২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ই-কমার্স খাতকে একটি আলাদা খাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশের ই-কমার্স সেক্টরের জন্যে এটি একটি ইতিবাচক ব্যাপার। তবে বাজেটে অনলাইনে পণ্য ও সেবা বেচা-কেনার ওপর ৪ শতাংশ ভ্যাট (মূসক) ঘোষণা করা হয়েছে। ই-কমার্সের মতো একটি উঠতি, বিকাশমান ও অপেক্ষাকৃত নতুন খাতের ওপর এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ই-কমার্স সেক্টরের উন্নয়নকে আরো গতিশীল ও সমৃদ্ধতর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেশের ই-কমার্স খাতকে অন্তত আরো কয়েক বছর ভ্যাটমুক্ত রাখার আহ্বান জানিয়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ই-কমার্স অনেক দেরিতে শুরু হয়েছে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশে অনলাইনে লেনদেন চালু করা হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে ই-কমার্স খাত সম্প্রাসারিত হচ্ছে। এ খাতে এখনো নানা সমস্যা বিদ্যমান। ইন্টারনেটের উচ্চমূল্যের কারণে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখনো কম। দেশের বর্তমান অবকাঠামো ই-কমার্সবান্ধব নয়। ই-কমার্স সম্পর্কিত এখনো কোনো নীতিমালা বা বিধিবিধান নেই। এত সব বাঁধা উপেক্ষা করেও দেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে একটিমাত্র কারণে : দেশের তরুণ প্রজন্ম ই-কমার্সের মাধ্যমে নিজেদের জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখছেন। এরা ই-কমার্স উদ্যোক্তা হতে চান। তাদের এই উদ্যমকে ধরে রাখার প্রয়োজনেও ই-কমার্স খাতকে আরও কয়েক বছর ভ্যাটমুক্ত রাখা দরকার বলে ই-ক্যাব মনে করে।
ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের জন্যে উচ্চহারে চার্জ আদায় করে। বাংলাদেশে ই-কমার্সের জন্যে বিশেষ কোন ডেলিভারি সার্ভিস নেই। প্রচলিত কুরিয়ার দিয়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য সরবরাহ করে থাকে। এসব কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর ডেলিভারি রেট খুবই বেশি। এসব মিলিয়ে অনলাইনে একটি পণ্যের দাম বাজারের দামের তুলনায় বেশি পড়ে। পণ্যের দাম সহনীয় মাত্রায় রাখতে এবং ক্রেতা ধরে রাখতে ই-কমার্স উদ্যোক্তারা যথাসম্ভব কম লাভে পণ্য বিক্রি করেন। সব উদ্যোক্তাই এখন তাদের ই-কমার্স ব্যবসায়ের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে ব্যস্ত।
এমতাবস্থায় অনলাইনে পণ্য বেচাকনার ওপর সরকারের ৪ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হলে দেশে অনলাইনে কেনাকাটার ব্যাপারে ক্রেতারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। তখন অনেক তরুণ উদ্যোক্তা ই-কমার্স ব্যবসায় করার উদ্যম হারিয়ে ফেলবেন। অনেক তরুণ-তরুণী যারা নিজেদের ই-কমার্স ব্যবসায় শুরু করার পরিকল্পনা করছেন তারাও আর উৎসাহ পাবে না। নতুন উদ্যোক্তার অভাবে ই-কমার্স খাতও নিস্তেজ হয়ে পড়বে।
তাই ই-ক্যাব মনে করে, ই-কমার্স খাতকে গতিশীল করে তোলার জন্য সরকারের উচিত হবে এ খাতকে আগামী কয়েক বছরের জন্যে ভ্যাট মুক্ত ঘোষণা করা। উল্লেখ্য, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ই-ক্যাবের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে ই-কমার্সকে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।