শীত এলেই আমাদের দেশে ব্যাডমিন্টন খেলার জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। যদিও অনেক আগে থেকেই এদেশে ব্যাডমিন্টন বহুল প্রচলিত খেলা হিসেবে সমধিক পরিচিত। শীতের তীব্রতার মাঝে হালকা গরমের আবেশ নিতে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে প্রায় সব বয়সী মানুষই এ খেলায় অংশ নেয়। বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় মেয়েরাও ব্যাডমিন্টন খেলায় অংশগ্রহণ করছে। সবাই এই খেলার সাথে পরিচিত হলেও এর মূল নিয়মকানুন অনেকেরেই অজানা। খেলার নিয়মকানুন না জানলে, খেলায় তেমন একটা মজা পাওয়া যায় না। তাই চলুন ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়মকানুন জেনে নিই। তবে নিয়মকানুন জানার আগে এর পরিচয়ও জানা দরকার।
পরিচয়
বলা হয়ে থাকে ব্যাডমিন্টন একটি র্যাকেট ক্রীড়া। ক্রীড়া বলতে কী বুঝায়? এই বিষয়টি বোঝার জন্য ব্যাডমিন্টন শব্দটির সাথে পরিচিত হওয়ার আগে র্যাকেট শব্দটির পরিচিতি ও তাৎপর্য বুঝে নেওয়া দরকার। আমেরিকানদের ডিকশনারি অনুযায়ী র্যাকেট হচ্ছে একটি বিশেষ ধরনের ক্রীড়া, যা হস্তচালিত তাল আকৃতি ফ্রেম বা র্যাকেটের সাহায্যে নির্দিষ্ট আয়তনের আয়তক্ষেত্রের মধ্যে খেলা হয়। প্রাচীন ব্রিটিশরা একই ধরনের এ খেলাকে জধপয়ঁবঃ শব্দটি দ্বারা প্রকাশ করত। ব্রিটিশদের ডিকশনারি অনুযায়ী র্যাকেট হচ্ছে বিশেষ ধরনের ব্যবসা যার মাধ্যমে কতিপয় লোক অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে। এখানে আমেরিকান ও ব্রিটিশদের ভাষায় একই শব্দের মধ্যে অর্থের তারতম্য থাকলেও আধুনিক ব্রিটিশরা কিন্তু জনপ্রিয় খেলাটিকে প্রকাশের জন্য র্যাকেট শব্দটিকেই বেছে নিয়েছে। র্যাকেট একটি বিশেষ ধরনের ক্রীড়া পদ্ধতি, যাতে হস্তচালিত তাল বা ডিম্বাকৃতি ফ্রেম দ্বারা খেলা হয়। এই ধরনের সকল খেলা র্যাকেট ক্রীড়ার অন্তর্ভুক্ত। যেমন : ব্যাডমিন্টন, টেনিস, স্কোয়াস ইত্যাদি। ব্যাপারটি অ্যাথলেটিকসের সাথে তুলনা করা যায়, অ্যাথলেটিকস বলতে অনেক খেলার সমন্বয় বুঝায়। যেমন : দৌড়, বর্শা নিক্ষেপ, গোলক নিক্ষেপ, সাঁতার ইত্যাদি আরো কত কী। এই সকল খেলা সম্মিলিতভাবে অ্যাথলেটিকসের অন্তর্ভুক্ত। তদ্রƒপ ব্যাডমিন্টন, টেনিস, স্কোয়াস এ ধরনের সকল খেলা র্যাকেট ক্রীড়ার অন্তর্ভুক্ত। ব্যাডমিন্টন একটি বিশেষ ধরনের র্যাকেট ক্রীড়া, যা নির্দিষ্ট আয়তনের আয়তক্ষেত্রের মধ্যে ২টি দল হস্তচালিত র্যাকেট দ্বারা খেলে থাকে। এই খেলাতে গোলাকৃতি বলের পরিবর্তে পালক বা প্লাস্টিক নির্মিত হালকা সাটল কর্ক ব্যবহার করা হয়।
ব্যাডমিন্টনের কোর্ট
ব্যাডমিন্টনের কোর্ট সমতল আয়তাকৃতির হয়ে থাকে। একক ও দ্বৈত উভয় ক্ষেত্রে যার দৈর্ঘ্য ১৩ দশমিক ৪ মিটার (৪৪ ফুট)। প্রস্থের মাপ বাড়ে দ্বৈতের ক্ষেত্রে। দ্বৈতের জন্য কোর্টের প্রস্থ ৬ দশমিক ১ মিটার (২০ ফুট), এককে ৫ দশমিক ১৮ মিটার (১৭ ফুট)। নেটের উচ্চতা ১ দশমিক ৫৫ মিটার (৫ ফুট ১ ইঞ্চি)।
