Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Sports Image

ব্রায়ান চার্লস লারা




শচীন নাকি এ যুগের ব্র্যাডম্যান! আর ব্রায়ান লারা?
-রেকর্ডের বরপুত্র। ক্রিকেটে শচীনের এত এত রেকর্ড। তবুও রেকর্ডের বরপুত্রের খ্যাতি লারার। ক্রিকেট পণ্ডিতরা বলেন, ব্র্যাডম্যানের পর দ্রুত রান তোলায় লারাই সেরা। তাকে এ স্বীকৃতিটা কিন্তু এমনিতেই দেওয়া হয়নি। ব্যাটের ঝলকানিতে আদায় করে নিয়েছেন লারা।
লারার ব্যাটিং মানেই রান ফোয়ারা! একদিনে ৩০০ রান! অনেক আগ্রাসী ব্যাটসম্যানও হয়তো বলবেন এ তো অসম্ভব? সেই অসম্ভব কাজটি তিনি করেছেন আজ থেকে ১৭ বছর আগে। ১৯৯৪ সালের ৬ জুন। ব্রায়ান লারা একদিনেই করেন ৩০০ রান।
কাউন্টিতে তার ৫০১ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংসটির কথা কি মনে আছে? প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে এক ইনিংসে এটাই প্রথম কোনো ব্যাটসম্যানের পাঁচ শতাধিক রান। জি ই মরিসকোকে বাউন্ডারি মেরেই রানের এই এভারেস্টে পা রাখেন লারা।
-সেই ইতিহাস গড়ার পথে মাত্র ১৯তম ক্রিকেটার হিসেবে তিনি একদিনে তিন শতাধিক রান করার রেকর্ডটিও গড়েন। কাউন্টিতে ওরউইকশায়ারের হয়ে খেলা এ ইনিংসটিই এখনও প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। ইতিহাসেরও প্রথম। হানিফ মোহাম্মদের ৪৯৯ রানই ছিল আগের সেরা। তাকে পেছনে ফেলে সবার ওপরে আরোহণ করেন লারা। যা আজও অমলিন।
সেই মহাকাব্য রচনার পথে প্রতিটি রানের সঙ্গে সঙ্গে যেন একেকটি রেকর্ড তার পদতলে লুটিয়ে পড়ছিল। এগুলোরই একটি একদিনে সর্বোচ্চ রান। একদিনে ৩৪৫ রান করা সিজে ম্যাকার্টিনে পড়ে যান পেছনে। ১৯২১ সালে ট্রেন্ট ব্রিজে ম্যাকার্টিনে তার রেকর্ড গড়েছিলেন। ৭৩ বছর পর লারা সেটি নিজের করে নেন।

রেকর্ড রেকর্ড আর রেকর্ড। ওই ৫০০ রানের পথে কত যে মাইলস্টোন স্পর্শ করেছেন লারা তার ইয়াত্তা নেই! এই ধরুন না বাউন্ডারি, ৬০টি চার এবং ৯টি ছক্কা-মোট ৬৯টি। এটাও নতুন এক ইতিহাস! যা আজও অক্ষত। অনেকদিন রেকর্ডটি নিজের করে রাখা পিএ পেরিনকে নেমে যেতে হয় দুই নম্বরে। পেরিনের ছিল ৬৮টি বাউন্ডারি। তবে তার সবই ছিল চার। একটিও ছক্কা ছিল না।
বীরোচিত পাঁচশর পথে লারা স্পর্শ করেন ডন ব্র্যাডম্যানকেও। ৩২৫ রানের মাথায় মাত্র সাত ইনিংসে তিনি ওই বছর হাজার রানের মাইলস্টোন স্পর্শ করেন। ১৯৩৮ সালে ডন ব্র্যাডম্যানের রেকর্ড ছোঁয়া তাতেই। ৩৮৬ রান করে বাঁহাতিদের মধ্যে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডটিও তিনি টপকে যান এ ইনিংসেই। আগের কৃতিত্ব ছিল বি সাচলিফিফের ৩৮৫। ক্রাইস্টচার্চে ১৯৫২-৫৩ মৌসুমে সাচলিফিফ তার রেকর্ডটি গড়েছিলেন।
লিখলে লারার এ মহাকাব্য নিয়ে আরেকটি মহাকাব্যই রচনা করা যাবে। ১০০ পেরিয়েই তো তিনি একটি ইউনিক রেকর্ড গড়ে ফেলেন। টানা আট ইনিংসে সাত সেঞ্চুরি। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে এ অর্জনও অন্য কারও নেই। আগের রেকর্ড ছিল সাত ইনিংসে ছয় সেঞ্চুরি। একটি মাত্র ইনিংসে এত এত রেকর্ড! পুরো ইনিংসটাতে তাহলে কত রেকর্ড লারার?
-লারা ‘রেকর্ডের বরপুত্র’এ নিয়ে কি এখনও কারও মনে দ্বিমত আছে?
থাকাটা মোটেই যুক্তিযুক্ত হবে না।
এতসব অর্জনের পরও ম্যাচ শেষে নিজেকে নিয়ে লারার মূল্যায়ন ছিল, ‘আমি মনে করি না এই ৫০০ আমাকে গ্রেট ক্রিকেটারে পরিণত করেছে। আমার এখনও শেখার আছে।’


