Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Entertainment Image

আলো নিভে গেল ঝল মলে কান উৎসবের



রাত পোহালেই এবারের মতো শেষ হতে চলেছে বিশ্বের প্রাচীন ও প্রভাবশালী চলচ্চিত্র উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০১৫’। ১৩ মে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পর্দা উঠেছিলো কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৬৮তম আসরের।

১২দিন ব্যাপী বিশ্বের নামীদামি তারকারা এখানে অবস্থান করেছেন। আর এই বারো দিন তারার আলোয় জাজ্বল্যমান ছিলো ফ্রান্সের ঠিক দক্ষিণের শহর ‘কান’! ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা আর এশিয়ার প্রভাবশালী বিনোদন তারকাদের উপস্থিতিতে এক অন্যরকম আবহে মেতেছিলো সমস্ত কান শহর। এ এক অভূতপূর্ব মন মাতিয়ে দেয়ার দৃশ্য, যেদিকেই তাকানো যায় সেদিকেই তারকাদের ছুটোছুটি। রাস্তা-ঘাট, মার্কেট এমনকি সি-বীচেও যেনো তারকাদের ভিড় লেগেই আছে। অথচ যেনো চোখের পলকেই ২৪ মে শেষ হতে চলছে বিশ্বের মর্যাদা ও গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র এই উৎসবটি। কান উৎসবের পর্দা নামার আগে এবারের আসরে ঘটে যাওয়া কানের আভ্যন্তরিন কিছু ঘটনা জেনে নেওয়া যাক।

যতো আগ্রহ ছিলো ‘রেড কার্পেট’ নিয়ে

প্রতিবারের মতো এবারো কান চলচ্চিত্র উৎসবের সবচেয়ে আগ্রহের জায়গা ‘রেড কার্পেট’। বিনোদন জগতের সব তারকারা এই রেড কার্পেট মাড়িয়েই মূল উৎসবে যোগ দেন। এই রেড কার্পেটের দুই পাশে সাংবাদিকরা ভিড় করে থাকেন তারকাদের কার্পেটে হাঁটার ছবি তোলার জন্য। এই ‘রেড কার্পেট’ মূলত ২২ গজের লাল রঙের একটি কার্পেট। এই ‘রেড কার্পেট’ বা ‘লাল গালিচা’ দিনে তিনবার পরিবর্তন করা হয়।


সুন্দরীদের মিলনমেলা

কান চলচ্চিত্র উৎসব মানেই বিশ্বের সব সেরা সুন্দরীদের মিলনমেলা। নানা ধরনের ফ্যাশনেবল পোশাক পরে বিশ্বের সব নামিদামী তারকারা কান উৎসবের লাল গালিচায় হেঁটে থাকেন। প্রতিবছরই এ উৎসবে আসা সুন্দরীদের ফ্যাশন বাহার দর্শকদের বিমোহিত করে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। হলিউড বলিউড ছাড়াও ফ্রান্সের দক্ষিণের শহর কানে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশের সুন্দরীরা হাজির হয়ে দ্যূতি ছড়িয়েছেন শহরময়। সব সময়ের মতো এবারো হলিউডি আর ইউরোপিয়ান সুন্দরীদের পদচারণায় মূখর ছিলো কানের লাল গালিচা। সাবেক তারকা থেকে একেবারে নবীন উঠতি সুন্দরী অভিনেত্রী, সংগীতশিল্পী আর মডেলরা আলো ছড়িয়েছেন কানে। অভিনেত্রী,মডেল আর সংগীতশিল্পী ছাড়াও কানের লাল গালিচায় হেঁটেছেন কিম আর খোলে কার্দাশিয়ানের মতো টিভি ব্যক্তিত্বরাও।


বলিউড কন্যাদের ঝলকে আলোকিত ‘কান’

বিশ্বের প্রভাবশালী চলচ্চিত্র উৎসব বসেছে ফ্রান্সের কানে। বলিউড এতো বড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি হওয়ার পরেও কানে তাদের উপস্থিতি খুব একটা দেখা যায়নি এতাদিন, অন্তত সিনেমা নিয়েতো নয়ই। হয়তো কোনো ব্র্যারন্ড অ্যাম্বাসেডর দুয়েকজন সুন্দরী অভিনেত্রীরা শুধু রেড কার্পেটে হেঁটে আসতেন। কিন্তু এখন এই ধারার পালাবদল হয়েছে বিস্তর। এবার কানের আসরে চার বলি কন্যা হাজির হয়ে নিজেদের রূপের জৌলুস ছড়িয়েছেন। ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন, সোনম কাপুর এবং ক্যাটরিনা কাইফ প্যারিসের ল’রিয়েল কসমেটিক ব্র্যাশন্ডের হয়ে কানের রেড কার্পেটে হাঁটেন। অন্যদিকে মল্লিকা শেরওয়াতও হাজির ছিলেন কান উৎসবের চলতি আসরে।