র্যাকেট/ব্যাট
বেডমিন্টন ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন কর্তৃক নির্ধারিত কিছু মাপ রয়েছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এই মাপ অনুযায়ী বিভিন্ন র্যাকেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে র্যাকেট উৎপাদন করে থাকে।
একটি র্যাকেটের দৈর্ঘ্য সর্বাধিক ৬৮ সে.মি. চেয়ে বেশি হবে না এবং প্রস্থ ২৩ সে.মি. চেয়ে বেশি হবে না। জাল বোনা মাথার দৈর্ঘ্য সর্বাধিক ২৮ সে.মি. চেয়ে বেশি হবে না এবং জাল বোনা মাথার প্রস্থ সর্বাধিক ২২ সে.মি. চেয়ে বেশি হবে না। তবে বাস্তব ক্ষেত্রে আধুনিক র্যাকেটসমূহের মাপ সর্বোচ্চ মাপের তুলনায় কিছুটা ছোট হয়।
শাটল (কর্ক)
শাটলটির ওজন ৪ দশমিক ৭৪ গ্রামের কম অথবা ৫ দশমিক ৫০ গ্রামের বেশি হবে না। এর মধ্যে ১৪ থেকে ১৬টি পালক থাকবে।
খেলোয়াড়
একক ম্যাচে উভয়পক্ষে ১ জন করে সর্বমোট ২ জন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করে। দ্বৈত খেলায় উভয়পক্ষে ২ জন করে সর্বমোট ৪ জন খেলোয়াড় ব্যাডমিন্টন খেলায় অংশগ্রহণ করে।
খেলার নিয়ম ও পয়েন্ট
একক ও দ্বৈত উভয় খেলায় সাধারণত ১৫ থেকে ২১ পয়েন্টে গেম হয়। উভয় খেলোয়াড় বা দল ২০-২০ পয়েন্ট অর্জন করলে সেক্ষেত্রে ২ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে থেকে জয়লাভ করতে হবে, অর্থাৎ ২২-২০, ২৫-২৩ ইত্যাদি।
উভয় দলের পয়েন্ট সমান হওয়াকে ডিউস বলে। মনে রাখতে হবে, এভাবে সর্বোচ্চ ৩০ পয়েন্টের মধ্যে অবশ্যই গেম শেষ করতে হবে। ৩টি গেমের মধ্যে যে বা যে দল ২ খেলায় জিতবে, তারাই বিজয়ী হবে।
একক খেলার সময় সার্ভিসকারীর পয়েন্ট শূন্য বা জোড় সংখ্যা হলে খেলোয়াড় তাদের ডান দিকের কোর্ট থেকে সার্ভিস করবে এবং বেজোড় সংখ্যা হলে বাম দিকের কোর্ট থেকে সার্ভিস করবে। প্রতি পয়েন্টের পর খেলোয়াড়রা তাদের সার্ভিস বা রিসিভ কোর্ট বদল করবে।
দ্বৈত খেলার সময় প্রথম সার্ভিসের জন্য ডানদিকের খেলোয়াড় কোনাকুনি বিপক্ষের কোর্টে সার্ভিস করবে। যাকে সার্ভিস করা হবে কেবল সেই খেলোয়াড় সার্ভিস গ্রহণ করবে। কোনো খেলোয়াড় পরপর ২ বার সার্ভিস করতে পারবে না।
প্রথম গেমে বিজয়ী খেলোয়াড় দ্বিতীয় গেমে সার্ভিস শুরু করবে। সার্ভিসের সময় সার্ভারের দুই পা মাটি স্পর্শ করে থাকবে। সার্ভিস করার সময় শাটল নেটে লেগেও যদি ঠিক কোর্টে পড়ে, তবে সার্ভিস ঠিক হয়েছে বলে ধরা হবে।
শাটল দাগ স্পর্শ করলেই শুদ্ধ হয়েছে বলে ধরা হবে। নেট অতিক্রম করে কেউ শাটলে আঘাত করতে পারবে না এবং খেলা চলাকালে কেউ র্যাকেট বা শরীরের কোনো অংশ দিয়ে নেট ও পোস্ট স্পর্শ করতে পারবে না।