চা বাগানের দেশ সিলেটে ঘুরতে গেলে সবাই নজর থাকে কেবল শাহজালাল-শাহপরাণ এর মাজার দর্শণ, জাফলং আর মাধবকুন্ড বেড়ানো। জাফলং, মাধবকুন্ড ছাড়াও সিলেটের মাথা নষ্ট করার মত আরেকটি দর্শণীয় স্থান হচ্ছে লালাখাল। সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার সন্নিকটে অবস্থিত এই অসাধারন সুন্দর জায়গাটির কথা এখনও অনেকেই অজানা।
স্বচ্চ নীল জল রাশি আর দুধারের অপরুপ সোন্দর্য, দীর্ঘ নৌ পথ ভ্রমনের সাধ যেকোন পর্যটকের কাছে এক দূর্লভ আর্কষণ। তেমনি এক নির্জন মনকাড়া স্থান লালাখাল। বাংলাদেশের সবোর্চ্চ বৃষ্ঠিপাতের স্থান এবং রাতের সৌন্দর্যে ভরপুর এই লালাখাল সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার সন্নিকটে অবস্থিত। সারি নদীর স্বচ্চ জলরাশির উপর দিয়ে নৌকা অথবা স্পীডবোটে করে আপনি যেতে পারেন লালাখালে। যাবার পথে আপনির দুচোখ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে যাবেন কিন্ত সৌন্দর্য শেষ হবে না। মূলত সারিঘাট থেকে রওনা দেবার কিছুক্ষণ পরেই আপনার চোখে পড়বে দূরে মেঘালয়ের নীল পাহাড়গুলো। পথেই হয়ত দেখা মিলবে মহিষের পালের একসাথে গলা অবধি পানিতে ডুবে সাঁতার কাটার দৃশ্য। যত সামনে এগুতে থাকবেন ততই যেন মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি হাতছানি দিয়ে ডাকবে আপনাকে।
৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টার যাত্রা শেষে আপনি পৌছে যাবেন লালখাল চা বাগানের ফ্যাক্টরী ঘাটে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবেন নদীর দিকে। কাঁচের মত স্বচ্ছ নীল পানির বুক ভেদ করে তাকিয়ে থাকে নদীর তলদেশ। ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেই লালাখালের অবস্থান। চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে উৎপন্ন এই নদী বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সৃষ্টি করেছে অনিন্দ সুন্দর প্রাকৃতিক মায়াজাল। এমন জায়গাটা দেখা না হলে সারাজীবনই আক্ষেপ থেকে যাবে। আক্ষেপ না রেখে ঘুরে আসুন লালাখাল থেকে। চাইলে লালাখালে পৌছে ঘুরে নিতে পারেন সেখানকার ছোট একটি টি-ফ্যাক্টরি।
যাতায়াত
লালাখালে যেতে হলে সিলেটের শিশু পার্কের সামনে থেকে লেগুনা অথবা জাফলংয়ের বাসে চেপে সিলেট-তামাবিল সড়ক ধরে যেতে হবে সারিঘাট। সিলেট আর জাফলং মাঝামাঝি এ স্থানটির নাম সারিঘাট। আগেই বলা হয়েছে, যাওয়ার জন্য পথ দুটি সড়কপথ ও নৌপথ। সড়ক পথে যেতে চাইলে মাইক্রোবাস বা কার ভাড়া নিলে ভালো হয়। তা ছাড়া সিলেট শহর থেকে বাস, লেগুনায় সারিঘাট গিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া নিতে পারেন। নৌপথে যেতে চাইলে আগে সারিঘাট পর্যন্ত একই নিয়মে বাস, লেগুনায় গিয়ে নৌযান ভাড়া নিতে হবে। ফেরার পথে এখান থেকে বাসে কিংবা লেগুনায় আসতে পারবেন। রাত ৮টা নাগাদ যানবাহন পাওয়া যাবে।
আবাসন
লালাখালে একমাত্র আবাসন ব্যবস্থা নাজিমগড় রিসোর্ট। আগে থেকে যোগাযোগ করে যাওয়া ভাল। নাহলে রিসোর্টে রুম নাও মিলতে পারে। তবে বেশিরভাগ মানুষই সিলেট শহরে থাকেন, সেখান থেকে দিনে দিনে বেড়িয়ে আসেন। সেক্ষেত্রে সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরতি পথে রওনা দেয়া ভাল। কারণ সন্ধ্যার পর নৌকা পাওয়া যায় না।
খরচ
সিলেট শহর থেকে শুধু লালাখালের জন্য মাইক্রোর ভাড়া দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে হবে, গাড়ি নিলে ভাড়া এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে। সারা দিনের প্ল্যান হলে ভোরে সিলেট থেকে রওনা দিতে হবে। তা ছাড়া বাস কিংবা লেগুনায় ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে সারিঘাট যেতে পারবেন। সেখানে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া ৮০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা আর স্পিডবোটে যেতে চাইলে ভাড়া এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা হতে পারে। নৌযানে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ জনের বসার ব্যবস্থা আছে, ভাড়া একই।
যা অবশ্যই করবেন না-
১। দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন না,
২। সন্ধ্যার পর নির্জন এলাকায় একা একা ঘুরবেন ন্
৩। শিশুরা থাকলে পানিতে না নামতে দেয়াই ভাল,
৪। সিগারেটের প্যাকেট, চিপসের প্যাকেট বা এ জাতীয় কোন বস্তু যেখানে সেখানে ফেলবেন না।
পরিশেষে, সৌন্দর্য মনকে বড় করে। তাই যত পারা যায় সৌন্দর্যের কাছে যাওয়া উচিৎ আমাদের সকলের। কিন্তু সেই সৌন্দর্য রক্ষার দায়িত্বও আমাদের। পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখুন। প্রকৃতির কাছে গিয়ে হইচই, জোরে গান বাজানো থেকে বিরত থাকুন। নিজেও উপভোগ করুন, অন্যকেও উপভোগ করতে দিন অপার নিরবতা।