Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

ডাল লেক



ভূস্বর্গ কাশ্মীর। এ নামটি উচ্চারন করলে মুহূর্তের মাঝে দুটি চিত্র ফুটে ওঠে মনের আয়নায়- এক হলো যুদ্ধবিদ্ধস্ত কাশ্মীর, অন্য দিকে অতুলনীয় সৌন্দর্যের আধার কাশ্মীর। প্রকৃতপক্ষে এই দুটি রূপই কাশ্মীরের বাস্তবতা। তবে আজকে যুদ্ধের কথা বাদ দিয়ে সুন্দর মনোরম কাশ্মীরের কথাই আলোচিত হবে। কাশ্মীরকে যেমন বলা হয় ভূস্বর্গ, তেমনি ডাল লেক হচ্ছে কাশ্মীরের মধ্যমণি। অপরূপ সাজে সজ্জিত ডাল লেক যুগে যুগে মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকে অনবরত। প্রকৃতি যেন ডাল লেককে তার সৌন্দর্য সুধা দু হাত ভরে বিলিয়ে দিয়েছে।

বোম্বের কিছু কিছু মুভিতে কাশ্মীরের ডাল লেকের দৃশ্য দেখা যায়। মুভির দৃশ্য দেখেই বোঝা যায় কি অসাধারণ সুন্দর এই ডাল লেক। সেখানে বাস্তবে এর রূপ নিঃসন্দেহে অপূর্ব। জম্মু ও কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে অবস্হিত ডাল লেক। ঝিলাম নদী এসে মিসেছে এই লেকে। লেকটির দৈর্ঘ্য সাত কিলোমিটারের বেশী আর প্রস্থ তিন কিলোমিটারের বেশী। লেকের সর্বাধিক গভীরতা ছয় কিলোমিটার। এই লেকে দুটি দ্বীপও আছে। সোনা লান্ক আর রূপা লান্ক। শীতকালে লেক এলাকার তাপমাত্রা মাইনাস এগারো ডিগ্রি সেলসিয়াসে চলে যায়। লেকের পানি তখন জমে বরফে পরিণত হয়। এসব হচ্ছে ডাল লেকের তাত্ত্বিক কথা।

বিভিন্ন দিক দিয়ে ডাল লেকের প্রকৃতি এবং জীবন বৈচিত্র্য অসাধারণ। লেককে ঘিরে কাশ্মীরের হাজারো মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। কেউ বিখ্যাত হাউসবোটের মালিক, কেউ ডাল লেকের বিশেষ নৌকা শিকারাতে পর্যটকদের নিয়ে পরিভ্রমন করে,আবার কেউবা ডাল লেক বাজারে সবজি বিক্রয় করে।

হাউসবোট
কাশ্মীরের ডাল লেকের একটি প্রধান আকর্ষণ হলো হাউসবোট। পানির উপর ভাসমান বাড়ি। ডাল লেকে সাতশোর বেশী হাউসবোট আছে। এর ভিতরে অত্যাধুনিক হোটেলের মত নানান ব্যবস্থা করা। শোবার ঘর, বসার ঘর, বাথরুম সবই আছে। সবকিছুই সুসজ্জিত। সুন্দর কার্পেট বিছানো,পর্দা টানানো। আরো আছে বারান্দা, যেখানে বসে অনায়াসে বাইরের দৃশ্য অবলোকন করা যায়। হাউসবোটের ভিতরে কাঠের জাফরি কাটা দেয়াল অনিন্দ্য সুন্দর। মোট কথা এই হাউসবোটে পাওয়া যাবে সবধরনের ব্যবস্থা যা একজন পর্যটকের একান্ত প্রয়োজন।

শিকারা
ডাল লেকের পানিতে ভেসে বেড়ানো বিশেষ ধরনের নৌকাগুলোকে বলা হয় শিকারা। হাজার হাজার শিকারা প্রতিনিয়ত লেকে চলাচল করছে বিভিন্ন প্রয়োজনে। কখনও পর্যটকদের নিয়ে প্রদক্ষিন করতে, কখনও বা ব্যক্তিগত কাজে শিকারা ব্যবহৃত হয়।



দুটি বাগান
শালিমার বাগ ও নিশাত বাগ এই দুটি বাগান ডাল লেকের তীরে অবস্হিত। মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে এ দুটি তৈরী করা হয়। সুন্দর করে লাগানো গাছ পালায় ভরা বাগ দুটি পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষন।
ডাল লেক বাজার
ডাল লেক বাজার সম্পূর্ণ পানির উপর ভাসমান একটি বাজার। এই বাজারে শুধুমাত্র সবজি বিক্রয় করা হয়। লেকের আশেপাশর এলাকার জমির সবজিই এখানে আসে।

হযরত বাল মাজার
নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)এর কয়েকটি চুল এই মাজারে সংরক্ষিত আছে বলে এই মাজারের নামকরন করা হয়েছে হযরত বাল মাজার। মাজারটি লেকের বাম দিকে অবস্হিত। কাশ্মীরের জণগন তো বটেই অন্যান্য মুসলমানদের কাছে এই মাজারটি অত্যন্ত পবিত্র স্হান রূপে বিবেচিত হয়।

ডাল লেকের সম্পদের কোন শেষ নেই। লক্ষ লক্ষ পর্যটক সে সম্পদ বাড়িয়ে তুলছে আরও বহুগুন। তারপরও একটি কথা আছে। লেকটি কিন্তু দিনে দিনে দূষিত হয়ে পড়ছে। এজন্য লেকের অধিবাসীগন যেমন চিন্তিত তেমনি সরকারও চিন্তিত। পর্যটকগন তাদের ব্যবহৃত জিনিষপত্র লেকে ফেলছে, আবার আশেপাশের এলাকা ও শত শত হাউসবোটের অপরিশোধিত পয়নিষ্কাশন এই লেকের পানিতে পড়ছে। এছাড়াও কাপড় ধোয়ার জন্যেও পানি দূষিত হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দিয়ে লেকের পানি পরিষ্কার রাখার যেমন চেষ্টা করা হচ্ছে, তেমন সাধারন মানুষকেও সচেতন করা হচ্ছে লেকের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে।

তারপরও ডাল লেক আজও অনন্যা। আজও শিকারা ভেসে যায়, হাউসবোটে বসে কোন যুবক পূর্ণিমার চাদ দেখে, কেউ বা সুস্বাদু খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে। কেউ হয়তো বহূদুরে বসে কাশ্মীরের ডাল লেককে ঘিরে স্বপ্ন দেখে।