দুইজনই সেরা। একজন ম্যানি প্যাকিয়াও, ফিলিপাইনের আইকন বক্সার। ৫৭টা লড়াই জিতেছেন। তার মধ্যে ৩৮টা নক আউট। অন্যজন ফ্লয়েড মেওয়েদার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বক্সিং হার্টথ্রব। এখন পর্ন্ত রিংয়ে একটি ম্যাচও হারেননি তিনি। ৪৭টা লড়াইয়ের ২৬টাই জিতেছেন প্রতিদ্বন্দ্বীকে নক আউট করে। শুধু রিংয়েই নয়। ব্যাক্তিগত জীবনেও কম ঝড় যায়নি। একাধিক গৃহবিবাদের ঘটনায় তাঁর ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জেল খেটেছেন। কিন্তু দমে যাননি।
বতর্মান বিশ্বের সেরা এই দুজনের দ্বৈরথ আর সর্কালের সবচেয়ে দামী এই বক্সিং যুদ্ধ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই ব্যাপক আলোচনা উত্তেজনা চলছিলো। অলোচনার আরেকটি কারন ম্যাচের পুরষ্কারমূল্য। ম্যাচের পুরষ্কারমূল্য যে ২৫ কোটি ডলার, যা মহাম্মদ আলি, ফ্রেজিয়ার, ফোরম্যান, টাইসনের আমলেও দেখা যায়নি। ম্যাচটিকে বলা হচ্ছে ‘ফাইট অব দ্য সেঞ্চুরি’।
সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ম্যাচটি জিতে নিয়েছেন ফ্লয়েড মেওয়েদার। ম্যাচটি হেরেও ১০ কোটি ডলার পেয়েছেন ম্যানি প্যাকিয়াও। ম্যাচে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে ৩৮ ম্যানি প্যাকিয়াওকে হারিয়েছন মেওয়েদার।
১৯৯৬ সাল থেকে ৪৮টি ম্যাচে হার না মানা মেওয়েদার বক্সিং-এ নিজের ডব্লিউবিসি এবং ডব্লিউবিএ শিরোপা ধরে রাখার পাশাপাশি প্যাকুইয়াওর কাছ থেকে ডব্লিউবিও বেল্ট কেড়ে নিলেন। প্রায় সতেরো হাজার দর্শক এমজিএম গ্র্যান্ড গার্ডেন অ্যারেনাতে এই লড়াই প্রত্যক্ষ করেন। আর সারাবিশ্বে প্রায় ত্রিশ লাখ মানুষ এই বক্সিং দেখেছেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। টেলিভিশনে খেলা দেখতেও আমেরিকায় দর্শকদের একশো ডলার খরচ করতে হয়েছে।
এ ম্যাচ দেখতে ধণীদের ভীড় লেগে গিয়েছিলো লাস ভেগাসে। লাস ভেগাস বিমানবন্দরে ব্যাক্তিগত বিমানের কারনে ট্রাফিক জ্যাম পর্যন্ত লেগে গিয়েছিলো। টিকেটের দামও ছিলো আকাশছোঁয়া। সবচেয়ে কম মূল্যের টিকেট বাংলাদেশি টাকায় ৩ লাখ ৭৫ হাজারের কাছাকাছি আর সবচেয়ে বেশি মূল্যের টিকিট প্রায় ২০ লাখ টাকা।
১৯৭৫ সালে মোহাম্মদ আলি এর সাথে জো ফ্রেইসার এর Trilogy এর তিন নম্বর ম্যাচের পরেই সকল বক্সিং বিশ্লেষক এই ম্যাচটিকে বক্সিং ইতিহাসের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। সপ্তাহখানেক আগে ম্যাচটির টিকেট বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু এক মিনিট যেতে না যেতেই ম্যাচের সব টিকেট বিক্রি হয়ে যায়।
প্রায় দশ কোটি মানুষ নাকি অনেক আগেই দাবি জানিয়েছিলেন দুই বক্সারের রিংয়ে মুখোমুখি হওয়ার। ছ’বছর ধরে চেষ্টা করেও সেটা এত দিন করা যায়নি দু’পক্ষের কিছু বিষয়ে মতান্তর থাকায়। শেষ পর্যন্ত কিছু দিন আগে এনবিএ ম্যাচে দেখা হয়ে গিয়েছিল দুই বক্সারের৷ তখনই দুই তারকা একে অন্যের মোবাইল নম্বর আদান প্রদান করেন৷ নিশ্চিত করেন যে রিংয়ে মুখোমুখি হচ্ছেন এই দুই কিংবদন্তী।
তার পর কখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্যাকিয়াও জিম আর প্র্যাকটিসের কথা জানাচ্ছেন তো কখনও মেওয়েদার লড়াইয়ের প্রস্তুতিতে কুড়ুল দিয়ে কাঠ কাঠার ছবি পোস্ট করছেন। আটত্রিশের মেওয়েদার আর ছত্রিশের প্যাকাওয়ের লড়াইটা অবশ্য অনেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল— বাগযুদ্ধে।
আজকে যে জিততে যাচ্ছেন এ ঘোষণা কয়েকদিন আগেই দিয়ে রেখেছিলেন মেওয়েদার। বলেছেন, ম্যানি যদি আমাদের টিমের হয়ে বক্সিং করত, অনেক বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারত। আর আমার কাছে শনিবারের লড়াইটা স্রেফ একটা কাজের দিনের মতো। যেটা আমি সবচেয়ে ভাল পারি, বক্সিং, সেটাই করব। ২০০ মিলিয়ন ডলার জিতব। মানে আমার প্রত্যেক বাচ্চার জন্য ৫০ মিলিয়ন ডলার করে।
আগেই ঘোষণা করা হয়েছিলো আজকের ম্যাচে যিনি জয়ী হবেন তাকে অনানুষ্ঠানিকভাবে এই যুগের নাম্বার ওয়ান বক্সার হিসেবে মর্যাদা দেয়া হবে। আর তাই ফ্লয়েড মেওয়েদার এখন বিশ্বের নাম্বার ওয়ার বক্সার।