Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

গুলশান লেকের প্রাণবন্ত বিকেল



চারপাশে সবুজ ঘাস। তিনটা হরিণের একটা ঘাস খাচ্ছে, একটা পা দিয়ে কান খোঁচাচ্ছে। আর অন্য হরিণের কান দুটো সজাগ। ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাচ্ছে। তার সন্দেহ একদম ঠিক। একটু দূরে একটা হিংস্র বাঘ তেড়ে আসছে। -এমন দৃশ্য কোনো গভীর জঙ্গল কিংবা চিড়িয়াখানায় নয়, ঢাকা শহরের সড়কেই দেখা যাচ্ছে। গুলশান লেকের উপর গুলশান ও বনানী সংযোগ সেতুর পাশেই ইট-সিমেন্টে গড়ে তোলা হয়েছে এসব প্রাণীর ভাস্কর্য। লেকের সবুজপাড় আরও দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে। যার ফলে জায়গাটি বিনোদন পিয়াসুদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
বনানী ও গুলশানের সংযোগ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে এবং উদ্বোধন হয় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে। এতে বনানী ও গুলশানবাসীর যোগাযোগ যেমন সহজ হয়েছে, তেমনই মনোমুগ্ধকর একটি বেড়ানোর জায়গাও তৈরি হয়েছে। যেখানে প্রতিদিন শত শত মানুষ অবসর কাটাতে, আড্ডা দিতে, প্রকৃতির সৌন্দর্য খুঁজতে আসে।

গুলশান-বনানী সংযোগ সেতুকে ঘিরে আড্ডায় মেতে উঠেছেন অনেকেই
লেকের দুইপাশের সবুজের ছোঁয়া লেগেছে লেকের পানিতেও। সবুজাভ পানির ছোট ছোট ঢেউ খেলে যাচ্ছে বারবার। লেকের উপরের সেতুতে দাঁড়িয়েই পানির এ ঢেউ ঢেউ খেলা উপভোগ করা যায়। চোখে পড়ে, দূরে ভাসছে নৌকা। আবার লেকের উপর দাঁড়িয়ে থাকা কিছু অবৈধ বাড়িও চোখে পড়বে।
গুলশান লেকের এই অংশে বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন প্রাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রাজিব হাসান। তিনি বলেন, ‘এখানে এলে সব মিলিয়ে একটু গ্রামের আবেশ পাওয়া যায়। যানজট, গরম আর কোলাহলের এই শহর থেকে নিজেকে আলাদা করতে সময় পেলেই এসে আড্ডায় মেতে উঠি এখানটায়। এমন দৃষ্টিনন্দন সেতু করায় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ।’

সূর্য ডোবার এমন মনোরম দৃশ্যের দেখাও মিলবে গুলশান লেকে
সেতুর পাশেই জেব্রা, হরিণ, বাঘ, ঘোড়া, দোয়েল, টিয়া, মাছরাঙা এবং একটি শুকনো ডালে পেঁচা ও কাঠঠোকরা পাখির ভাস্কর্য যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আর এসব ভাস্কর্য লেকপাড়ের সৌন্দর্যও বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। প্রতিদিন শত শত মানুষ এখানে অবসর পেলেই ছুটে আসছে। তবে এদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই বেশি। আর লেকপাড় দিয়ে হাঁটেন বয়স্করা।

লেকের দুইপাশে এমন অনেক ফুল সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলছে যেন
লেকপাড় ধরে এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে জারুল, কৃষ্ণচূড়াসহ নানান রকম ফুল। দেখা যায় ছোট ছোট গাছের ডালে টুনটুনির দৌড়াদৌড়ি। বড় বড় সবুজ ঘাস গুলোও দৃষ্টি কাড়ে সহজেই। লেকের এই অংশের পানিতে কোনো দুর্গন্ধ নেই। বরং ভালোই লাগে। শীতল হাওয়ায় শরীরটা জুড়িয়ে নেওয়া যাবে সেতুর উপর দাঁড়িয়ে কিংবা লেকপাড়ে বসে।
লেকপাড়ে বসে বসে বন্ধুদের সাথে গল্প করছিলেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ এর কয়েকজন শিক্ষার্থী। এদেরই একজন লুবনা বলেন, ‘ঘরের ভেতর আর কতক্ষণ বসে থাকা যায়। এখানকার নিরিবিলি পরিবেশ আর মুক্ত হাওয়ায় নিজেকেও মুক্ত মনে হয়। তাই মাঝে মাঝেই এখানে আসি। বসে বসে গল্প করি, ভালো লাগে।’
আবার লেকপাড়ে বসে থেকে দেখা যাবে সূর্য ডোবার দৃশ্যও। চোখে পড়বে লেকপাড়ে বেশ হৃষ্টপুষ্ট বিদেশি কুকুর। বিকেল হলেই পরিচায়করা এদের নিয়ে ঘুরতে বের হয়।

অভিজাত পরিবারগুলোর পালিত বিদেশি কুকুরের যত্নে এক পরিচায়ক
গুলশান অংশের ৩৫ নম্বর সড়ক ধরে এগিয়ে গেলে মিনিট দুই হাঁটলে পাওয়া যাবে আরও একটা সেতু। এই সেতুর নিচে দেখা গেল কয়েকটি নৌকা। বৈঠা হাতে নৌকা ভিড় করছে সোহেল। সে জানায়, এটার নাম গুলশান গুদারাঘাট। এখান থেকে লেকের অপরপ্রান্তে যাত্রী পারাপার করে দুই টাকার বিনিময়ে।
আবার এমনিতেও লেকের পানিতে কেউ নৌকায় ঘুরতে চাইলে ভাড়ায় পাওয়া যায়। তাই দর্শনার্থীদের জন্য নৌকায় উঠার শখটাও মেটানো সম্ভব। অবশ্য এজন্য প্রতি ঘণ্টায় দুইশত টাকা খরচ করতে হবে। এক নৌকায় একসাথে অনেকেই উঠতে পারে বলে টাকার অঙ্ক তেমন নয়। প্রায়ই দল বেধে তরুণ-তরুণীরা নৌকায় ঘুরতে আসেন বলে জানায় সোহেল।
শত ব্যস্ততার মাঝেও ঢাকায় ঘুরে বেড়ানোর জায়গা খুবই কম। থাকলেও কয়েকবার করে ঘোরাফেরা হয়ে গেছে। তবে গুলশান লেকের এই সংযোগ সেতু অংশের সৌন্দর্যের খবর হয়তো এখনও পৌঁছেনি আপনার কাছে। তবে আর দেরি কেন? সময় করে একদিন ঘুরে আসুন গুলশান লেকে।

লোকেশন: রাজধানীর বনানীর ১১ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় এই সংযোগ সেতুর অবস্থান। বীর উত্তম জিয়াউর রহমান সড়কের (ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক) বনানীতে নেমে ১১ নম্বর সড়ক ধরে কয়েক মিনিট হাঁটলেই গুলশান-বনানী সংযোগ সেতুর দেখা মিলবে। এছাড়া বনানী থেকে রিকশায়ও যাওয়া যাবে। সেতুর অপর প্রান্ত যোগ হয়েছে গুলশানের ৩৫/এ এবং ৪১ ও ৪৩ নম্বর সড়কে।