Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

সোনামসজিদ



আমের জেলা নামে বিখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ। আম বিখ্যাত এই জেলায় আছে অনেক নিদর্শন। দেশের বিভিন্ন জেলায় আছে অনেক মসজিদ কিন্তু প্রাচীন এই মসজিদটি অনেক ঐতিহ্য বহন করে আসছে আমাদের দেশে। ১০ টাকার পুরনো নোটে এই সোনামসজিদের ছবি আছে।

বাংলাদেশের এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি দেখার মতোই একটি দর্শনীয় স্থান। উত্তরাঞ্চলের সীমান্তরেখা বরাবর আবস্থিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের এই প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মসজিদগুলোর মধ্যে এই সোনামসজিদ অন্যতম। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শত শত বছরের পুরনো এই সোনামসজিদসহ অন্য মসজিদগুলোর অপূর্ব কারুকাজ দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবেন নিঃসন্দেহে। আর আপনি আপনার অবসর ছুটির সময় অথবা গ্রীষ্মকালীন ছুটির এই সময়টা অনেক ভালোভাবে কাটাতে পারেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ভ্রমণ করে এবং দেশের ঐতিহ্যবাহী সোনামসজিদ দেখে।


ছোট সোনামসজিদ
কারুকার্যময় স্থাপত্য নির্মাণে মুঘলদের অবদান অনস্বীকার্য। মুঘলদের কল্যাণে আমাদের দেশেও নির্মিত হয়েছে প্রাচীন অথচ সমৃদ্ধ কিছু স্থাপত্য শিল্প। বাংলার মুসলিম স্থাপত্য অনুশীলন যুগে যে কয়েকটি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল তাদের মধ্যে ছোট সোনামসজিদের নাম অবশ্যই আসবে। কথিত আছে যে, একবার স্যার লর্ড ক্যানিংহাম এসেছিলেন এ মসজিদটি দেখতে। অসাধারণ সৌন্দর্য ও সোনা রঙের ১৫টি গম্বুজের এ মসজিদটি দেখে তিনিই এর নামকরণ করেন সোনামসজিদ। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একেবারে সীমানার কাছাকাছি চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রকারান্তরে গৌড় অঞ্চলে অবস্থিত এই সোনামসজিদ।

জায়গাটা কোথায় আন্দাজ করতে পারছেন তো?
‘কানসাট’ স্থানটির নাম শুনে থাকবেন নিশ্চয়ই। সেই কানসাট থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সোনামসজিদ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ এলাকাটি বাংলাদেশের একটি খ্যাতনামা স্থলবন্দরও। সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহের রাজত্বকালে (১৪৯৩-১৫৯১ খ্রি.) ওয়ালী মুহাম্মদ এ মসজিদটি তৈরি করেন বলে জানা যায়।

মসজিদের আকার
আকারের দিক থেকে দেখতে গেলে দেখা যাবে এ মসজিদের দৈর্ঘ্য ২৫ মি. (৮২ ফুট) ও প্রস্থ ১৬.৯০ মি. (৫২ ফুট)। মসজিদের চার কোনায় ৪টি তুঘলক পদ্ধতির বুরুজ বা টাওয়ার শোভা পাচ্ছে। পূর্ব দিকে বা সমমানের দেয়ালে রয়েছে পাঁচটি খিলানায়িত দরজা। মসজিদের মূল প্রবেশপথটি পাশের দরজাগুলো থেকে বড়। সে আমলে যে কোন মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে দামেস্কের আদি মসজিদের নকশা পরিকল্পনা অনুসরণ করার নীতি থাকলেও সোনামসজিদ নির্মিত হয়েছিল বাংলার জলবায়ুতে টিকে থাকার উপযোগী করে। মসজিদটির সামনের দেয়ালে ঐশ্বর্যশালী কারুকার্যে খচিত থাকলেও সময়ের স্রোতে তা কিছুটা বিলীনপ্রায়। প্রায় পুরো নকশা কারুকার্য পাথরের ওপর খোদাই করে দেয়ালের গায়ে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে যুগে যতগুলো ইমারত প্রস্তর খোদাই নকশা কারুকার্য ধারণ করে আছে তার মধ্যে সোনামসজিদের প্রস্তর খোদাই নকশালঙ্কার সর্বোৎকৃষ্ট। কিন্তু এই ঐতিহাসিক মসজিদটি আজ অযতœ অবহেলার নির্মম সাক্ষী। সময় তার নিষ্ঠুর হাতে মসজিদের অপূর্ব কারুকার্যের সৌন্দর্যকে নিংড়ে নিচ্ছে ধীরে ধীরে। এরপরও সেই কোনও মুঘলদের গড়ে যাওয়া এ অপূর্ব সুন্দর মসজিদটি দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় এখনও।

