Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Entertainment Image

লোক হাসানো লোকের গল্প



জন্মগতভাবেই এই উপমহাদেশের মানুষ রসিকতা পছন্দ করেন, কাজে কর্মে চলনে বলনেও তাই রসিকতার ছাপ টের পাওয়া যায়। এমনকি সৃষ্টিকর্মেও উঠে আসে উপমহাদেশের মানুষের রসালো দিকটি। গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক আর সর্বশেষ আধুনিক শিল্পমাধ্যম চলচ্চিত্রেও তাই হাস্যরস কিংবা কমেডির বিস্তার আড়াল হয়নি।

ধরা যাক, আপনি হিন্দি একটি ছবি দেখছেন। ছবির পর্দায় চলছে টানটান উত্তেজনা, ব্যাপক মেলোড্রামা আর ট্রেজেডির মিশ্রনে চলছে ছবির আবর্তন-বিবর্তন, নায়কের সাথে নায়িকার প্রায় বিচ্ছেদ হয় হয় অবস্থা। এমন একটি সিরিয়াস সিনেমা দেখতে দেখতে আপনিও ঘোরে ডুবেছেন। সিনেমা এমন আবহ তৈরি করেছে যে, এখন আপনি প্রায় কেঁদেই ফেলবেন। কিন্তু হঠাৎ দেখলেন পর্দায় হাজির হলো জনি লিভার, রাজ পাল, পরেশ রাওয়ালের মতোন কোনো কমেডি ক্যারেক্টার। তখন…?

নিশ্চয় তখন আপনার সমস্ত ইমোশন ব্রেক করবে, আপনাকে ভুলিয়ে ছাড়বে যে একটু আগে আপনি কাঁদার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। এই যে মুহূর্তেই ম্যাজিকেল পাওয়ারের বলে আপনাকে একটি মুহূর্ত থেকে অন্য একটি মুহূর্তের সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিলো, তারচেয়ে শক্তিবান আর কে আছে! হ্যাঁ, বেশীর ভাগ সময় ছবিতে এই বাঁক বদল করেন একজন কমেডিয়ান।

ভালো অভিনেতারা কমেডি করেন না, কিংবা কমেডিয়ানরা ভালো অভিনেতা হতে পারেন না এইসব বুজরুকি গল্প ভুল প্রমান করেছে বলিউড। যিনি অভিনেতা, তিনি সব পারেন। তাকে এখন আর এরজন্য টাইপকাস্ট হতে হয় না। ভালো অভিনেতা মাত্রই বৈচিত্রে ভরপুর। একজন অভিনেতা সব চরিত্রের জন্য প্রস্তুত, প্রত্যেকটা চরিত্রই তারজন্য চ্যালেঞ্জ। পৃথিবীর মহান মহান অভিনেতারও কমেডি চরিত্রে অভিনয় করে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে গেছেন, একজন ভালো অভিনেতার জন্য সব চরিত্রই ভীষণ চ্যালেঞ্জের।

কমেডিয়ানরা নিজেদেরকে এমন একটা অবস্থানে নিয়ে গেছেন, যেখানে তাদের উপস্থিতি মাত্রই হাসির রোল পড়ে যায়, পর্দায় তাদের উপস্থিতি দেখেই দর্শকের হাসির উদ্রেক হয়। এটা এমনি এমনি হয়নি, শিল্পীর একটা সহজাত ক্ষমতা না থাকলে এটা সম্ভব হতো না। কমেডি অন্যান্য শিল্পমাধ্যমগুলোর মতোন সৃষ্টিশীল একটি কাজ। কমেডি অভিনয় খুব সহজ বিষয় নয়।

হঠাৎ যখন এইসব অভিনেতার চেহেরা ভেসে উঠে, তখন কোনো ছবির দৃশ্যায়ন মনে করে মনের অজান্তেই হাসি চলে আসে দর্শকদের।
বলিউডে কমেডি নির্ভর প্রচুর সিনেমা তৈরি হয়েছে, এবং এখনো সমানতালে হচ্ছে। রিতেশ, আরশাওয়াল, অক্ষয় কুমার, অজয় দেবগনসহ এরকম শীর্ষস্থানীয় অভিনেতাদেরও এখন হরহামেশায় কমেডি ধাঁচের ছবিতে দেখা যায়। শুধু মানুষকে হাসানোর জন্যই এখন আর বলিউডি সিনেমায় কমেডিয়ানদের উপস্থিতি থাকে না, বরং ছবিকে হিট করানোর জন্য কমেডিয়ানদের গুরুত্ব বাড়ছে ওখানে। বলিউডের এ সমেয়র শীর্ষ তিন লোক হাসানো মানুষদের তুলে ধরা হলো প্রথম পর্বে।



পরেশ রাওয়াল:
বলিউডের প্রবীন শক্তিমান অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম পরেশ রাওয়াল। একসময় ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করে কাঁপিয়ে দিয়েছেন, অথচ এখন তার আলাদা কোনো জেনার নেই। যখন যে চরিত্রে তিনি অভিনয় করছেন সেখানেই তিনি চূড়ান্তভাবে সফল হচ্ছেন। তবে একজন কমেডিয়ান হিসেবে বলিউডে তার তুলনা তিনি নিজেই, তা বর্তমান সময়ে ভালোই বুঝিয়ে দিচ্ছেন এই তুখোড় অভিনেতা। সেই ‘জানে তু ইয়া জানে না’র ইন্সপেক্টর ওয়াগমার হোক বা ‘হেরাফেরি’র বাবুরাও, ‘দে দনা দন’ ছবির হার্ভেন্স চাড্ডা, ‘গোলমাল’-এর সোমনাথ কিংবা হউক সালমান খানের সাথে ‘রেডি’ সিনেমার বলিদান বলি, সব জায়গাতেই কমেডিয়ান হিসেবে পরেশ রাওয়াল বলিউডে একটি নিজস্বতা তৈরি করে নিয়েছেন।



