সোনার চেয়েও দামি জিনিস আবিষ্কার করতে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ভূ-পৃষ্ঠের গভীর থেকে উপরিভাগে ভেসে ওঠা প্লাটিনাম, কপার ও সোনার মতো দেখতে মূল্যবান বস্তুর উপর গবেষণা করে এ তথ্য জানিয়েছেন কানাডার একদল বিজ্ঞানী।
মঙ্গলবার প্রকৃতি ও ভূগোল বিষয়ক জার্নাল ‘ন্যাচার জিওসাইন্স’-এ প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে এবিসি নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অনুসন্ধান চালিয়ে যেসব ধাতব বস্তু পেয়েছেন তার উপর বেশ কয়েক বছর ধরে নিয়মিত গবেষণা করা হয়। এতে ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগ থেকে গভীরে নতুন ধরনের আকরিক ভাণ্ডারের হদিস সম্পর্কে নতুন সূত্র পাওয়া সম্ভব বলে ধারণা করা হয়।
পৃথিবীর ভৌগলিক ইতিহাসে ব্যাপক উল্লেখযোগ্য যেসব বড় ধরনের ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর পূর্বানুমানকেও ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করবে এই আবিষ্কার।
গবেষণায় গোল্ড, কপার, প্লাটিনাম ও নিকেলের বাইন্ডগুলোকে (কঠিন ধাতু বিশেষ) আইরন সালফাইডে দ্রবীভূত করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
গবেষণা দলের প্রধান লেখক ও কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়েরর অধ্যাপক জ্যামস মুঙ্গল জানান, ‘সাফলফাইডের দ্রবণগুলো খুবই ঘন। ফলে সবার কাছেই মনে হয়, এসব হল ম্যাগমা চেম্বারের (ভূস্তরের গভীরে দ্রবীভূত প্রস্তরের স্তর) খাদ। তবে আমরা এই খাদের পরিবর্তে সালফাইডের দ্রবণগুলোর গতি বিশ্লেষণের একটি কৃৎকৌশল খুঁজে পেয়েছি।’
মুঙ্গল ও তার সহকর্মীরা মিলে গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা ম্যাগমা চেম্বারের বাস্পীয় স্তরে সাফলফাইডের আচরণ ও গতি কিভাবে আসে তা বিশ্লেষণের একটি তাত্ত্বিক মডেল তৈরি করেন।
মুঙ্গল বলেন, ‘আমরা গবেষণাগারে সালফাইড ও সিলিকেটগুলো (ব্যাপকসংখ্যক যৌগিক) দ্রবীভূত করছি অনেক বছর ধরে। তাতে সবসময়ই একই ধরনের প্রবণতা দেখা যায়। এ প্রবণতা হল, সালফাইডের বিন্দুগুলো সিলিকেটের দ্রবণ ও বাস্পীয় স্তরের মধ্যবর্তী স্তরে লেগে থাকে।’
পরবর্তীতে দেখা যায়, এতে গ্যাসীয় বাষ্পও তৈরি হচ্ছে। কারণ গ্যাসীয় বাষ্পগুলো উপরিভাগের কম্পনের কারণে সালফাইড বিন্দুগুলোর সাথে লেগে আছে এসব গ্যাসীয় বাষ্প। তাতে এই গ্যাসীয় বুদ্বুদ সালফাইডের বিন্দুগুলোকে ম্যাগমা চেম্বার পর্যন্ত নিয়েই যুক্ত হয়ে থাকে।
যার ফলে পুরো গবেষণায় পৃথিবীর ভৌগলিক ইতিহাসের মারাত্মক সব ঘটনার কারণ ও রহস্যও উন্মোচিত হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।
বিজ্ঞানীরা জানান, প্রায় ২৫২ মিলিয়ন বছর আগে ভূ-পৃষ্ঠের প্রায় ৭০ ভাগই ধ্বংস হয়ে যায়। এছাড়া সমুদ্রভাগের প্রায় ৯৬ শতাংশ ধ্বংস হয়ে যায়।
কিন্তু এত বড় ধ্বংসাত্মক ঘটনা কেন ঘটল তা এখনও বিশাল রহস্য। এ গবেষণা শেষ পর্যন্ত সফল হলে এসব রহস্যও উন্মোচিত হয়ে যেতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা খুবই আশাবাদী।