তাহাখানা কমপ্লেক্স
ছোট সোনামসজিদ দেখে ফেরার কথা ভাববেন না যেন! কারণ গৌড়জুড়েই শত শত বছরের স্থাপত্যকলার চিহ্ন রয়েছে। ছোট সোনামসজিদ থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরেই রয়েছে তাহাখানা কমপ্লেক্স। সুবাদার শাহা সুজার শাসনামলে (১৬৩৯-১৬৬০ খ্রি.) নির্মিত এ স্থাপত্য দেখে মনে হতে পারে মুঘল সম্রাজ্যে ফিরে এলাম বুঝি। সোনামসজিদের পাশে বিশাল একটা দীঘির পশ্চিম পাড়জুড়ে তাহাখানা কমপ্লেক্স অবস্থিত। এখানে একই সঙ্গে রয়েছে একটি মসজিদ, প্রাসাদ ও শাহ নেয়ামত উল্লাহ ওয়ালীল সমাধি। আয়তাকার আকৃতির একটি দুইতলা বিশিষ্ট ইমারত-প্রাসাদ মুঘলদের স্থাপত্যকলার সব রকম নিদর্শন রয়েছে এই প্রাসাদে।
তাহাখানার মূল প্রাসাদ থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে সামান্য দূরে রয়েছে শাহ্ নিয়ামত উল্লাহ ওয়ালীর মসজিদ। তিন গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদের এক মাইল বিশিষ্ট একটি মসজিদ ঘর আছে। পদ্মফুলের মতো প্রস্ফুটিত হয়ে আছে গম্বুজের চূড়া। আর কলসাকৃতির শিয়োচূড়া ঘিরে রেখেছে একে। হাঁটতে হাঁটতে মনে হতে পারে ৪০০ বছর আগের সময়ে ফিরে গেছি হয়তো। চার দিকে অদ্ভুত শান্ত পরিবেশ তাহাখানা থেকে ৩০-৩৫ মি. উত্তরে রয়েছে শাহ নিয়ামত উল্লাহ ওয়ালীর সমাধি। বর্গাকার নকশা পরিকল্পনায় নির্মিত এবং অভ্যন্তরীণ সমাধি কক্ষের চতুর্দিকে প্রশস্ত বারান্দা আছে। পূর্ব-পশ্চিম এবং দক্ষিণে ৩টি করে খিলানযুক্ত মোট ১২টি খিলানপথ দেখেই ক্যানিংহাম-এর নামকরণ করেছিলেন বারদুয়ারী।

চামকাঠি মসজিদ বা চকের মসজিদ
তাহাখানা কমপ্লেক্সের প্রধান সড়ক ধরে আরও কিছু দূর এগিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত প্রাচীর বাঁয়ে রেখে ডান দিকে রাস্তা ধরে বিশাল আমবাগানের শেষ সীমায় বিশাল এক দীঘির পাড়জুড়ে রয়েছে গৌড় সভ্যতার আরও এক নিদর্শন প্রচীর এক মসজিদ। ছয় গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদটিকে স্থানীয় বাসিন্দারা চেনেন চকের মসজিদ হিসেবে। গৌড় সভ্যতার লগ্নে স্থাপিত এ মসজিদের অসাধারণ কারুকাজের অল্প কিছু অবশিষ্ট রয়েছে এখনও। কে জানে কত শতাব্দী ধরে কত যুগের সাক্ষী এ মসজিদটির সঙ্গে নির্মাণশৈলীতে অনেক মিল রয়েছে।

তাহাখানা থেকে চকের মসজিদে রিকশায় যেতে ভাড়া নেবে খুব বেশি হলে ১০-১৫ টাকা। তবে আরও সহজ হল ছোট সোনামসজিদ থেকেই ঘণ্টা হিসেবে রিকশা নিয়ে নেয়া হয় তাহলে একবারে ৩টা মসজিদ দেখা হয়ে যাবে। আর গাড়ি নিয়ে গেলে তো কথাই নেই।

ভারত-বাংলাদেশে সীমানা
সোনামসজিদ থেকে ফেরার সময় আপনি আপনার যাত্রা কিছু বিরতি দিয়ে রাস্তার পাশে পারেন দেখেতে পাবে বাংলাদেশ-ভারত সীমানা। নিজের চোখে আপনি দেখতে পারেন পাশের প্রতিবেশী ভারতের কিছু অংশ। বিএসএফ আর বিডিআর সবসময় প্রস্তুত সীমান্ত রক্ষার্থে।

যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাওয়ার চেয়ে রাজশাহী হয়ে যাওয়াই ভালো। কারণ চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর ছাড়া থাকা-খাওয়ার জন্য ভালো জায়গা ওই এলাকায় পাওয়া দুষ্কর। তাই সোনামসজিদ যেতে রাজশাহী থেকে সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়া বর্ডারগামী বাসে ৮০ বা ৯০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনে উঠে বসবেন। মাত্র আড়াই ঘণ্টায় আপনি পৌঁছে যাবেন সোনামসজিদ এলাকায়।
প্রথমে ছোট সোনামসজিদ এ কিছুদূর গেলে বড় সোনামসজিদ চকের মসজিদ, তাহাখানা কমপ্লেক্স দেখতে পাবেন। আর যেতে যেতে পথের দু’পাশে দেখবেন বিখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের সারি সারি আমবাগান। আমের সিজনে আমবাগানের গাছগুলোতে অনেক আমও পাবেন।