শুনে বিস্মিত হবেন, এজবাস্টনে রানের সে শৃঙ্গে পৌঁছার মাত্র দুই মাস আগে টেস্টের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন লারা। অ্যান্টিগায় লারার ৩৭৫ রানের ইনিংসটি প্রায় এক দশক টিকে ছিল। অস্ট্রেলিয়ার হেইডেন ৩৮০ করে তাকে দুই নম্বরে ঠেলে দিয়েছিলেন। ২০০৩ সালে পার্থে লারাকে টপকান হেইডেন। কয়েক মাস পরই ‘ক্যারিবীয় যুবরাজ’ পুনরুদ্ধার করে ফেলেন। ২০০৪ সালের ১২ এপ্রিলেই রেকর্ডটি আবারও লারার।
সে পুনরুদ্ধারটা আরেকটি প্রথমের জন্ম দিয়ে। হেইডেন সর্বোচ্চ টেস্ট ইনিংস খেলার আনন্দটা বেশিদিন উদযাপন করতে পারেননি। মাত্র ১৮৫ দিন এবং ১৯ ইনিংস পরই লারা যে তাজ পুনরুদ্ধার করেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রচিত হয় আরেক মহাকাব্য! প্রায় সোয়াশ বছরের টেস্ট ইতিহাসে যা কেউ করে দেখাতে পারেননি ক্রিকেট বিশ্ব প্রথমবার তাই-ই দেখল। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এক ইনিংসে ৪০০ রানের নতুন ইতিহাস!
যেন কাকতালীয়! লারার ৩৭৫ ছিল অ্যান্টিগায়। এবং ৪০০ রানের ইনিংসও অ্যান্টিগায়। মজার বিষয় হল-দুটিতেই প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। মিল রয়েছে আরও।
-দুটি ইনিংসই এপ্রিল মাসে। আরও মিল রয়েছে আরও।
-দুটি ম্যাচেই তিনি প্রথম ইনিংসে রেকর্ড দুটি গড়েন। মিল রয়েছে আরও একটি।
-যেটা লারার কাম্য ছিল না মোটেও। দুটি ম্যাচের একটিতেও যে তার দল জিততে পারেনি। সে কারণেই পরের মিলটা তার কি একটু নিরানন্দে কাটেনি!
-এই মিলটা হল দুটিতেই তিনি ম্যাচসেরা।
এ ৪০০ রান আসে ৫৮২ বলে। ৪৩ চার এবং ৪টি ছক্কায়। স্ট্রাইক রেট ৬৮.৭২। লারার ইনিংসে ভর করে ৭৫১ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা উইন্ডিজের। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি আর ব্যাট করার সুযোগই পাননি।
কোনো ইংলিশ বোলারই ওই ম্যাচে তার কাছে পাত্তা পাননি। তবে সবচেয়ে বেশি মারটা খেয়েছিলেন ম্যাথুউ হগার্ড। তার বিপক্ষে খেলা ৩৭ বলে লারা রান নেন ৫০। স্ট্রাইক রেট ১৩৫। হার্মিসনের ১০১ বলে ৩৮। ফ্লিনটফের ১১১ বলে ২৬। এ দুজন সামান্য সমীহ পান যদিও, বাকিরা সবাই খেয়েছেন পিটুনি। সায়মন জোনস ৮৭ বলে ৮৩, ব্যাটি ১৬১ বলে ১৩০ রান। লারাকে আউট করতে বল হাতে তুলে নিয়েছেন মাইকেল ভন ও ট্রেসকোথিকও। ভনের ৪৫ বল খেলে লারা রান নেন ৩৬। আর ট্রেসকোথিক ৪০ বলে দেন ২৭ রান। লারার এ ইতিহাসের সাক্ষী গেইল-সারওয়ান। এক প্রান্তে লারা রান উত্সব করছিলেন, অন্য প্রান্তে তা উপভোগ করেন গেইল-সারওয়ান ছাড়াও পাওয়েল এবং হাইন্ডস। লারার ৪০০ তাদের সঙ্গে চারটি পার্টনারশিপেই। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবদান সারওয়ানের।
সহজাত এক স্ট্রোক প্লেয়ার ছিলেন লারা। কবিতার মতো সব শট খেলতেন। ক্ষণজন্মা ক্রিকেটার লারার ব্যাটিং মানেই ছিল নান্দনিকতা! একপায়ে ভর দিয়ে খেলা পুল শটগুলো ছিল রীতিমতো চোখ ধাঁধানো। তার উইকেটে থাকা মানেই ছিল বাড়তি বিনোদন। পাঁচদিনের ম্যাচেও থাকত প্রাণের স্পন্দন!