জনি লিভার:
বলিউডে একচেটিয়া কমেডিয়ান হিসেবে জনি লিভারের নাম সবচেয়ে জ্বলজ্বলে। শাহরুখ-সালমানরা যখন বলিউডে অভিনয় শুরু করেন সেই তখন থেকেই দীর্ঘ সময় ধরে বলিউডে কমেডিতে একক আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন তিনি। তার কমেডি অনেকের কাছে ভাঁড়ামো মনে হলেও চরম ব্যস্ততার ভিতর দিয়ে কাটিয়েছেন অভিনয় ক্যারিয়ার। এখন হয়তো কমেডিতে প্রচুর বিকল্প তৈরি হওয়ায় এতো চাপ নেই; কিন্তু একটা সময় প্রায় প্রতিটি ছবিতেই তার উপস্থিতি থাকতো। হোক তা একেবারে ছোট্ট একটি চরিত্র, কিন্তু অভিনয় আর শারীরিক ভঙ্গিমায় তিনি দর্শকদের নির্মল আনন্দ দিতেন। নায়কের বন্ধু হোক বা চাকর, তার একটা নিজস্বতা ছবিতে থাকতই। ‘বাজিগর’ থেকে একেবারে অক্ষয় কুমারের ‘এন্টারটেইনমেন্ট’ ছবিতে হাবিবুল্লাহ শেখের চরিত্রে তিনি একেবারে স্বাতন্ত্র্যথ এক জনি লিভার। আসন্ন শাহরুখ খান ও কাজল অভিনীত ছবি ‘দিলওয়ালে’ এবং রোহিত শেঠির ‘গোলমাল ৪’ ছবিতেও জনি লিভারের দ্যুতি ছড়ানোর কথা রয়েছে।



রাজপাল যাদব :
জনি লিভারের পর হিন্দি সিনেমায় সবচেয়ে জনপ্রিয় কমেডি অভিনেতা রাজপাল যাদব। উচ্চতায় খুব বেশী না হলেও কমেডি অভিনয় দিয়ে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন এই অভিনেতা। ১৯৯৯ সাল থেকে অভিনয় জগতে থাকলেও ‘কাল হো না হো’, ‘গরম মাসালা’ প্রভৃতি ছবির মাধ্যমে কমেডিয়ান হিসেবে জনপ্রিয়তা পান তিনি। ‘হাঙ্গামা’,‘দে দনা দন’ হয়ে একেবারে সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘ডার্টি পলিটিক্স’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করে দর্শকের মনোরঞ্জন করে চলেছেন রাজপাল। বিশেষ করে ‘ঢোল’ সিনেমাটিতে রাজপালের অসাধারণ কমেডি দর্শকের মনে থাকবে দীর্ঘদিন।
ইদানীং, প্রায় সব ছবিতেই কমেডিয়ান হিসেবে অপরিহার্য হয়ে উঠেছেন রাজপাল। চলতি বছরে তার হাতে অন্তত ৬টি ছবি এখনো রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। আর তার বর্তমান অবস্থানের জন্য নিজের থিয়েটারি জ্ঞানের প্রতিই কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। কারণ, তার বিশ্বাস, ভার অভিনেতা না হলে কমেডি করা যায় না। আর তার এই ধারণা যে কতটা সত্যি, ছবিগুলোই তার প্রমাণ। বড় স্টারদের পাশে থেকেও স্ক্রিনে নিজের জায়গাটি ছিনিয়ে নেয়া তো আর সকরের পক্ষে সম্ভব নয়।
সিনেমায় একজন কমেডিয়ান মুহূর্তেই নানানভাবে আমাদের হাসানোর চেষ্টা করেন, কি কথায় আর কি ঢঙে! অথচ বেশীরভাগ সময়ই দেখা যায় তাদেরকে অভিনেতা জ্ঞান করতেই আমরা কুণ্ঠিত বোধ করি, তাচ্ছিল্য কিংবা কমেডিয়ানদের নিয়ে অনেকের আছে এক ধরণের শুচিবায়। মুহূর্তেই মানুষ ভুলে যায় একটা সিনেমাকে প্রানবন্ত করতে একজন কমেডিয়ানের গুরুত্বও কম নয়। তবে মানুষ ভুলে গেলেও মনে রাখেন তার স্বজন, তার কাছের মানুষ কিংবা কমেডি বিষয়টাকে প্রকৃতঅর্থেই যার কাছে শিল্প মনে হয়। এইতো ক’দিন আগে বলিউডের শক্তিমান কমেডিয়ান অভিনেতা ‘শক্তি কাপুর’কে একজন কমেডিয়ান অভিনেতা হিসেবে ‘গিনিসি বুক অব ওয়ার্ল্ডে’র তালিকায় দেখতে চান বলে মন্তব্য করেছিলেন মেয়ে শ্রদ্ধা কাপুর।

শক্তি কাপুর ভারতীয় সিনেমার এমনই একজন কমেডিয়ান অভিনেতা, যিনি প্রায় সাতশো’র ও বেশি ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছেন। এটা খুবই বিরল ঘটনা। খুব কম সংখ্যক অভিনেতাই তাদের ক্যারিয়ারে এতোগুলি ছবিতে কাজ করেছেন।
পর্দায় লোক হাসানো মানুষেরা পর্দায় ও পর্দার বাহিরে ভালো থাকুন, আর হাসতে থাকুন…