মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা বিষণ্ণতা নিয়ে প্রতিনিয়ত জীবনের পথে হেঁটে চলা মানুষদের কিছু সাধারণ আচরণ। যার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি বুঝতে পারবেন আপনার পাশের মানুষটি প্রচন্ড রকম বিষন্নতায় ভুগছেন কিনা।
*অস্বাভাবিক রকমের হাসিখুশি- খুব হাসি খুশি মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে কখনোই ভেবে নেবেন না যে মানুষটির জীবনের পুরোটায় সুখে পরিপূর্ণ। অস্বাভাবিক হাসিখুশি মানুষগুলোর ভেতরেই আসলে লুকিয়ে থাকে প্রচন্ড বিষন্নতা। আর সেটাকে ঢাকতে আর অন্যদের কাছ থেকে আলাদা করতেই এতটা ভালো থাকার ভান করে চলেন তিনি। আর তাই খুব হাসিখুশি মানুষকে একলা ছেড়ে না দিয়ে তাকে সঙ্গ দিন। কথা বলুন। হয়তো কথায় কথায় নিজের ভয়ঙ্কর অনুভূতিকে প্রকাশ করে একটু হলেও হালকাবোধ করবেন তিনি।
*লুকিয়ে থাকার প্রবণতা- খুব বেশি বিষন্নতায় ভুগতে থাকা মানুষেরা নিজেদেরকে অনেক সময় অন্যদের কাছ থেকে গুটিয়ে নেন। কারণ তারা ভয় পান যে অন্যেরা তার এই ব্যাপারটি জেনে যাবে আর সেটা তারা কখনোই চান না। খুব বেশি হাসিখুশি থাকার মতন অতিরিক্ত চুপচাপ আর সবাইকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাসম্পন্ন মানুষগুলোকেও সঙ্গ দিন। তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে হলেও হাসিমুখে কথা বলুন তার সাথে। এই অনুভূতিটা দিন যে আপনি তার সব কষ্টের সময়ে তার পাশে আছেন।
*কথা সম্পূর্ণ না করা - অনেকের ভেতরে বিষন্নতা জিনিসটা এতদিন ধরে বসবাস করে যে তিনি সেটাতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েন আর অসহ্য রকমের পরিস্থিতি হলে, প্রচন্ড খারাপ লাগলে সামনে যাকে পান তাকেই নিজের কষ্টের খানিকটা অংশ দিতে চান। কমাতে চান নিজের যন্ত্রণাটাকে। তবে সেটা অর্ধেকই। পুরোটা নয়। অর্ধেক বলবার পরেই বাকিটা বলবার ইচ্ছে বা সাহস হারিয়ে ফেলেন তিনি। কিন্তু না। এক্ষেত্রে আপনি তাকে থামতে না দিয়ে বলতে উত্সাহ দিন। জানতে চান। তাকে বোঝান যে আপনি তার কথা পুরোটা শুনছেন আর মনযোগ দিয়েই শুনছেন।
*অস্বাভাবিক রকমের খাদ্যাভ্যাস- বিশেষজ্ঞদের মতে খাদ্যাভ্যাসের সাথে বিষন্নতার অনেক মিল রয়েছে। এই দুটো সমস্যা মানুষের জীবনে একই সাথে অথবা পরপর ঘটে থাকে। ফলে সঙ্গীর খাদ্যাভ্যাসের যদি পরিবর্তন হয় তাহলে তার সাথে কথা বলুন। কারণ জানতে চান। হতে পারে কারণটা আপনি যেটা ভাবছেন সেটা নয়। অন্যকিছু। তারপরেও জানবার চেষ্টা করুন।
*পছন্দের জিনিসকে এড়িয়ে চলা- বিষন্নতায়য় ভুগতে থাকা মানুষের আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে এতদিন ধরে যে জিনিসটা করতে সবচাইতে বেশি ভালোবাসতেন সেটাকে এড়িয়ে চলা অথবা আমি পরোয়া করিনা ধরনের একটা ভাব দেখানো। সত্যিই কি তিনি সেটার পরোয়া করেন না? করেন। কিন্তু বিষন্নতা মানসিক অনেক আবেগের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। ফলে বিষন্ন ব্যাক্তিদের সাথে এমনটা হয়।
*রাগ দেখানো- মন খারাপ লাগলে, বিষন্ন লাগলে আমরা কী করি? কান্না, অদ্ভূত সব চিন্তা, অসহায় ভাব দেখানো- আরো কত কি! কিন্তু এসবের বিপরীত একটা ব্যাপারও কিন্তু বিষন্নতার প্রকাশ করে। মানুষ যখন বিষন্ন থাকে এবং সেটাকে প্রকাশ করতে পারেনা করো কাছে তখন সেটাকে ঢেকে দেওয়ার বা প্রকাশ করবার আরেকটি উপায় তারা অবলম্বন করে। আর সেটা হলো রাগ। আপনার পাশের মানুষটি অকারণেই রেগে যাচ্ছে, ইগো দেখাচ্ছে, জেদ দেখাচ্ছে? এড়িয়ে না গিয়ে বা ভুল না বুঝে তাকে বোঝার চেষ্টা করুন কেন সে এটা করছে।
*কম ঘুমানো- বিষন্নতায় ভোগা মানুষের ঘুমের পরিমাণ কমে যায়। হয়তো নিজের অসহায়ত্ব থেকে। কিংবা প্রচন্ড বিষন্নতা থেকে তৈরি হওয়া নানারকম চিন্তা থেকে। কিন্তু আর যাই হোক, আপনার সঙ্গী যদি এটা বলেন যে তার ঘুম হচ্ছেনা বা কম হচ্ছে তাহলে পাশ না কাটিয়ে জানবার চেষ্টা করুন কেন এটা হচ্ছে। তার সাথে কথা বলুন।