Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Sports Image

এক ক্রিকেট মহা-নায়কের গল্প



১৯৭৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর, তাসমানিয়া প্রদেশের লন্সেসটনে পিতা গ্রেইম ও মাতা লরেইনের কোল জুড়ে জন্ম হয় অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের এক উজ্জল নক্ষত্রের। নক্ষত্র বললে ভুল হবে। চাঁদ বললেও কম হয়ে যাবে। তাই বলা চলে, ক্রিকেটের এক উজ্জল সুর্যের। যাকে ক্রিকেটের ঈশ্বর বলে সম্বোধন করা হয়। তিনি পান্টার ডাকনামে পরিচিত সাবেক প্রথিতযশা ব্যাটসম্যান ‘রিকি থমাস পন্টিং’।

পন্টিং তাদের চার ভাইবোনদের মধ্যে সবার বড়। পিতা গ্রেইম ছিলেন একজন ক্লাব ক্রিকেটার। তিনি রুলস ফুটবলেও কাজ করতেন। পন্টিংয়ের কাকা গ্রেগ ক্যাম্পবেল ছিলেন একজন টেস্ট খেলুড়ে। পিতা গ্রেইম ও কাকা গ্রেগের উৎসাহে ক্রিকেটে হাতখড়ি হয় পন্টিংয়ের।

বিদ্যালয়ে পড়াশুনা শেষে স্কচ ওকবার্ন কলেজে গ্রাউন্ডসম্যান হিসেবে কাজ করতেন। ১১ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ার অন্নুর্ধ-১২ দলের হয়ে ক্রিকেটে পা রাখেন পন্টিং। এক স্কুল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান টেড রিচার্ডসন তাকে দেখে বলেছিলেন “রিকি নিশ্চিতরূপেই ‘এ’ স্তরের ক্রিকেটার হিসেবে ডেভিড বুনের সমমান।”

রিকি ফুটবলার হিসেবেও নিজেকে পারদর্শী প্রমান করেন। তিনি রুলস ফুটবলে নর্থ মেলবোর্ন ক্যাঙ্গারুজ দলের হয়ে খেলতেন। কিন্তু, ১৩ বছর বয়সে খেলতে গিয়ে ডানহাতের হিউমেরাস ভেঙ্গে যায়। পরে তার ভাঙ্গা অংশে পিন লাগানো হয়। এরফলে, তিনি ১৪ সপ্তাহ বিছানায় শুয়ে কাটিয়েছিলেন। এরপর আর কখনও রিকি প্রফেশনাল ফুটবল খেলেননি। এতে তার ফুটবলার হবার সপ্নটা ভেঙ্গে যায়। এরপর ক্রিকেটার হিসেবেই নিজেকে বেছে নেন।

ইউনিভার্সিটি অব স্পোর্টস একাডেমির কোচ রড মার্শ বলেন “১৭ বছরে রিকির মত প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান তিনি কখনও দেখেননি। ১৯৯২ সালে ১৭ বছর ৩৩৭ দিন বয়সে তাসমানিয়ার পক্ষে পার্থের মাঠে অন্নুর্ধ-১৯ এ প্রথমশ্রেনীর ক্রিকেটে অভিষেক হয় পন্টিংয়ের। এরফলে তিনি ‘সর্বকনিষ্ঠ তাসমানিয়ান’ খেলোয়াড় হিসেবে মর্যাদা পান।

রিকিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার জন্য ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। নিউজিল্যান্ডে অনুশঠিত চারদেশীয় সিরিজে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিকে অভিষেক হয় পন্টিংয়ের। এর কয়েকদিন পর ২০ বছর বয়সে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে এই কিংবদন্তীর। শ্রীলংকার বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচেই ৯৬ রান করেন পন্টিং। এরপর তাকে দ্বিতীয় ডন ব্রাডম্যান বলে ডাকা হয়। এরপরের কিছুদিন জাতীয় দলে নিয়মানুবর্তিতা না মানার কারনে দলে নিয়মিত হতে পারেননি রিকি।

২০০২ সালে তাকে অস্ট্রেলিয়ান জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপরে বছরই সাউথ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের শিরোপা এনে দেন অস্ট্রেলিয়াকে। ২০০৪ সালে স্টিভ ওয়াহ অধিনায়ক পদ থেকে অবসর নিলে রিকিকে টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে মর্যাদা দেয় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। তার নেতৃত্বে ২০০৫ সালে অ্যাশেজে জয়লাভ করে। পন্টিংয়ের ১০০তম টেস্টে ২০০৬ সালে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ১২০ ও ১৪৩* রানের দুটি ইনিংস খেলেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে চার শীর্ষস্থানীয় ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার, জ্যাক ক্যালিস, রাহুল দ্রাবিড়ের সাথে ১৩০০০ রান নিয়ে তিনিও সম্পৃক্ত আছেন।



ক্রিকেট বোদ্ধাদের মতে, ভারতের শচীন টেন্ডুলকার এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান লারা’র সাথে তিনিও আধুনিক যুগের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিগণিত হয়ে আছেন। আরো একটি কারণ, যা শচীন ও লারার থেকে তাকে এগিয়ে রেখেছে তা হল অধিনায়কত্ব। একজন অধিনায়ক হিসেবে রিকি সবচেয়ে সফলতম। প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচ রিকির অধিনায়কত্বের কারনে অজিরা জিতেছে। প্রথমদিকে ৭৭ টি টেস্ট ম্যাচের মধ্যে ৪৮ টিতে বিজয় এনে দেন পান্টার।

টেস্টে ৫১ গড়ে রিকি ছিলেন সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাটসম্যানদের একজন। ১ ডিসেম্বর, ২০০৬ তারিখে প্রকাশিত টেস্ট ক্রিকেট রেটিংয়ে গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ র্যাঙ্কিংধারী টেস্ট ক্রিকেটার ছিলেন পন্টিং। তাঁর নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া দল ২০০৩ ও ২০০৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ ট্রফি জয়লাভ করেছিল। এছাড়াও তিনি স্টিভ ওয়াহ’র নেতৃত্বাধীন ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট জয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন।



২০১২ সালের ২৯ নভেম্বর তার ১৬৮তম টেস্টে অবসরের ঘোষণা দেন পন্টিং। ফলে, ৩ ডিসেম্বর ৫১.৮৫ গড়ে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি। এইদিনটি ছিল তার ভক্তদের জন্য দুঃখের দিন।

রিকি ছিলেন স্বার্থহীন ক্রিকেটার। ৮০/৯০ এর ঘরে তার অনেক ভুড়ি ভুড়ি ইনিংস আছে যেগুলো তিনি সেঞ্চুরী করতে পারতেন। যারফলে, তিনি বহু আগেই শচীনকে পিছনে ফেলতে পারতেন।

এক প্রকার বলা যায় , রিকির মত ক্রিকেটার ক্রিকেটে আর আসবে না।

“রিকি পন্টিং এক এবং অদ্বিতীয়।”

“রিকিই ক্রিকেট দেখার অনুপ্রেরণা, রিকিই ক্রিকেট।”