জ্যাক ক্যালিসই নাকি তাকে পরামর্শ দেন।
গিবস বলেন, ‘ক্যালিস এসেই আমাকে জানাল চেষ্টা করলে রেকর্ডটি গড়তে পারি। এরপর চতুর্থ বলেও যখন ছক্কাটি চলে এলো, তখনই মনে মনে ভাবি, না চেষ্টা করে দেখি, হয় কি না।’ এরপর কী ঘটেছিল? জানিয়েছেন গিবস। তিনি বলেন, ‘চতুর্থ বলে চিন্তা করেছি ডাউন দ্য পিচ শট খেলতে যাবো। কিন্তু শেষ মুহুর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তণ করি এবং জায়গায় দাঁড়িয়েই শট খেলি। এরপরের বলেও। শেষ পর্যন্ত আমি পারলাম।’ অথচ, গিবসের এই অসাধারণ কীর্তিটি মাঠে থেকে সরাসরি উপভোগ করেছে মাত্র এক হাজার দর্শক। ম্যাচটিতে ১৩২ রানে অলআউট হয়ে, ২২১ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে নেদারল্যান্ডস।