এবারও দাঁড়িয়ে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ের একটা জুটি। অধিনায়ক এলটন চিগুম্বুরার সাথে ৮০ রানের জুটি গড়ে ভালই এগিয়ে যাচ্ছিলেন শন উইলিয়ামস। এরপর ম্যালকম ওয়ালারে সাথেও ৫৯ রানের জুটি গড়ে প্রথমবারের মত তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে জয়ের মুখ দেখার পথেই ছিল জিম্বাবুয়ে। সেদিক থেকে ম্যাচটা ‘কঠিন’ই ছিল।
আর জিম্বাবুয়ের এই পতনের প্রথম শুরুটা করেন সাব্বির রহমান রুম্মান। অসাধারণ এক কুইকারে বোল্ড হয়ে ফিরে যান চিগুম্বুরা। এরপর ৫৯ রান পর শুরু হয় আসল মৃত্যুর মিছিল। আর সেই মৃত্যুর কারণ মুস্তাফিজুর রহমান নামের একজন। মাত্র ২৯ রানের মধ্যে জিম্বাবুয়ে ইনিংসের শেষ ছয়টা উইকেটের পতন ঘটে।
ব্যাস, হয়ে গেল, হোয়াইটওয়াশ; যার আদুরে নাম ‘বাংলাওয়াশ’। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়েকে ৬১ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে বড় ৩-০ ব্যবধানেই সিরিজ জিতে গেল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
একের পর এক হারের পর গত বছরের ডিসেম্বরেই জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করেই জয়রথটা শুরু করেছিলো বাংলাদেশ দল। পরের বছরের শেষ দিকেও একই ঘটনায় পুনরাবৃত্তি। টানা একটা বছরে একটা সিরিজেও হারেনি বাংলাদেশ।
আগের দুই ম্যাচে সহজ জয়। শেষ ম্যাচে সমর্থকদের মনে প্রশ্নের শেষ নেই। আগের ম্যাচে ৭৬ রানের ইনিংস খেলা ওপেনার ইমরুল কায়েসকে সরিয়ে নামছেন কি এনামুল হক বিজয়? কিংবা অভিষেক কি হচ্ছে কামরুল ইসলাম রাব্বির? না, অপরিবর্তিত দল নিয়েই মাঠে নামতে দেখা গেলো মাশরাফিকে। কারণটা সহজ, চাই ১১তম হোয়াইটওয়াশ।
পরের গল্পটা বছর খানেক আগে হলে হয়তো রূপকথার মতোই মনে হতো। কিন্তু গত বছরে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করার মধ্যে দিয়ে যে সূচনাটা করেছিলো বাংলাদেশ, তার শিকার হয়েছে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। পরপর তিনটি ওয়ানডে সিরিজ জয়। এরই মধ্যে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার ঘটনাও উল্লেখযোগ্য। জানিয়ে রাখা ভালো, ১৯৯৯ আইসিসি চ্যাম্পিয়নশিপে পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র জয় পাওয়া সেই বাংলাদেশই চলতি বছরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে দলটিকে।
বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের দেওয়া ২৭৭ রানের লক্ষ্য খেলতে নেমে ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমানের বলে রানেই গুটিয়ে যায় সফরকারী জিম্বাবুয়ে দল। দলের পক্ষে শন উইলিয়ামস সর্বোচ্চ ৬৪ রান তুলতে সমর্থ হন। অন্যদিকে, অধিনায়ক এলটন চিগুম্বুরার ব্যাট থেকে আসে ৪৫ রানের ইনিংস। বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ম্যাচে সাকিব আল হাসানের পর তৃতীয় ম্যাচে পাঁচ উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজুর রহমান।
বাংলাদেশের প্রথম ১০ ওভারে রান ছিল ৪৭, ২০ ওভারে তা দাঁড়ায় ৯০, পরবর্তী আট ওভারে ১৩৯। এভাবে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে অতিথি বোলারদের পথহারা বানিয়ে ছাড়েন দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল এবং ইমরুল কায়েস। শেষপর্যন্ত ১৪৭ রানের জুটি গড়েন তারা।
দুই ম্যাচে সুযোগ পেয়েই টানা হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন ইমরুল কায়েস। এটা তার ক্যারিয়ারের ১২তম হাফ সেঞ্চুরি। এর আগে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে করেছিলেন ৭৬ রান। কায়েসের পাশাপাশি এদিন তামিমও হাফ সেঞ্চুরি করেন। ইনিংসের ২৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ৫০ পূর্ণ করেন তিনি।