কেবল রেড কার্পেটেই নয়, এবার মিলনায়তনেও বাজিমাৎ করে দিল বলিউডের সিনেমাও। ঐশ্বরিয়া অভিনীত ‘জাজবা’ ছাড়াও কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৬৮তম আসরে প্রদর্শনী হয়ে গেল ভারতীয় 'মাসান' চলচ্চিত্রটির। নিরাজ ঘায়ান পরিচালিত এই ছবির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিচা চাড্ডা। ছবিটি কানে উপস্থিত সকলের এতাটাই মনে দাগ কেটেছে যে, ছবির প্রদর্শনী শেষে ৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে ছবির কলাকুশলীদের সম্মাননা জানায় হলের সব দর্শক। বলিউডের সিনেমার ইতিহাসে এটি একটি বিরল দৃশ্য। এ ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় কলেছেন অভিনেত্রী রিচা চাড্ডা।


কান উৎসবে বাংলাদেশ

গত বছর কান উৎসবে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধি ‘শুনতে কি চাও’-এর নির্মাতা কামার আহমেদ সায়মন এবং তার স্ত্রী সারা আফরিন উপস্থিত থাকলেও এবার কারো নাম শুনা যায়নি। তবে এমন গুরুত্বপূর্ণ উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা খিজির হায়াৎ খানের শর্টফিল্ম ‘আই ফর এন আই’। কান উৎসবের শর্টফিল্ম কর্নার শাখায় প্রদর্শীত হয়েছে ১৮ মিনিট দৈর্ঘ্যের এ শর্টফিল্মটি।

যদিও এটা বাংলাদেশি নির্মাতার ফিল্ম, কিন্তু সিনেমাটি উৎসবে জমা দেওয়া হয়েছে কানাডা থেকে।

কান নিয়ে সমালোচনা

‘কান’ নাকি তার মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে গিয়ে স্রেফ একটা জামা কাপড়ের ফ্যাশন হয়ে পড়ছে, এমন অভিযোগই করেছেন সাবেক অভিনেতা অভিনেত্রীরা, যারা এক সময় বিশ্বের প্রভাবশালী এই উৎসবটির সাথে সংশ্লিষ্ঠ ছিলেন। সিনেমা থেকে সরে গিয়ে কান চলচ্চিত্র উৎসবের মূল আকর্ষণ যেন হয়ে উঠেছে জামাকাপড়ের ফ্যাশন। আর তাতেই খুব চটেছেন বিশ্বের নামিদামী তারাকারা। বিশেষ করে বলিউডের এক সময়ের কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানা আজমিতো এ নিয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন।

শাবানা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার অনুভুতির কথা ব্যক্ত করেন। সত্তর দশকে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘নিশান্ত’ নামে তার একটি সিনেমা প্রদর্শিত হয়েছিল। তার স্মৃতিচারণ করে শাবানা বলেন, সে সময়ে আমাদের প্রত্যেকের কাছে মাত্র ৮ ডলার করে ছিল এবং প্রচারণার জন্য বাড়তি কিছু ছিল না। কাঞ্জিভারাম শাড়ি পরে স্মিতা পাটেল ও শাবানা আজমি সকাল আটটা থেকে বসে থাকতেন, আর কেউ যদি কৌতূহলী হয়ে তাদের দিকে তাকাতেন তারা বলতেন, ‘আপনারা দয়া করে আমাদের না, আমাদের সিনেমা দেখুন’।


কান উৎসবে বিপত্তি

১৯৪৬ সালে শুরু হওয়া কান চলচ্চিত্র উৎসবটি পালন করছে তার ৬৮তম বছর। স্বাভাবিকভাবেই এটি পুরনো ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে কঠিনভাবে মেনে, নানা সংস্কারও মেনে চলে কান চলচ্চিত্র উৎসব। নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যে ড্রেস কোড দিয়ে দেওয়া হয় যা কঠোরভাবে পালনীয়। এবার এ নিয়ে শুরু হয়েছিলো ঝামেলা। লাল গালিচায় হাঁটতে হলে বহু নিয়ম পালন করতে হয়। পুরুষদের পরতে হয় টুক্সেডোসের সঙ্গে বো টাই এবং কালো জুতো। নারীরা যে পোশাকই পরেন না কেন, হাই হিল জুতো অবশ্যই থাকতে হবে। ড্রেস কোডের এই বিষয়টি উৎসবে বিশেষভাবে ঘোষিত হয় না। তবে তা পালন করতে বাধ্য করেন নিরাপত্তারক্ষীরা।

আর এ নিয়ে অনেকে সমালোচনা করেছেন কানের এই কঠোর নিয়মের। বিশেষ করে মধ্যবয়সী নারীদের হাই হিল জুতো পরে হাঁটাহাটি করাটা দারুন যন্ত্রণাদায়ক বলে উল্লেখ করেন অনেক সমালোচক। আর এই বিপত্তিটা শুরু হয় প্রিমিয়ারের দিনই। কয়েক জন মধ্যবয়সী নারীকে নিরাপত্তারক্ষীরা প্রবেশে বাধা দেন। কারণ তাদের পায়ে হিল জুতো ছিল না। এ ঘটনাকে খুবই অস্বস্তিকর এবং হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন অভিনেত্রী এমিলি ব্লান্ট। অনেক তারকারা এসব সংস্কার কানের সাথে যায় না বলেও সমালোচনা করেন।


