Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

ইউরোপ ভ্রমণে বাদ যাবে না যে ১০টি প্রাসাদ



ভ্রমণ বিলাসী মানুষের স্বপ্নের স্থান ইউরোপ। এই সুপ্রাচীন মহাদেশের সুদীর্ঘ ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে নানান জায়গায় ছড়িয়ে আছে স্থাপত্যকলার বিভিন্ন নিদর্শন। দূর্গ, প্রাসাদ, ভিলা কিংবা বিখ্যাত মানুষদের স্মৃতিবিজরিত স্থান পর্যটকদের কাছে জীবন্ত করে তোলে ইতিহাসের নানান অধ্যায়। প্রাসাদে ঢুকলে বর্তমান সময় কিংবা সামর্থ্য ভুলে নিজেকে মনে হবে রাজা, রানী, সভাসদ কিংবা জমিদার। আজকাল তো প্রাসাদে থাকার উপায় নেই, তাই এটুকু অনুভূতিই বা কম কিসে! ইউরোপের এমনই দৃষ্টিনন্দন দশটি প্রাসাদ-

১. ফ্রান্সের ভার্সাই (Versailles) প্রাসাদ
প্যারিসের কাছে অবস্থিত ভার্সাই প্রাসাদে কক্ষের সংখ্যা মাত্র এক হাজার আটশো! ইউরোপের বৃহত্তম প্রাসাদগুলির মধ্যে অন্যতম এই সুবিশাল প্রাসাদ ও উদ্যান নির্মিত হয় ১৬৭৭ সালে। ফরাসি নৃপতি চতুর্দশ লুই নিজের বাসভবন হিসেবে প্রাসাদটি নির্মাণ করান। পরে ইউরোপের অপরাপর শাসক তাদের নিজস্ব ‘ভার্সাই’ তৈরি করার চেষ্টা করেছেন।

২. রাশিয়ার পেটারহোফ (Peterhof/ Petrodvorets) প্রাসাদ
সেন্ট পিটার্সবার্গের পশ্চিমে, ফিনল্যান্ড উপসাগরের কূলে অবস্থিত প্রাসাদটি ‘রুশ ভার্সাই’ নামেও পরিচিত। জার পিটার দ্য গ্রেট ১৭২৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রাসাদটির উদ্বোধন করেন – তার গ্রীষ্মকালীন বাসস্থান হিসেবে। প্রাসাদটির অন্যতম আকর্ষণ হল গ্র্যান্ড ক্যাসকেড কিংবা স্যামসন ফাউন্টেনের মতো ফোয়ারা।

৩. তুরস্কের টপকাপি (Topkapi) প্রাসাদ
পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে প্রায় ৪০০ বছর ইস্তানবুলের টপকাপি প্রাসাদ ছিল তুর্কি সম্রাটের বাসভবন। প্রাসাদের চারটি মুখ্য চত্বর এবং অন্যান্য ছোটখাটো ভবন আছে, যেখানে প্রাসাদের প্রায় পাঁচ হাজার কর্মী বসবাস করতেন। রাজার বাসভবন, তাই রাজকীয় স্থাপত্যর পাশাপাশি বিনোদন, খেলাধুলা, প্রমোদ কিংবা গোপন অত্যাচারকুঠুরীতেও রয়েছে আভিজাত্যের ছোঁয়া।

৪. ব্রিটেনের উইন্ডসর (Windsor) প্রাসাদ
যেখানে মানুষজন বাস করে, এবং সবচেয়ে বেশিদিন ধরে বাস করে আসছে, এমন সব প্রাসাদ ও দুর্গগুলোর মধ্যে ইউরোপের বৃহত্তম প্রাসাদ উইন্ডসর। প্রথম হেনরির আমল থেকে ইংল্যান্ডের রাজপরিবার এখানে বাস করেছে। প্রাসাদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় ১০৭৮ সালে। সময়ের পরিবর্তনে এই প্রাসাদ সেনা ছাউনি এবং কারাগার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে। বর্তমানে এই ঐতিহাসিক প্রাসাদ ইংল্যান্ডের রানির মূল বাসভবন।

