Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

বর্ষায় রাঙ্গামাটির পথে



বর্ষায় অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়ে ওঠে পাহাড়িয়া শহর রাঙ্গামাটি। চারদিকে হ্রদ, এরই মাঝখানে পাহাড়ের গায়ে রাঙ্গামাটি শহর। বর্ষায় এখানের হ্রদ ও কর্ণফুলী নদীপথে জলে থই থই করে। মনে হয়, রাঙ্গামাটি হ্রদের শহর। বর্ষায় এখানে হ্রদ দেখায় আনন্দ আছে। নীল নব ঘনে আষাঢ় গগনে... আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে... বর্ষায় রাঙ্গামাটিতে গেলে কবিগুরুর কথা কেউ মানতে চায় না। যতই বর্ষা হোক না কেন, ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে হ্রদ হয়ে দূরে বহুদূরে হারিয়ে যেতে মন চায়। বর্ষায় রাঙ্গামাটির যেদিকে যাবেন সেদিকেই হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হবে। এমন নয়নলোভা জায়গা পাহাড়িয়া রাঙ্গামাটি। বাংলার সব সৌন্দর্য এখানে এসে উছলে পড়েছে...। যেদিকে চোখ যায় তখন মনে হয়, আমরা আসব বলেই কি রাঙ্গামাটি বুঝি রঙিন হয়ে সেজে বসে আছে। রাঙ্গামাটি হয়ে শুভলং কিংবা বরকলের দিকে গেলে দেখবেন নদীর দুই পাশে পাহাড়, অরণ্য আর ঝরনা। নৌকায় বসে ঝরনার সৌন্দর্য উপভোগ করা জীবনের স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকতে পারে। ঝুমুর ঝুমুর নূপুর বাজে ঐ পাহাড়ে... এরকম মনে হবে কখনও কখনও। হ্রদের পর হ্রদ দেখে দূরে বহুদূরে চলে যেতে ইচ্ছে হবে।
যেভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটি যাওয়ার জন্য রয়েছে ডলফিন পরিবহন। ইচ্ছে করলে হানিফ পরিবহন, টোকিও লাইন, গ্রিন লাইনের যে কোনও একটি পরিবহনে চট্টগ্রাম গিয়ে এরপর রাঙ্গামাটির বাস ধরে রাঙ্গামাটিতে। চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটি পৌঁছতে ১ ঘণ্টা সময় লাগে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে হানিফ পরিবহনে যেতে চাইলে আগেভাগে টিকিট বুকিং দিন। এজন্য যোগাযোগ করুন ম্যানেজার আবদুস সামাদ মণ্ডলের সঙ্গে। ফোন-০১৭১১-৮৮৩৬৮৯।

হোটেলের খোঁজখবর : রাঙ্গামাটিতে রাত যাপন করার জন্য পর্যটনের মোটেল, হোটেল সুফিয়া, হোটেল জেরিন, মধুমতি, গোল্ডেন হিল, বনফুল, ডিগনেটি, শাপলা, সৈকত প্রভৃতি রয়েছে। যেখানে পছন্দ হয় সেখানে উঠুন। তবে পর্যটন মোটেলে ভাড়াটা একটু বেশি।

যা যা দেখবেন : বাস থেকে রাঙ্গামাটি নেমে এক স্বপ্নের ভুবনে হারিয়ে যাবেন। এখানে দেখার জায়গা অনেক। দু-তিন দিন কাটিয়েও মন ভরে না। ইচ্ছে হবে আরও কয়েকদিন থাকার। এখানকার মতো এদেশে আর কোথাও এমন পাহাড়ি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দর্শন কিন্তু আর কোথাও সহজে মেলে না। এখানের চারদিকে রয়েছে সোনালি আর রুপালি খেলা। রাঙ্গামাটির হ্রদে বেড়ানোর জন্য নৌকা, স্পিডবোট রয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে নৌকা নিয়ে হ্রদে বেড়াতে ইচ্ছে হবে। তাহলে বুঝতে পারবেন হ্রদ কত যে সুন্দর, কত যে বিচিত্র এর রূপ। ঝরনা রয়েছে এখানে অনেক। পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরছে ঝরনা। এখানে গিয়ে পানি স্পর্শ করুন বেশ ভালোই লাগবে। ঝুলন্ত সেতু দেখবেন পর্যটন কমপ্লেক্স এলাকায়। এটি পেরিয়ে এপার থেকে ওপারে কয়েকবার গিয়েও মন ভরবে না। তাই এখানে বারবার ছুটে আসতে মন চাইবে। ঝুলন্ত পুল পেরিয়ে একটু দক্ষিণে এলেই দেখবেন বসবার জন্য বেঞ্চ রয়েছে। একটি বিকেল না হয় এখানে কাটিয়ে দিন। তখন চারদিকের নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে আপনিও হয়তো কোনও না কোনও গানের কথা ভাববেন। কুচ বরণ কন্যারে তোর মেঘ বরণ কেশ/ আমায় লয়ে যাওরে নদী সেই যে কন্যার দেশ/পরনে তার মেঘ ডম্বুর উদয় তারার শাড়ি... গানের এ কথাগুলো বারবার হদয়ে দোল খেয়ে যাবে।

রাঙ্গামাটির একটি সুন্দর দর্শনীয় স্থান রাজবন বিহার। এটি রাঙ্গামাটি শহরে ঢুকতেই খাগড়াতে অবস্থিত। এখানে চারদিকেই টিলা-পাহাড়। দূরের টিলা পাহাড়গুলো অবশ্য জঙ্গলে ঢাকা। বর্ষাকালে রাঙ্গামাটির হ্রদে যৌবনের ঢল নামে। রাজবন বৌদ্ধবিহার ঘুরে দেখতে পারেন।
এখানে চারদিকে আরণ্যক পরিবেশে বিহার আর মন্দির দুটি অপরিসীম শান্তির জয়গা মনে হবে। ডিঙ্গিতে চেপে কর্ণফুলী নদী পেরিয়ে আরেকটি টিলায় এসে এবার চাকমা রাজার বাড়ি দেখুন। রাঙ্গামাটির উপজাতি সংস্কৃতি জাদুঘরটি দেখে নিতে পারেন। উপজাতীয়দের আর্থ-সামাজিক জীবনের সুন্দর প্রতিফলন উঠেছে এই জাদুঘরে। দূরের পাহাড় অরণ্যাঞ্চলে যাওয়ার সময় কিছুটা ভয় ভয় লাগবে; তবুও আনন্দ আছে এখানের সৌন্দর্য উপভোগ করে, বার বার এই রাঙ্গামাটিতে উদার সম্ভারে গরিয়সী মনে হবে।

যা যা জানবেন : এখানে বেড়াতে গিয়ে জানবেন, চট্টগ্রামের ৪৮ মাইল পূর্বে এবং কাপ্তাইয়ের ২০ মাইল উত্তরে রাঙ্গামাটির অবস্থান। বনাঞ্চল কেটে ১৯৬০ সালে তৈরি করা হয় রাঙ্গামাটি শহর। এই শহরে ও আশপাশের পাহাড়িয়া এলাকায় বাস করে চাকমা, মগ, টিপরা, খুমি, মুরংসহ অন্যান্য উপজাতি।