এই তো কয়েক দশক আগেও পর্যটক বা দর্শনার্থীদের অনেকেই গিরিখাত এর নাম শুনলেই চমকে যেত। নিশ্চিত মৃত্যুর সাথে আলিঙ্গনের ভয়ের কারণে! কিন্তু সময় বদলেছে। এখন আর গিরিখাত মানেই নিশ্চিত মৃত্যু নয়। এখন সেই গিরিখাতের অপার সৌন্দর্য দেখার জন্য মানুষ পাড়ি দিচ্ছে কত যে কঠিন পথ তার হিসেব নেই। আসুন দেখে নিই,বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর নয়টি সংকীর্ণ গিরিখাত; যেগুলো ভ্রমণপিপাসু মানুষদের চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে।
(১)আনটিলৌপ গিরিখাত,অ্যারিজোনা
পৃথিবীর সুন্দরতম গিরিখাত বলে মনে করা হয় এই গিরিখাতকে। যেটা আমেরিকার দক্ষিণে অ্যারিজোনার নাভোজোতে অবস্থিত। এই গিরিখাতের দুইটি ভাগ আছে। এক উপরের গিরিখাত এবং নিচের গিরিখাত। উপর থেকে ধেয়ে আসা বন্যায় বেলে পাথর ক্ষয়ে এই সুন্দর ও নান্দনিক গিরিগাত গঠিত। অদ্ভুত কৌণিক দেয়াল আছে। বাহারী রং, গঠন, রেখাচিত্র এবং দর্শনীয় সব দৃশ্য আছে যা একজন আলোকচিত্রীকে সহজেই আকর্ষণ করে। গ্রীষ্মকালে এর সৌন্দর্য বহুগুনে বেড়ে যায়।
(২)সিক গিরিখাত,পেত্রা,জর্ডান
জর্দানের পেত্রা শহরের প্রধান প্রবেশপথে এই গভীর খাদ অবস্থিত। এই গিরিখাতের দেয়াল কালো। এই গিরিখাতের তিন চতুর্থাংশ পথ সংকীর্ণ। কখনো কখনো এই গিরিখাত ৮-৯ ফুটের বেশী চওড়া হয় এবং আর এই গিরিখাতের দেয়ালের উচ্চতা প্রায় ৩০০-৬০০ ফুট। এই গিরিখাত জলের ক্ষয় দ্বারা গঠিত।
(৩)ওয়েভ গিরিখাত , অ্যারিজোনা
এই নান্দনিক গিরিখাতটিও আমেরিকার অ্যারিজোনায় অবস্থিত। ওয়েভ এর নিচে শুধুমাত্র ৭ ফুট চওড়া। তবে এটি ৫২ ফুটেরও বেশি গভীর এবং উপরে ৬২ ফুট চওড়া। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই গিরিখাতটি পর্যকটদের সব সময়ই আকর্ষণ করে থাকে। ভূ-বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে বলেছেন যে জায়গাটা ১৯০ মিলিয়ন বা ১৯ কোটি বছরের পুরোনো। জায়গাটা বালিপাথর বা স্যান্ডস্টোনে তৈরি। এই পাথর সহজেই ক্ষয়ে যায় মানুষের পায়ের চাপ লেগে। অ্যারিজোনা সরকার তাই ওয়েভে যেতে একদিনে কুড়ি জনের বেশি পর্যটককে অনুমতি দেয়না। আগে থেকে অনুমতির জন্য আবেদন করতে হয়। কুড়িজনের বেশি লোক হলেই লটারিতে ঠিক হয় কে যেতে পারবে।
(৪)জ্যিয়ন ন্যাশনাল পার্ক
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই সংগ্রহশালাটি দক্ষিন আমেরিকার ওটেহ’তে অবস্থিত। এই ন্যাশনাল পার্কটি ২২৯ বর্গ মাইল জুড়ে অবস্থিত। আর এই গিরিখাতটি ১৫ মাইল দীর্ঘ। নর্থ ফর্গের কোল ঘেষে ভার্জিন নদীর উপকূলে এই গিরিখাতটি বেয়ে গেছে।
(৫)উইচেজ গিরিখাত, উইসকনসিন,আমেরিকা
এই গিরিখাতটি লাল এবং সোনালী রঙয়ের বেলে পাথর দ্বারা গঠিত। তবে দেয়ালের অনেক জায়গায় পান্নার রঙ দেখা যায়। এই গিরিখাতটি খুবই সংকীর্ণ এবং শৈবাল পরিহিত। যার ফলে পর্যটকদের জন্যে এই গিরিখাতে ওঠা মোটেও সুখকর হয় না। আলোকচিত্রী এইচ,এইচ ব্যানেট ১৮৭১ সালে সর্বপ্রথম এই গিরিখাতটি আবিষ্কার করেন।
(৬)ব্যাকস্কিন গিরিখাত,ওটেহ
এই গিরিখাতটি আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিমে ওটেহতে অবস্থিত। এটিই খুব সম্ভবত পৃথিবীর দীর্ঘতম গিরিখাত। এই গিরিখাতের দুই পাশ প্রায় ৫০০ ফুট উচু। এর তলদেশ দিয়ে পারিয়া নদী বয়ে গেছে।
(৭)ক্যাথিড্রাল জর্জ,পুরনুলুলু ন্যাশনাল পার্ক,অস্ট্রলিয়া
এই চিত্তাকর্ষ গিরিখাতটি অস্ট্রোলিয়ার ব্লু পর্বতমালার পরিসীমায় অবস্থিত। এই বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচিত। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বায়ু এবং জলে বেলে পাথরে প্রবাহিত হয়ে এই গিরিখাতটি গঠিত বলে মনে করা হয়।
(৮)সিনাই গিরিখাত,মিশর
এই গিরিখাতটির দেয়াল অনেক লম্বা। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মহাসাগর থেকে বায়ু ও জলের পলল দ্বারা এই গিরিখাতটি গঠিত বলে ধারনা করা হয়। এটির উচ্চতা প্রায় ১০০ ফুট। কখনো কখনো এটি কয়েকফুট পর্যন্ত চওড়া হয়। এই গিরিখাতে চড়া অন্যান্য গিরিখাতের চেয়ে অনেক সহজ।
(৯)ইয়ানো গিরিখাত,কারিজিনি ন্যাশনাল পার্ক,অস্ট্রোলিয়া
এই গিরিখাতটি পশ্চিম অস্ট্রোলিয়ায় অবস্থিত। গিরিখাতটি সুউচ্চ শিলা পাথরের দেয়াল দ্বারা গঠিত। অভিজ্ঞ পর্যটকদের জন্য এই গিরিখাতটি বেশ উপভোগ্য।