৫.অস্ট্রিয়ার শ্যোনব্রুন (Schonbrunn) প্রাসাদ
১৫৬৯ সালের দিকে শুরু হয় প্রাসাদ নির্মাণের কাজ। জার্মান শাসকদের গ্রাষ্মকালীন আবাস ব্যবহৃত হত স্থানটি। প্রায় ৩০০ বছর আগের কথা। অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী মারিয়া টেরেসা ভিয়েনার শ্যোনব্রুন প্রাসাদকে ইউরোপের রাজকীয় ঐতিহ্যের কেন্দ্রবিন্দু করে তোলেন। ১৪৪১ টি কক্ষ বিশিষ্ট এই প্রাসাদ স্থাপত্য, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে অসংখ্য পর্যটকের প্রাণকেন্দ্র শ্যোনব্রুন প্রাসাদ, প্রতিবছর পঁচিশ লক্ষের বেশি মানুষ দেখতে আসেন প্রাসাদটি।

৬. স্পেনের এল এস্কোরিয়াল (El Escorial) প্রাসাদ
মাদ্রিদের কাছে এল এস্কোরিয়াল প্রাসাদটি দৈর্ঘ্যে ২০৭ মিটার এবং প্রস্থে ১৬১ মিটার। বিশ্বের বৃহত্তম রেনেসাঁস স্থাপত্য হল এল এস্কোরিয়াল- স্পেনীয়রা বলেন, বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য। স্পেনের অধিকাংশ নৃপতির মরদেহ রাখা রয়েছে শ্বেতপাথরের ২৬টি কবর বিশিষ্ট একটি সমাধিগৃহে।

৭. চেক প্রজাতন্ত্রের লুবোকা (Hluboka) প্রাসাদদুর্গ
বোহেমিয়ার শোয়ারৎসেনবার্গের নৃপতিদের সাবেক বাসভবনটি আজ চেক প্রজাতন্ত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রাসাদগুলির মধ্যে পড়ে। এখানে সপ্তদশ শতাব্দীর ওয়ালপেপারের যে সংগ্রহ আছে, তা সত্যিই দর্শনীয়।

৮. জার্মানির নয়শোয়ানস্টাইন (Neuschwanstein)ক্যাসল
ব্যাভারিয়ার রাজা দ্বিতীয় লুডভিশের স্বপ্ন ছিল, মধ্যযুগীয় নাইটদের মতো তার একটি দুর্গ থাকবে। রাজা বলে কথা- যেমন ভাবনা, তেমনি কাজ। লুডভিশ টুরিঙ্গিয়ার ভার্টবুর্গ প্রাসাদ-দুর্গের কায়দায় নয়শোয়ানস্টাইন তৈরি করালেন। যদিও সে দুর্গ সমাপ্ত হতে দেখে যেতে পারেননি তিনি। দূর্গটির নির্মাণের কাজ শেষ হয় ১৮৮৬ সালে। রাজা লুডভিশের রূপকথার প্রাসাদ আজ ব্যভারিয়ার একটি টুরিস্ট ম্যাগনেট।

৯. ইটালি দোজে (Doge) প্রাসাদ
ভেনিসের সাবেক প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আধিকারিক ছিলেন ‘দোজে’ বা ডিউক। সান মার্কো চত্বরে তার প্রাসাদটি ব্যবহৃত হত একাধারে বাসভবন, নৌ এবং বাণিজ্যশক্তি হিসেবে ভেনিসের প্রতিপত্তির প্রতীক এই প্রাসাদ। ভেনেশিয়ান গথিক শৈলীর প্রাসাদটি বারবার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং মেরামত করা হয়েছে। প্রাসাদটি বর্তমানে পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় জাদুঘর।

১০. পর্তুগালের পেনা (Pena) প্রাসাদ
রোমান্টিসিজমের আমলের এই প্রাসাদটিতে নানা ধরনের স্থাপত্যশৈলীর খেয়ালি সংমিশ্রণ। তা দেখে ডিজনিল্যান্ডের কথা মনে পড়ে যায় অনেকের। পর্যটকরা কিন্তু সিন্ত্রা শহরের এই প্রাসাদটির প্রেমে পড়ে আছেন! শুধু স্থাপত্যশৈলী কিংবা চোখধাঁধাঁনো প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্যই নয়- পর্তুগালের জাতীয় এ ভবনে নাকি প্রেমের বাতাস বয়। চতুর্দশ শতাব্দী থেকেই পেনা প্রাসাদটি পর্তুগালের রাজপরিবারের গ্রীষ্মকালীন বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে।