এভাব বদলে যাবে জীবনটা কখনও কি ভেবেছিল নিউজিল্যান্ডের এই বোলার? কখনও কি ভেবেছিলেন ক্রিকেট বল ছেড়ে হাতে তুলে নিতে হবে ট্রাকের স্টিয়ারিং৷ যা তাঁকে নিয়ে যাবে এমন জায়গায় যেটা তো ছিল না ক্রিস কেয়ার্নসের জন্য৷ একটা সময় ছিল তাঁর গাড়িকে তাড়া করত সংবাদ মাধ্যম৷ তখনও কখনও কখনও সংবাদ মাধ্যমের হাত থেকে বাঁচতে পালাতেন৷ আজও পালান কিন্তু সেটা লজ্জায়৷ আজ আর তার জন্য ক্যামেরা তাক করে বসে থাকে না ফটোগ্রাফাররা৷ আজও কেয়ার্নেসর চোখ খোঁজে উৎসুক চোখ৷ যে চোখ দেখলেই নিজেকে লুকিয়ে ফেলেন লাফলারের আড়ালে৷ এভাবেই বদলে যায় জীবনের প্রেক্ষাপট৷ বদলে যায় বাস্তবের চিত্রনাট্য৷ লেখা হয় পুরনো কাগজে নতুন কাহিনী৷ চরিত্রগুলো শুধু বদলায় না৷ বদলে যায় চার পাশ৷ বদলে যায় জীবন যাত্রা৷ ক্রিস কেয়ার্নসের জীবন হার মানায় টান টান হলিউডের চিত্রনাট্যকেও৷ একদিন নিশ্চয় রূপলি পর্দায় ফুটে উঠবে এই কাহিনী নিশ্চিত৷ কিন্তু বাস্তবটা যে বড়ই কঠিন৷
এই তো সেদিনের কথা৷ ২০১০ সাল৷ নিজের তৃতীয় স্ত্রীকে তিনি প্রপোজ করেছিলেন ৩.২ ক্যারেট হিরের আংটি দিয়ে৷ তখন যুক্ত ছিলেন দুবাাইয়ে ডায়মন্ড ব্যবসার সঙ্গে৷ এর পরই জড়িয়ে পরেন ম্যাচ ফিক্সিংয়ে৷ নেমে আসতে হয় রাস্তায়৷ সরে যেতে হয় ক্রিকেট থেকে৷ বেছে নিতে হয় এমন এক চাকরী যেটা করার কথা ছিল না ক্রিস কেয়ার্নসের মতো উচ্চমানের এক ক্রিকেটারের৷ কিন্তু জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে এই পদক্ষেপটাই ছিল তখন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ৷ বাঁচতে হবে, বাঁচাতে হবে পরিবারকে৷ কিন্তু টাকা কোথায়? সঙ্গে রয়েছে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের কেস৷ যা লড়তে ততদিনে ফতুর হয়ে গিয়েছেন কেয়ার্নস৷ প্রতিদিন দু’মুঠো খাবারও জোগার করা তখন দুস্কর হয়ে উঠেছে৷ শেষ পর্যন্ত বেছে নিতে হল, অকল্যান্ড কাউন্সিলের বাস টার্মিনাস পরিস্কার করার কাজ৷ ঘণ্টার ১৭ ডলার৷ ময়লা বহন করার ট্রাক নিজেই চালিয়ে যান সেই বাস টার্মিনাসে৷ সেখান থেকে ময়লা পরিস্কার করেন৷ এখন এভাবেই চলছে কেয়ার্নসের চার সন্তান ও স্ত্রীর সংসার৷ সঙ্গে আদালতে ফিক্সিংয়ের কেস৷
কেয়ার্নসের পাশে দাড়িয়েছেন নিউজল্যান্ডের আর এক প্রাক্তন ক্রিকেটার ডিওন ন্যাশ৷ তিনি বলেন, ‘‘ও চেষ্টা করছে পরিবারের পাশে দাড়াতে৷ পরিবার যাতে কোনও সমস্যায় না পরে তার জন্য জান প্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ ওর ক্ষমতা রয়েছে৷ ও যথাসাধ্য করছে৷ বাস শেল্টার পরিস্কারের কাজ করেছে৷ বন্ধু হিসেবে আমার যা করার আমি করব৷ কিন্তু দেখলে খারাপ লাগে একজন এই পর্যায়ের ক্রিকেটারের নাম এভাবে ধুলোয় মেশানো হচ্ছে৷ কিন্তু কেসের কোনও ফল বেড়চ্ছে না৷ তবে আমার বিশ্বাস ওর মধ্যে যে লড়াইয়ের ক্ষমতা রয়েছে ও সেটা দিয়ে বেড়িয়ে আসবেই৷’’ তিন বছর আগেও দুবাইতে ডায়মন্ড ট্রেডার হিসেবে কাজ করছিলেন৷ কেয়ার্নসের স্ত্রী ক্রোসার একটি সংস্থায় প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন৷ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনিই জানিয়েছিলেন, পরিবার চালাতে ও কেসের খরচ চালাতে কেয়ার্নসকে এখন এই কাজ করতে হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘ওর কাছে আর কোনও বিকল্প ছিল না৷ আমাদের সব বিল দিতে হচ্ছে যা সবাই দেয়৷ আমাদের এখন নিজের বাড়ি নেই৷ আমরা ভাড়া বাড়িতে থাকছি৷’’