নেতৃত্বে ছিলেন যারা

আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনের মর্যাদপূর্ণ আসর ‘কান চলচ্চিত্র উৎসব’। পৃথিবীর চলচ্চিত্র শিল্পের রথি মহারথিদের উপস্থিতিতে সরগরম থাকে এই চলচ্চিত্র উৎসব। বিশ্বের সেরা সেরা নির্মাতা,অভিনেতা-অভিনেত্রী আর সিনেমাটোগ্রাফাররা তাদের সেরা কাজ নিয়ে হাজির থাকেন এই উৎসবে।

রাত পেরোলেই ঘোষিত হবে কানের এবারের আসরে পেতে যাচ্ছে স্বর্ণপাম, কিংবা কে হচ্ছেন সেরা নির্মাতা বা অভিনেতা, অভিনেত্রী! সিনেমার খুঁটি–নাটি বিষয় নিখুঁতভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ‘পাম ডি অর’ –এর জন্য মনোনীত করবেন অভিজ্ঞ বিচারকরা। হ্যাঁ, একটা স্বর্ণ পাম জিততে বিচারকরাই এখানে প্রধান ও মূখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। আর এবারের ‘পাম ডি অর’ পুরস্কৃত করতে প্রধান নেতৃত্বে আছেন কোয়েন ভ্রাতৃদ্বয়। জোয়েল কোয়েন এবং ইথান কোয়েন। তাদের অধীনে ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্পেন,কানাডা, মেক্সিকো ও মালির চলচ্চিত্রের একজন করে মোট সাতজন আছেন। তাদের ভোটের মাধ্যমেই নির্বাচিত হবে এ বছরের ‘পাম ডি অর’ জেতা নির্মাতা ও সিনেমার নাম।


কানের যতো পুরস্কার

‘কান চলচ্চিত্র উৎসব’ হচ্ছে বিশ্বের সেরা চলচ্চিত্র, শিল্প ও চলচ্চিত্র কলাকুশলীদের মিলনমেলা ও একইসাথে সেরাদের পুরস্কৃত করার একটি উৎসব। কান চলচ্চিত্র উৎসবে যেসব বিষয়ের উপর পুরস্কৃত করা হয় সেগুলো হলো– পাম ডি অর বা স্বর্ণপাম- সেরা চলচ্চিত্র, পাম ডি জুরি- জুরি পুরস্কার, পাম ডি অর কোওত মিত্রেজ– সেরা শর্টফিল্ম, প্রিঁ দ্যা’ইন্টারপ্রিটেশন ফেমিনিন– সেরা অভিনেত্রী, প্রিঁ দ্যা’ইন্টারপ্রিটেশন ম্যাসকিউলিন– সেরা অভিনেতা, প্রিঁ দ্যা লা মিস এন সিন – সেরা পরিচালক, প্রিঁ দ্যা সিনারিও – সেরা চিত্রনাট্য।

কান কথা
‘কান’ পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন এবং প্রভাবশালী চলচ্চিত্র উৎসব। ভেনিস এবং বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের সাথে কানকেও সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং মর্যাদাপূর্ণ উৎসবের সম্মান দেয়া হয়। ১৯৪৬ সাল থেকে প্রতি বছর এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। দক্ষিণ ফ্রান্সের রিজোর্ট শহর কানে প্রতি বছর সাধারণ মে মাসে এটি পালিত হয়।


১৯৩০ সালে ফরাসি চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ফিলিপ এরল্যাঙ্গার ফ্রান্সের শিক্ষামন্ত্রী জি. জেই’র কাছে এমন একটি উৎসবের জন্য সুপারিশ করেন। পরে ফরাসি শিক্ষামন্ত্রীর হাত ধরে আমেরিকা ও ব্রিটেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় শুরু হয় এই আয়োজন। এর প্রথম আসর বসে ১৯৩২ সালে। তবে কানে নয়, এটি হয়েছিলো ইতালির ভেনিস শহরে। তাই এর নামও কান চলচ্চিত্র উৎসব ছিলো না। শুধুই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব নামে এটা পরিচিত ছিলো। কিন্তু ১৯৩৮ সালে পুরস্কারের বিষয়ে ইতালির মুসোলিনি ও জার্মানির অ্যাডলফ হিটলার হস্তক্ষেপ করায় উৎসব আয়োজনে সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই পরের বছর কানে উৎসবটি হয়। এরপরই শুরু হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এ কারণে মাঝে কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর ১৯৪৬ সালে আবার এই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হয়।

১৯৪৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ফেস্টিভ্যাল দো ফিল্ম ডি কান নামে উৎসবটি হয়। এর পর্দা নামে ৫ অক্টোবর। এটাই ছিলো কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রথম আসর। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ১৯৪৮ ও ১৯৫০ সালে উৎসবটি হয়নি। অবশ্য ততোদিনে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক উৎসবের মর্যাদা পেয়ে গেছে এটি। ১৯৫৫ সালে ফ্রান্সের কান শহরকে স্থায়ীভাবে এ উৎসব আয়োজনের কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়।