ওপেনিং জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড থেকে মাত্র ২৩ রান দূরে থাকতে সাজঘরে ফিরেছেন ইমরুল কায়েস (৭৩)। ইনিংসের ৩০ তম ওভারে সিকান্দার রাজার বলে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন তিনি। চার ওভারের ব্যবধানে ইনিংসের ৩৫ তম ওভারে গ্রায়েম ক্রেমারের বলে তামিম ইকবালও স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। এরই মধ্যে মিরপুরে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন।
মজার ব্যাপার হল, তামিম এবং ইমরুল দু’জনেই ৭৩ রান করে আউট হয়েছেন। আর কাকতালীয় ভাবে, দ ‘জনেই আউট হয়েছেন স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হয়ে।
তামিম-ইমরুল বিদায় নেওয়ার পর দলের হাল ধরেন মুশফিকুর রহিম এবং লিটন কুমার দাস। কিন্তু, ইনিংসের ৩৮ তম ওভারে আবারো আঘাত হানে জিম্বাবুয়ে। এবারের শিকার মুশফিকুর রহিম, আর শিকারী ম্যালকম ওয়ালার। অবাক করার মত ব্যাপার হলেও সত্যি মুশফিক সাজঘরে ফেরেন স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হয়ে। আউট হওয়ার আগে মুশফিক করেন ২৮ রান। ২৫ বলে ১১২.০০ স্ট্রাইকরেটে তিনটি চারের সাহায্যে এই রান করেন তিনি।
এই সিরিজে রান খরায় ভুগতে থাকা লিটন দাস এই ম্যাচেও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হয়েছেন। ব্যক্তিগত ১৭ রানের মাথায় সাজঘরে ফেরেন তিনি। ৪৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ক্রেমারের শরীরের ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি রুম করে এক্সট্রা কাভার দিয়ে উড়িয়ে মারতে যান লিটন। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে চোখ জুড়ানো ক্যাচ নেন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা।
লিটন দাস আউট হওয়ার পর ক্রিজে আসেন আগের ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ান সাব্বির রহমান। কিন্তু মাত্র এক রান করতেই তাকে সাজঘরে ফেরান লুক জোঙ্গে। মাত্র দুই বল পরেই রানের খাতা খোলার আগেই নাসির হোসেনকেও একইভাবে আউট করেন জোঙ্গে।
এরপর দলের হাল ধরেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এবং অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। দুজনেই হাত খুলে খেলতে থাকেন। দলীয় স্কোর ২৫০ পার হয়ে এই দুজনের ব্যাটেই। মাশরাফি তিনটি চারের সাহায্যে মাত্র ৯ বলেই ১৫ রান করেন। ইনিংসের ৪৮ তম ওভারে পানিয়াঙ্গারার বলে বোল্ড হন তিনি।
মাশরাফি আউট হয়ে গেলেও হাফ সেঞ্চুরি করেই মাঠ ছাড়েন রিয়াদ। শুরু থেকেই ছিলেন কিছুটা আক্রমণাত্মক। রিয়াদ মাত্র ৩৮ বলেই তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। এটা তার ক্যারিয়ারের ১৩ তম হাফ সেঞ্চুরি।
ইনিংস শেষ হওয়ার মাত্র এক বল আগে রান আউট হয়ে যান রিয়াদ। তবে আউট হওয়ার আগে রিয়াদ করেন ৪০ বলে ৫২ রান। হাঁকিয়েছেন দৃষ্টিনন্দন পাঁচটি চার এবং একটি ছক্কা।
শেষ বলে দুই রান নিতে গিয়ে আরো একটি উইকেটের পতন ঘটে বাংলাদেশের। আরাফাত সানী অপরাজিত থাকেন তিন রানে। বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় আট উইকেটে ২৭৬ রান। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পায় ১৪৫ রানের। দ্বিতীয় ম্যাচে ৫৮ রানের জয়ে সিরিজে এগিয়ে যায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। শেষ পাঁচ ওয়ানডের চারটিতেই জয় লাভ করেছে মাশরাফিরা।
ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন ওপেনার তামিম ইকবাল। সিরিজ সেরা মুশফিকুর রহিম। শেষ ম্যাচে সেরা বাংলাদেশি ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতেছেন মুস্তাফিজুর রহমান।